পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাত্তুরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দেশের লাখ লাখ তরুণ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও সে সময়ের তরুণ জাফর ইকবাল (অধ্যাপক মুহম্মদ ড. জাফর ইকবাল) অংশগ্রহণ করেননি। তিনি ও তার ভাই গর্তে লুকিয়েছিলেন। অথচ সেই জাফর ইকবালকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে অভিহিত করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। তোলপাড় চলছে ফেইসবুক, ব্লগ, টুইটারে। এর বেশির ভাগের বক্তব্য জাফর ইকবাল সুবিধাবাদী চরিত্র। তিনি মুক্তিযুদ্ধে যাননি; অথচ তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত করে তুলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাতের অপমান করা হয়েছে।
জানা যায়, রাজধানী ঢাকার নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির একটি প্রশ্নপত্রে ‘মুক্তিযোদ্ধা ড. জাফর ইকবাল’ ব্যবহার করা হয়। ওই প্রশ্নপত্রে বিশ্লেষণ করতে বলা ৮ নম্বর প্রশ্নটি ছিল ড. জাফর ইকবাল একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। যুদ্ধ চলাকালীন ‘জয় বাংলা’ সেøাগান অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করত। শত্রুপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে শক্তি জোগাতো। ড. জাফর ইকবালসহ বাঙালির ধারণা এই ‘জয় বাংলা’ শব্দটির মধ্যে এক ধরনের শক্তি লুকিয়ে আছে।
প্রশ্নপত্রটির কিছু অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে বিতর্ক শুরু হয়। ‘ড. জাফর ইকবাল নামে’ সেখানে উল্লেখ হয়েছে তা দেশের অতিপরিচিত লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের নামের মতোই। তবে প্রশ্নপত্রে ‘মুহম্মদ’ নেই।
গত ১৭ জুন ‘অভিভাবক ফোরাম ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ নামক একটি ফেইসবুক গ্রুপে’ এই প্রশ্নপত্রের কিছু অংশ পোস্ট করা হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘একজন অভিভাবক হিসেবে আমরা লজ্জিত। কিন্তু এই স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের লজ্জা আছে কি? ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষায় ইতিহাস বিকৃতি করার অভিযোগ।’
এরপর শুরু হয় তোলপাড়। উঠে সমালোচনার ঝড়। নানা ধরনের কমেন্ট আসতে থাকে সেখানে। মাহমুদুল হাসান আল মারজান নামের একজন লিখেছেন, ‘উদ্দীপকে উল্লিখিত নামটি ব্যবহার করতে পারেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে জনাব ড. জাফর ইকবাল সাহেবকে মুক্তিযোদ্বা হিসেবে উপস্থাপন করা মূল্যবোধ ও নৈতিকতার চরম অবক্ষয় রীতিমতো প্রতিভাত হয়। দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আধিকারিক যদি এহেন গর্হিত কাজ করেন তাহলে শিক্ষার্থীরা কিরূপে শিখবেন।’
জাহিদুল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, ‘এটা একটা উদ্দীপক, সম্পূর্ণই কাল্পনিক। এখানে নামের জায়গায় যদু, মধু, রাম, রহিম যে কেউ হতে পারে। মোট কথা হচ্ছে, উদ্দীপকের ঘটনার সাথে গল্প ও কবিতার ঘটনার মিল, অমিল তুলে ধরতে হবে।’ এর জবাবে আরিফ আসমির রাজিভ নামের একজন লিখেছেন, ‘যারা উদ্দীপক কল্পনা করেছেন তাদের কল্পনা মনে হয় এর বাইরে যেতে পারে না। এরকম যদি কল্পনার অবস্থা হয় তাহলে তো শিক্ষার বারোটা বাজবে।’ শাহদাত হুসাইন নামের একজন লিখেছেন, ‘ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষকে বলতে হবে জাফর ইকবাল যুদ্ধ করেছিল কত নাম্বার সেক্টরে, তাকে কেন মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দেওয়া হয় নেই, ইতিহাস বিকৃতির একটা সীমা আছে।’
মুনমুন নামে একজন লিখেছেন, ‘ড. জাফর ইকবাল কী ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল? উদ্দীপকের কোথাও কি লেখা আছে তিনি শিক্ষাবিদ, লেখক বা সাহিত্যিক? বিজ্ঞান লেখক, ৯ম শ্রেণির পদার্থ বিজ্ঞান বইয়ের লেখক? নামটি ব্যবহারে কীভাবে ইতিহাস বিকৃত হয়েছে?’
প্রশ্নে উদ্দীপক হিসেবে আসা নামটির বিষয়ে জানতে সাংবাদিকরা কথা বলেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখানে ড. জাফর ইকবাল মুক্তিযোদ্ধা শব্দটি প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। জাফর ইকবাল নামে তো দেশে শুধু একজনই নয়, দেশে শত শত লোক আছে। এই নামটা প্রতীকী। প্রশ্নপত্রে তো মানুষ কাল্পনিক নাম দিয়েই করে।’
এই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই সমালোচনার কারণ যারা ভিকারুন নিসার সুবিধা পায় না তারা তাকিয়ে থাকে এই দিকে। না খেয়ে, চাকরি-বাকরি না করে তারা গেটের উল্টা দিকে বসে থাকে চা খায় আর বদনাম কোনদিক দিয়ে বের করবে, তার খোঁজখবর করে।
এদিকে গত ১৬ জুন শুরু হওয়া একাদশ শ্রেণির মানবিক শাখার অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রেও ছিল বানান আর ভাষাগত ভুলের সমাহার। প্রশ্নপত্রের প্রথম পাতাতেই বানান ভুল করা হয়েছে ২৩টি। এই ভুল নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তীব্র সমালোচনা। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক সমাজও। এই বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ কামরুন নাহার বলেন, ‘এই প্রশ্নপত্রে ভুলের বিষয়ে যারা প্রশ্ন তৈরি করেছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এটা সম্ভবত প্রেসের ভুল হতে পারে বা টাইপিং মিসটেকও হতে পারে।’
তবে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অবিহিত করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভুল বার্তা দেয়া নিয়ে বিতর্ক চলছেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।