Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় দেখতে চাইলেও বহু প্রার্থীর পরাজয় চায় সিলেটে আ‘লীগের বেহিসাব নেতাকর্মীরা (!)

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৬:৪৫ পিএম

আবারও শেখ হাসিনার সরকার দেখতে চায় সিলেট আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। কিন্তু সংসদে পুনরায় দেখতে চায় না দল মনোনীত বেশিরভাগ এমপি প্রার্থীকে। এই সব প্রার্থীদের বিরুদ্ধে পাহাড়সম অভিযোগ দলীয় হাইকমান্ডে উখাপন করে মনোনয়ন বিরোধীতায় সক্রিয় ছিলেন বঞ্চনার শিকার বেহিসাব নেতাকর্মীরা। নিজস্ব সুবিধাভোগী বলয় নিয়ন্ত্রণ, ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবজ্ঞা, বিএনপি-জামায়াত শিবির নেতাকর্মীদের লালন-তোষণ, আধিপত্যবাদী মানসিকতা, অহংকারী আচরণ, স্থানীয় উন্নয়ন বিমুখতা-বৈষম্য, প্রকল্পের নামে লুটপাঠ, স্থানীয় নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীদের অসহযোগিতা সহ নানা ধরনের অনিয়ম দূর্নীতির বিস্তর অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে নিয়ে এমপিদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন, বক্তব্য, বিবৃতি, মিছিল মিটিং ও মানব বন্ধন করেছে খোদ দলের নেতাকর্মীরা। এতে করে এমপিরা নিজ নিজ এলাকার নেতা-কর্মীদের সাথে দা-কুমড়া সর্ম্পক গড়ে উঠে। একাধিক আসনে এমপিরা সুবিধাভোগী অরাজনৈতিক বা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বা স্থানীয় সম্পদ উৎস গুলোতে প্রভাব বিস্তারে সুযোগ দেননি বিগত জোট সরকারের আমলের কারা নির্যাতিত দলীয় নেতাকর্মীদের। এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহযোগিতা বা আনুকূল্যের বদলে বঞ্চনা-তিরস্কার জুটেছে তাদের কপালে। এছাড়া আপদে-বিপদে, সুযোগ, সেবা বা অধিকার আদায় করতে যেয়ে স্থানীয় প্রশাসনিক স্তরে এমপিদের বিরোধীতার মুখে পড়েছেন তারা। এমনকি সরকার দল আর এমপির দল নামে দু‘টি বলয়ের ক্ষমতা কেন্দ্রিক সাংঘর্ষিক অবস্থান সৃষ্টি হয় সিলেটর প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায়। এতে করে দলীয় মাঠ পর্যায়ের পরিশ্রমি নেতাকর্মীদের সাথে দুরত্ব গড়ে উঠে এমপিদের। সরকার দলের লোক হয়েও স্থানীয় ভাবে বিরোধী দলের লোকদের মতো সর্তকভাবে চলতে হয়েছে নেতাকর্মীদের। স্থানীয় ইউনিয়ন, পৌরসভা, মেয়র পদের নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়েছেন দলীয় প্রতীক নিয়ে দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা। সাধারন মানুষ ধারনা করেছিল, সরকারে প্রভাব ও স্থানীয় এমপিদের সহযোগিতায় নির্বাচনে বিজয়ে মুকুট পড়বেন তারা। বাস্তবে দেখা গেছে, এমপিরা কথিত নিরপেক্ষতার নামে দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ভরাডুবিতে ভূমিকা রেখেছেন। তাদের এ অবস্থানে বিরোধী দল সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে, তৃণমুলে আ‘লীগের চরম দূবর্লতা দৃশ্যমাঠ হয়ে উঠে। এরপর এমপিদের বির্তকিত এহেন ভূমিকা নিয়ে সরব হয়ে উঠেন দলের নেতাকর্মীরা। তারই ধারাবাহিকতায় এমপি বিরোধী বলয় সৃষ্টি হয় স্থানীয় আসনগুলোতে। তারা দলের মধ্যে বিকল্প প্রার্থী নিয়ে মনোনয়ন টার্গেট করে তোড়জোড় চালায়। মাঠ চষে বেড়ায় নতুন মুখের প্রার্থীদের নিয়ে মনোনয়নের প্রত্যাশায়। দলের কেন্দ্রিয় কর্মসূচীতে তারা শো-ডাউন করে নিজেদের শক্তি-মত্তা দেখায়। কেন্দ্রিয় নেতারা সিলেটে আগমন করলে, সুযোগে তুলে ধরতেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে স্থানীয় এমপিদের নানামুখি অপকর্ম সহ দল বিরোধী কর্মকান্ড। নেতারা গুরুত্ব সহকারে কান ভরে অভিযোগ শুনলেও এমপিদের সাথে দুরত্ব গোছাতে কোন পদক্ষেপ নেননি। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে নতুন মুখের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঠে সক্রিয় থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে মাঠে থেকে নেতাকর্র্মীদের দলের কাজে সক্রিয় রেখেছেন নতুন মুখের মনোনয়ন প্রত্যাশিরা। হাত খুলে দলের জন্য খরচ করেছেন টাকা-পয়সাও। বঞ্চিতদের পাশে ছায়া হয়ে, সরব রেখেছেন নেতাকর্মীদের। এর মধ্যে দিয়ে আ‘লীগে বিভক্তি বিভাজন সুস্পষ্ট হয়ে উঠে সর্ব-মহলে। এমপিদের বদলে নতুন মুখ দলীয় এমপি প্রার্থীর মনোনয়ন পাচ্ছেন সেই আওয়াজ দৃড় হয়ে উঠে। এমপি বলয়ের মধ্যে উদ্বেগ-আতংক ছড়িয়ে পড়ায়, নতুন মুখের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাথে গোপন যোগাযোগ গড়ে তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেন। শেষ পর্যন্ত চুড়ান্ত মনোনয়ন দৌড় শুরু হয় নির্বাচন ঘিরে। মনোনয়ন প্রত্যাশি নতুন মুখের সমর্থকরা আশাবাদি হয়ে উঠেন, আ‘লীগের নীতি নির্ধারকদের মনোনয়ন চুড়ান্তের গ্রহনযোগ্য শর্ত প্রকাশের দৃড়তায়। খোদ দলের সভানেত্রী একাধিক বার বলেছেন, জনপ্রিয় ব্যক্তিদের মনোনয়নে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। দলের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় বাস্তবে দেখেছেন, তাদের এমপিরা সাধারন মানুষের নিকট তো দুরের কথা দলের মধ্যেই বির্তকিত ও জনপ্রিয়তার কোন বিবেচনায় তারা উর্ত্তীণ হওয়া বলা বাহুল্য। এমপি প্রার্থী মনোনয়নের সেই নিক্তি আমলে না নিয়েই ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের চরম ভাবে আশাহত করে মনোনয়নয়ে চুড়ান্ত তালিকায় ঠাঁই করে নেন নানা অভিযোগে বির্তকিত বর্তমান এমপিরাই। এরমধ্যে দিয়ে দলের বিরোধী নেতাকর্মীদের নতুন করে আরেক দফা চ্যালেঞ্জে ছুঁড়ে দেন বর্তমান এমপিরা। অনেক স্থানে মনোনয়ন বাতিলের দাবীতে বিক্ষোভ ফেঁটে পড়ে এমপি বিরোধী নেতাকর্মীরা। কিন্তু তাদের বিক্ষোভ বা বিরোধীতার কোন মূল্যায়ন করেনি দলের নীতি নির্ধারক মহলও। তাই বর্তমান মহাজোটের বেশিরভাগ এমপি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে র্নিলিপ্ত রয়েছেন বঞ্চনা, অবহেলার শিকার নেতাকর্মীরা। তারা সরকারে দলকে চাইলেও এসব এমপিদের পরাজয়ের জন্য মুখিয়ে রয়েছেন নিজ নিজ এলাকায়। কারন এই সব এমপিদের বিজয় মানেই নতুন করে আবারও নিজ নিজ এলাকায় পরাজয় ঘটবে তাদের ও দলের সাংগঠনিক ভিত্তির। নেতাকর্মীরা মনে করছেন, এই সব এমপিরা পুনরায় জয়ী হলে, দল ও নেতাকর্মীদের প্রতি কোন দরদ-ই দেখাবে না তারা। বরং দলের ত্যাগি নেতা-কর্মী সহ মনোনয়নে নতুন মুখের দাবীদার, সমর্থকদের উপর প্রতিহিংসা চরিচার্থ করবেন এমপিরা। সেকারনে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা, নিরাপত্তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ