Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রথম মুক্ত যশোরে ভাষণ দেন তাজউদ্দিন আহমদ

হোসেন মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

আজ ১১ ডিসেম্বর। মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের দিন আরো ঘনিয়ে আসে। সারা দেশের মুক্তাঞ্চলসমূহে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের নেতৃবৃন্দ সফর করেন। এদিন শত্রুমুক্ত যশোরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জনসভায় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ভাষণ দেন। রণাঙ্গনের সর্বত্রই মুক্তিবাহিনীর হাতে পাকিস্তানি হানাদাররা মার খাচ্ছিল। এতে হানাদার বাহিনীর মনোবল আরো ভেঙে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মালিকের বেসামরিক বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী গভর্নরের সম্মতিতে আজকের এই দিনে পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধবিরতি কার্যকর ও সেখানকার সকল পাকিস্তানী নাগরিককে সরিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘকে অনুরোধ জানান।
তবে জেনারেল ইয়াহিয়া খান এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করায় জাতিসংঘ এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। এদিকে ইয়াহিয়া খান এ সঙ্কটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সাহায্য কামনা করেন। কিন্তু নিক্সন নীরব থাকেন। অন্যদিকে ক্রমাগত বিপর্যযয়ের মুখে যুদ্ধ অব্যাহত রাখা বা আত্মসমর্পণ প্রশ্নে উচ্চ পর্যায়ের পাক সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে মতভেদ তীব্র হয়ে ওঠে।
মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা মুক্ত করে চলেছিল। এই দিন মিত্রবাহিনী হিলি সীমান্তে ব্যাপক প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। সন্ধ্যার দিকে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় শক্তিশালী পাক হানাদার ঘাঁটির উপর তীব্র আক্রমণ চালায়। সারারাত ধরে চলতে থাকে যুদ্ধ। যৌথবাহিনীর প্রচন্ড হামলার মুখে টিকতে না পেরে অবশেষে ভোরের দিকে পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।
১০ ডিসেম্বর বিকেল ৫টার দিকে টাঙ্গাইলের পুঙ্গি সেতুর কাছাকাছি এলাকায় ভারতীয় প্যারাট্রুপারদের অবতরণ শুরু হয়। সেতু রক্ষায় নিয়োজিত পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর একটি ছোট দলের সঙ্গে কিছু সময় সংঘর্ষের পর হানাদাররা পালিয়ে গেলে সেতুটি মিত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। মিত্র বাহিনীর অবতরণ দেখে ভীত হয়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা দ্রুত ঢাকার দিকে যাত্রা শুরু করে। হানাদারমুক্ত হয় টাঙ্গাইল। ১১ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করেন।
এদিন দুপুরের মধ্যে পূর্ব সেক্টরের মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী মৌলভীবাজার থেকে সিলেটের দিকে সাদিপুর ফেরীঘাট পর্যন্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। এদিকে নরসিংদী পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হওয়ায় ঢাকা দখলের লক্ষ্যে নরসিংদীকে একটি শক্তিশালী বেইস হিসেবে গড়ে তুলতে এখানে রাত দিন কাজ শুরু হয়। স্থলপথে আসা যৌথবাহিনীর দলটি আশুগঞ্জ-ভৈরব বাজার দিয়ে মেঘনা নদী অতিক্রম করতে শুরু করে।
ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশী নাগরিকদের নিজ নিজ দেশে ফেরার সুযোগ দেয়ার লক্ষ্যে ঢাকা বিমান বন্দরে এদিন মিত্রবাহিনীর বিমান হামলা বন্ধ রাখা হয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলে যৌথ বাহিনী চট্টগ্রাম শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে এবং সীতাকুন্ডে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মাধ্যমে দখলদার বাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে কুমিরা পর্যন্ত এগিয়ে যায়। এদিন মিত্রবাহিনী ঘোড়াঘাট দখল করে নেয় এবং গোবিন্দগঞ্জে পাকিস্তানি অবস্থানের ওপর দু’দিক থেকে প্রচন্ড আক্রমণ চালায়। আজকের এই দিনে কুষ্টিয়া পাক হানাদারমুক্ত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুক্তিযুদ্ধ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ