পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেছেন, পেছনের একটা ঘটনার
রেষ টানা প্রয়োজন। সেটি হলো ২০১৪ সালের নির্বাচন। সেই নির্বাচনের অবস্থা
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। তখন ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। সেই ঘটনার
আলোকে আমাদের এবারের নির্বাচনের প্রস্তুতির রুপরেখা ও কৌশল অবলম্বন করা
প্রয়োজন।
তিনি বলেন, তখন মাঠে সব বাহিনী ছিল। সশস্ত্র বাহিনী ছিল, পুলিশ বাহিনী ছিল,
র্যাব ছিল, বিজিবি ছিল। তবুও আমরা কি দেখিছিলাম! পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছিল,
প্রিজাইডিং অফিসার নিহত হয়েছিল, ম্যাজিস্ট্রেট নিহত হয়েছে, শত শত মানুষ নিহত
হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভষ্মিভূত হয়েছে। সেটা কি প্রেক্ষিত ছিল, আমরা কেনো
নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি- সে প্রসঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ ও প্রয়োজন নেই।
ভবিষ্যতে এ বিষয়টি আমাদের মনে রাখতে হবে। এটি ভুলে গেলে চলবে না।
তিনি আরো বলেন, সেই অবস্থা থেকে আমাদের কিভাবে উত্তরণ করা যায়। সেরকম
কোনো পায়তারা যাতে না হয়। আবার যাতে সেরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়।
সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। আপনাদের (আইন শৃঙ্খলা বাহিনীল সদস্য) দায়িত্ব
জনগণের জীবন রক্ষা করা, মালামাল রক্ষা করা, সম্পদ রক্ষা ও দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি
স্বাভাবিক রাখা।
আমি আশা করবো আপনাদের যে নিরপেক্ষ ও পেশাদারিত্ব দায়িত্বপালনের অভিজ্ঞতা,
দক্ষতা ও মানসিতকা দিয়ে এবারের নির্বাচনে আমরা এসব মোকাবিলা করতে পারবো।
এ বছর যেনো আর সেরকম তাণ্ডল না ঘটে। সেরকম পরিস্থিতির সুযোগ সৃষ্টি না হয়।
এখন থেকে সেটা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে বলেও উল্লেখ করেন সিইসি।
কেএম নূরুল হুদা বলেন, আমরা কিন্তু আশঙ্কা গুলো একেবারেই অবহেলা করতে পারি
না। যেদিন প্রতীক বরাদ্দ হলো তার পরের দিনই দুর্ঘটনা। সে ঘটনাগুলো যত ছোটই
হোক না কেনো, দুটো জীবন চলে গেলো। সে দুটো জীবনের মূল্য অনেক। কিন্তু
কেনো হলো? তারপরে এখানে ওখানে ভাঙচুর, প্রতিহত করা। এগুলোর পেছনে কি
রাজনৈতিক, সামাজিক কারণ নাকি সেই ২০১৪ সালের মতো ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টির
পায়তারা চলছে কি না তা কিন্তু ভালোভাবে নজরে নিতে হবে। গোয়েন্দা
সংস্থাগুলোর সতর্ক নজরদারি থাকতে হবে।
তিনি বলেন, একটা ঘটনা ঘটে গেলো এক জনের দোষ আরেক জনের ঘাড়ে চাপিয়ে
দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে। আইন শৃঙ্খলার অবনতি হালকা
ভাবে নিলে হবে না। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সতর্ক অবস্থান নেওয়ার প্রয়োজন হবে।
এর মধ্যে তৃতীয় কোনো শক্তির ষড়যন্ত্র আছে কি না খতিয়ে দেখতে হবে। গোয়ান্দা
সংস্থাগুলোর প্রতি সতর্ক নজরদারি রাখার অনুরোধ করবো।
সিইসি আরো বলেন, নির্বাচন নিয়ে যখন শত:স্ফূর্ত জনজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। ঠিক
তখনই খুনের ঘটনা, হামলার ঘটনা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করার কোনো কারণ
নেই। এদেশের স্বাভাবিক রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হোক
তা না চাওয়ার দলের প্রভাবশালী মহল সক্রিয় থাকতেও পারে। তাদের বিষয়ে সকলের
বিশেষ করে নির্বাচন কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা,
রাজনৈতিক নেতৃত্ব সমাজের সচেতন মহর ও জনগণের সচেতন থাকা প্রয়োজন।
ইভিএম প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, এবার আমরা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করতে
চাই। জনগণের ভোট মস্তানদের হাতে ছেড়ে দেওয়া যায় না। বাক্স ছিনতাইকারীদের
হাত থেকে ভোটারদের মুক্তি দিতে হবে। তার প্রথম ও প্রধান যে পদ্ধতিতে ভোট
হচ্ছে। সে পদ্ধতির পরিবর্তে আরেকটি পদ্ধতি আনতে হবে। নির্বাচন কমিশন মনে করে
ইভিএম সেরকম একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ভোটারদের ভোটের নিশ্চয়তা প্রদান করা
সম্ভব হবে। আমরা ছয়টি এলাকায় ইভিএম ব্যবহার করতে যাচ্ছি। সে ছয়টি এলাকায়
যার যার দায়িত্ব তাদেরকে অনুরোধ করবো, সেগুলোর দিকে আলাদাভাবে দৃষ্টি
দেওয়া, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া এবং নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেবেন।
ইভিএম সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এদেশের শতকরা ৮০ভাগ অনিয়ম
দুরিভুত হবে বলে বিশ্বাস করি। সবগুলো নির্বাচন ইভিএমের আওতায় আনার একটি
অভিষ্ঠ লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগুচ্ছি। ইভিএম ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। কারণ
বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচনের অনিয়ম দূর করার এটাই একমাত্র এবং নির্ভরযোগ্য পন্থা
যোগ করেন তিনি।
নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্য করে সিইসি বলেন, দায়িত্ব পালনকালে পেশাদারিত্ব ও
নিরপেক্ষতার সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সব
বাহিনীর কৌশল ঠিক করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সব থেকে বেশি তথ্য-উপাত্ত
থাকে। তথ্য, উপাত্তগুলো প্রয়োগ করে অন্যান্য সব বাহিনীর আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের
ছক তৈরি করতে হবে। সব গোয়েন্দা সংস্থার সতর্ক নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। অবৈধ
অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে এবং এতে বিজিবিকে সম্পৃক্ত করার প্রয়োজন হবে। কারণ এতে
তাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
সিইসি বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নজরদারি রাখবেন। নারী
ভোটারদের নিরাপত্তার বিষয়টিও আলাদাভাবে খেয়াল রাখবেন। যাতে ভোট দিয়ে
নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন। প্রত্যেক এলাকার মস্তান ও গোলযোগ
সৃষ্টিকারীদের তালিকা তৈরি করতে হবে। যেটা আপনারা সবসময় করে থাকেন। সেটা
এখন থেকেই তৈরি করতে হবে। ভোটের ভাগ্য সন্ত্রাসীদের হাতে দেওয়া যাবে না।
সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজন হলে তাদেরকে আটক করতে হবে। তাদের
বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সিইসি আরো বলেন, গত ২০১৪ সালের সহিংস অবস্থার কথা মাথায় রেখে নিরাপত্তার
ছক তৈরি করতে হবে। বিনা কারণে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। কারো বিরুদ্ধে
হয়রানী মূলক মামলা করা যাবে না। সংঘবদ্ধভাবে প্রজাতন্ত্রের সকল বিভাগ নির্বাচনের
দায়িত্বে সম্পৃক্ত হয়েছেন। সংবিধান ও আরপিও’র বলে- এখন সকল দায়িত্ব আপনাদের
কাছে। নির্বাচনি পরিবেশ সুষ্ঠু স্বাভাবিক রাখার দায়িত্ব সামাজিক ও রাজনৈতিক
নেতৃবৃন্দ, দেশের নাগরিক তাদেরকেও সম্পৃক্ত থাকার জন্য অনুরোধ করবো। সকলকেই
সাথে নিয়েই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।
সিইসি বলেন, আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছি। এরই মধ্যে
প্রস্তুতির ৯৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু ব্যালট পেপার ছাপানো সংক্রান্ত কিছু
কাজ বাকি আছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।