Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চারদিকে চলছিল যুুদ্ধ ধ্বংস আর বিপর্যয়

হোসেন মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

আজ ১২ ডিসেম্বর। যুদ্ধ এবং শুধু যুদ্ধই চলছিল চারদিকে। ঘটছিল ধ্বংস আর বিপর্যয়। বিজয়ের আর কোন আশা ছিল না মনোবল হারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনী ঢাকাকে চারদিক থেকেই ঘিরে ফেলেছিল। দেশের বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়া পাকিস্তানি বাহিনীর বিচ্ছিন্ন ইউনিটগুলোর ঢাকায় ফেরার আর কোন উপায় ছিল না। এ অবস্থায় ঢাকাকে ঘিরে আত্মরক্ষার শেষ কৌশল গ্রহণ করতে চেয়েছিল পাক সেনাবাহিনী। লে. জেনারেল নিয়াজিসহ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে মার্কিন সপ্তম নৌবহরের বঙ্গোপসাগরে উপস্থিতির কথিত আশ্বাস কিছুটা আশার সঞ্চার করেছিল।
প্রকাশিত খবরে জানা যায় যে ৯ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্দেশে বঙ্গোপসাগর অভিমুখে রওনা দেয়া মার্কিন ৭ম নৌবহর এদিন বঙ্গোপসাগর থেকে মাত্র ২৪ ঘন্টার দূরত্বে গভীর সমুদ্রে এসে অবস্থান নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরে পৌঁছেনি।
জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে ১২ ডিসেম্বর রাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শর্তসম্বলিত একটি প্রস্তাব প্রেরণ করেন। এ প্রস্তাবে তিনি বলেন, পাকিস্তান তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে, বাংলাদেশ সরকারের সাথে যুক্তিসঙ্গত আপসরফা করলে তার দেশ পাক-ভারত যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব বিবেচনা করতে রাজি আছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত এদিন পাক-সামরিক জান্তার সকল আশায় গুড়ে বালি ঢেলে দিয়ে বলেন, চীনের কাছে বেশি কিছু আশা করা ঠিক হবে না। এদিন যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় জাতিসংঘে পাক-ভারত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করে। এ প্রস্তাবে পূর্ব-পাকিস্তান থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের কথাও বলা হয়।
কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পুনরায় ভেটো দেয়ার কারণে এ প্রস্তাব আর পাস হতে পারেনি। এদিন জুলফিকার আলী ভুট্টো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অত্যন্ত আবেগময় ভাষায় বক্তৃতা করেন। তবে তা কোন কাজে আসেনি। এদিকে ঢাকায় মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করা হয়। এদিন প্রখ্যাত সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমদকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে আল বদর বাহিনী।
অন্যদিকে বৃটিশ রাজকীয় বিমানবাহিনীর বিমানে করে বিদেশী নাগরিকদের ঢাকা থেকে অপসারণ শুরু হয়। ওদিকে লন্ডনের হাইড পার্কে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে হাজার হাজার বাঙালি জড়ো হয়। সমাবেশ শেষে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান ও শেখ মুজিবের মুক্তির দাবী জানিয়ে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এদিনে পাক সেনারা দিনাজপুরের বিরল থানার বহলা গ্রামে নির্মম গণহত্যা চালিয়ে ৩৭ জনকে হত্যা করে। ১৯৭১ সালের এদিনে সরিষাবাড়ী, আশুগঞ্জ, আদমদীঘি, ভাঙ্গা, কালিয়াকৈর, ভেড়ামারা, ডিমলা, গোপালগঞ্জ, ঘোড়াঘাট, গোবিন্দগঞ্জ, চান্দিনা, ডোমার, নরসিংদীসহ বিভিন্ন এলাকা শত্রু মুক্ত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুক্তিযোদ্ধা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ