পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নির্বিঘ্ন, বিশ্বাসযোগ্য ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রশ্নে আমেরিকা, ইউরোপসহ পশ্চিমা দুনিয়ার অবস্থান স্পষ্ট। এ নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাব পাস হওয়া ছাড়াও ঢাকায় থাকা সিনিয়র কূটনীতিকরা প্রায় প্রতিদিনই বিবৃতি দিচ্ছেন। বাংলাদেশের বন্ধু-উন্নয়ন সহযোগীরা সহিংসতা, প্রচার-প্রচারণায় বাধাবিঘ্ন এবং বল প্রয়োগের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি সর্বক্ষেত্রে আইনের সমান প্রয়োগ দেখতে চাইছেন। তারা মুক্ত প্রচারণা এবং ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের অধিকার প্রয়োগকে উৎসাহিত করছেন।
কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত আহ্বান সত্ত্বেও ভোটের মাঠে দুশ্চিন্তার ‘নানা ঘটনা’ ঘটছে। এ অবস্থায় কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের আশঙ্কা বিতর্কমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে বাংলাদেশের গার্মেন্ট তথা সার্বিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য চাপের মুখে পড়বে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর ড. আমেনা মহসিন মনে করেন নানা কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সুনাম কুড়িয়েছে। গণতন্ত্রের চর্চা তার অন্যতম। কিন্তু সেই ‘গণতন্ত্র’ই যদি ধূসর হয়ে যায় তাহলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ভাবমূর্তিসহ সর্বক্ষেত্রেই প্রভাব পড়তে পারে। তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্র চাই। বিশ্বে আমাদের সুনাম ধরে রাখতে চাই। সেভাবেই আমাদের সমস্ত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা হতে হবে। কূটনীতিকদের মতে, রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য আমেরিকা ও ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য নিয়ে নেতিবাচক ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছিল। কষ্টকর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এটি কাটিয়ে উঠেছে। আমেরিকায় বাংলাদেশের রপ্তানি কমে গিয়েছিল। সর্বশেষ গত বছর ৫০৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা ২০১৬ সালের চেয়ে ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম। কিন্তু এ বছরই বাংলাদেশ দেশটিতে রপ্তানিতে ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বছরের প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্য দপ্তরের সহায়তায় পরিচালিত একটি ওয়েবসাইটে ‘‘বাংলাদেশ-মার্কেট ওভার ভিউ’’ শিরোনামে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সর্বশেষ রিপোর্ট তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়- বাণিজ্য তথা পণ্য কেনার ক্ষেত্রে একটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নেয়া যদি সঙ্গত হয় তা হলে অবশ্যই মার্কিন কোম্পানীগুলো তা বিবেচনায় নেয়। দেশীয় কূটনীতিকরা এটা মানছেন রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হলে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এটি সামলে উঠতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য করার আহ্বান জানিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে সর্বসম্মতভাবে যে প্রস্তাব পাস হয়েছে তার উদ্ধৃতি দিয়ে ঢাকার একজন কূটনীতিক বলেন, এটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে সেখানে যা বলা হয়েছে এটি মার্কিন নাগরিকদের কথা। গোটা যুক্তরাষ্ট্রের কথা। প্রস্তাবে যা বলা হয়েছে ঢাকার মার্কিন কূটনীতিকরা তা-ই বলছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার যে অবস্থানই গ্রহণ করুক না কেন কূটনীতিতে তার একটি প্রভাব থাকেই। এটা মানা না মানার মধ্যে সম্পর্ক এবং নেগোশিয়েশনে অনেক তারতম্য হয়। ওই কূটনীতিকের মতে, যেকোনো প্রস্তাব পাস হওয়ার পেছনে একটি ধারাবাহিকতা থাকে। যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক বছর ধরে যা বলেছে, সেটিই রেজুলেশনে স্থান পেয়েছে।
তাছাড়া রেজুরেশনটি পার্লামেন্টে উত্থাপনের পর রীতি অনুযায়ী কংগ্রেসের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি তা স্ক্রুটিনি বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। মার্কিন কংগ্রেসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রচারিত তথ্য মতে, প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উৎসাহিত করতে প্রতিনিধি সভার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান জানাতে এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের অনুরোধকে গুরুত্ব দিতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক এবং সব বাংলাদেশির স্বাধীনভাবে ভোটে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবং ভোটারদের ইচ্ছাকে সম্মান জানাতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিচারিক কর্তৃপক্ষগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
সেখানে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি পূরণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়টিও প্রস্তাব পাসের সময় আলোচনায় এসেছে। এ নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যরা বলছেন, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মানবাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রসঙ্গে কংগ্রেসের আলোচনায় বলা হয়েছে, এ বিষয়ে দুই দেশের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ প্রতিহত করতে এবং মানবাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অসাম্প্রদায়িকতা সুরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আরো সক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়া উচিত বলে মনে করছেন কংগ্রেস সদস্যরা।
কংগ্রেসে রেজুলেশন পাস হওয়া ছাড়াও স্টেট ডিপার্টমেন্টের তরফে নিয়মিতভাবে নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্খার প্রতিফলন দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হচ্ছে। এ নিয়ে ঢাকায় এবং ওয়াশিংটনে কথা বলেছেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন মুখ্য উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস। তিনি নির্বাচনী প্রচারণার দলমত নির্বিশেষে সবাইকে শান্তিপূর্ণ ও দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রচারণার শুরুতেই সংঘটিত সহিংসতায় উদ্বেগ জানিয়ে মার্কিনিরা প্রায়শই বলছেন, সহিংসতায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। এতে তারাই লাভবান হয় যারা গণতন্ত্র চায় না, যারা গণতন্ত্রকে ক্ষুণœ করতে উদ্যত হয়ে আছে। মার্কিন কূটনীতিকরা দ্ব্যার্থহীনভাবে বলছেন, তারা বাংলাদেশে নির্দিষ্ট কোনো প্রার্থী, দল বা জোটের পক্ষে নন।
মার্কিন প্রশাসন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও জনগণের মূল্যবোধে বিশ্বাসী। তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলকে সহযোগিতা দিচ্ছেন। নির্বাচন নিয়ে কাজ করা মার্কিন সংগঠন এনডিআইকে পর্যবেক্ষণে তহবিল সহায়তা দিচ্ছেন। এনডিআই বাংলাদেশের ভোটের অবস্থা নিয়ে দুটি প্রাক-মূল্যায়ন রিপোর্ট করেছে। তারা প্রতিনিধি মারফত ভোটের দিনেও নিবিড়ভাবে কেন্দ্রগুলোর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে এনডিআই’র সহযোগী ‘দ্য এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস’ও ভোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এ ছাড়া ভোটের দিনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ডের অর্থায়ন এবং প্রশিক্ষণে স্থানীয়ভাবে ১৫ হাজার পর্যবেক্ষক মোতায়েন থাকবেন।
ইউরোপের কূটনীতিকদের বিবৃতি, বিশ্বাসযোগ্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিতের তাগিদ : এদিকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর দিনে দেয়া বিবৃতিতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য বাংলাদেশ সরকার, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানান ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) কয়েকটি দেশ এবং নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের মিশন প্রধানেরা। যুক্ত বিবৃতিতে তারা নাগরিকদের ভোটাধিকার, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় বাংলাদেশ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানান।
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোরভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে এবং সহিংসতা রোধে রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্ব পালনের আহ্বানও জানান। কূটনীতিকদের যুক্ত বিবৃতিতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সমালোচনামূলক রিপোর্টকে উৎসাহিত করা হয়। বলা হয়, নাগরিকদের জন্য জাতীয় উন্নয়নের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কার্যকর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ইউরোপীয় কূটনীতিকদের এমন অবস্থানের ব্যাখ্যায় ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি, নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে ইইউ তহবিল দিয়ে থাকে। সঙ্গত কারণেই ভোটে তাদের চোখ থাকে। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সুসংহতকরণে তাদের আহ্বান তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে ওই কূটনীতিক বলেন, ইইউ পার্লামেন্টে বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে অনেকবার আলোচনা হয়েছে। তাদের রেজুলেশনও রয়েছে। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা সার্বিক সম্পর্কে এর প্রভাব থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।