Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গভর্নর হাউজে ভারতীয় জঙ্গি বিমানের হামলা

হোসেন মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

আজ ১৪ ডিসেম্বর। এ দিনটি দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষ্য বহন করছে। প্রথমত এ দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গভীর শোকাবহ ও বেদনামথিত দিন। বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার অদম্য স্পৃহাকে থামিয়ে দিতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাশবিক উল্লাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মেতে উঠেছিল রক্তের নেশায়। তারই প্রেক্ষিতে শুরু হয়েছিল সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধ।
নয় মাসের দখলদারির অন্তিমলগ্নে যুদ্ধে পরাজয় অবশ্যম্ভাবী জেনে তারা মরণকামড় হিসেবে টার্গেট করে এ দেশের বুদ্ধিজীবীদের। বাঙালী জাতিকে মনীষা ও মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য চক্রান্তে প্রণীত হয় বুদ্ধিজীবী নিধনের নীলনকশা। সে অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানী সৈন্যদের দোসর আল বদর ও আল শামস বাহিনী নামে বুদ্ধিজীবী নিধন অভিযানে। সংঘটিত হয় ঘৃণ্যতম বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড।
এদিন তারা হত্যা করে সাহিত্যিক-সাংবাদিক-শিক্ষক-চিকিৎসকদের। স্বাধীনতার স্বপ্ন আজীবন বুকে লালন করে এলেও স্বাধীনতা লাভের প্রায় পূর্ব মুহুর্তে পশুদের হাতে নিভে যায় তাদের জীবন প্রদীপ। স্বাধীন বাংলাদেশ তারা দেখে যেতে পারলেন না।
দ্বিতীয়ত এদিন ছিল পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক সরকারের শেষ দিন। এদিন সকালে গভর্নর হাউসে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। এ খবর পেয়ে যায় ভারতীয়রা। সকাল সোয়া ১১টার সময় ৩টি মিগ জঙ্গি বিমান সেখানে হামলা চালায়। এতে প্রধান হলরুমের বিশাল ছাদটি উড়ে যায়।
গভর্নর মালিক দৌঁড়ে এয়ার রেইড শেল্টারে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানেই তিনি কাঁপা কাঁপা হাতে তার পদত্যাগপত্র লেখেন। তারপর তিনি ও তার পদস্থ কর্মর্তারা রেডক্রসের ঘোষিত নিরপেক্ষ এলাকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গিয়ে আশ্রয় নেন।
এদিন দুপুরের পর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছ থেকে নিয়াজির বার্তার জবাব আসে যাতে যুদ্ধবিরতির জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। সব আশা শেষ হয়ে আসায় আসন্ন পরাজয়ের সম্মুখীন লে. জেনারেল নিয়াজিসহ শীর্ষ কমান্ডাররা এদিন সন্ধ্যায় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারেলের হাতে তাদের উভয়ের সই করা একটি চিঠি তুলে দেন। বলেন, এটাই হলো ভারতের সাথে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব।
অর্থাৎ আত্মসমর্পণ শব্দটিকে তখনো গ্রহণ করতে রাজী ছিলেন না নিয়াজি, যদিও পরদিনই তিনি সে অবস্থান থেকে বাধ্য হয়ে সরে আসেন। ওদিকে ভারতীয় সেনাপ্রধান মানেকশ’র পক্ষ থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের আহ্বান বারবার প্রচারিত হচ্ছিল। এ অবস্থায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মনোবল ধরে রাখা কোনক্রমেই আর সম্ভব ছিল না। আশু ও অনিবার্য হয়ে উঠেছিল তাদের পতন।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত করার অভিযানে নিহত হন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (অন্যতম বীরশ্রেষ্ঠ)। এদিনে সিরাজগঞ্জ, বান্দরবান, সাভার, কালিয়াকৈর, কেশবপুর, মোড়েলগঞ্জ, শাহজাদপুর, শেরপুর ও শিবগঞ্জ, (বগুড়া), উল্লাপাড়া, তাড়াইল, আক্কেলপুর, পাঁচবিবি, নবীনগর, গজারিয়া, মির্জাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কাউখালি, চিলমারী, দোহাজারী, সান্তাহার রেল জংশন প্রভৃতি স্থান হানাদারমুক্ত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুক্তিযোদ্ধা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ