Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারত স্বীকৃতি প্রদান করে বাংলাদেশকে

হোসেন মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

আজ ৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এ দিনটিতে যে ঐতিহাসিক ঘটনাটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নতুন মাত্রা সূচনা করে তা হল ভারত কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান। পাকিস্তানি সৈন্যদের সাথে দেশের প্রায় সর্বত্র চলছিল মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তক্ষয়ী লড়াই। নয় মাস ধরে জীবনবাজি রেখে লড়াইরত মুক্তিবাহিনীর সদস্যরাসহ ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী প্রায় এক কোটি মানুষ এবং খোদ বাংলাদেশে দখলদারদের হত্যা-নির্যাতনে অতিষ্ঠ মানুষ যখন কায়মনোবাক্যে স্বাধীনতার জন্য আকুল হয়ে প্রার্থনা করছিল, তখনই ঘটে সেই ঐতিহাসিক ঘটনা। এদিন ভারত বাংলাদেশকে বহকাক্সিক্ষত স্বীকৃতি প্রদান করে। সকালে নয়াদিল্লিতে ভারতীয় লোকসভার অধিবেশনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, অবর্ণনীয় বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনগণ বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। সতর্কতার সাথে বিবেচনার পর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রীয় বেতার কেন্দ্র আকাশবাণী সকাল সাড়ে ১০টায় বিশেষ সংবাদ হিসেবে এ স্বীকৃতিদানের কথা প্রচার করে। ভারতের স্বীকৃতি প্রদানের এ ঘটনা বাংলাদেশের তাবৎ মানুষকে আশা ও আনন্দে নতুন করে উজ্জীবিত করে। মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বিপুলভাবে বৃদ্ধি পায়। মুক্তিবাহিনির সর্বাধিনায়ক কর্নেল এমএজি ওসমানী বলেন, এই স্বীকৃতি বাংলাদেশকে শত্রুর কবল থেকে মুক্ত করতে সহায়ক হবে। কোলকাতায় বাংলাদেশ মিশনে মিশন প্রধান এম হোসেন আলী এদিন দুপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের পুাকা উত্তোলন করেন। উল্লেখ্য, ভুটানও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। কিন্তু ভারত ও ভুটানের মধ্যে কে প্রথম স্বীকৃতি দেয় তার সুষ্ঠু মিমাংসা হয়নি।
এদিকে বাংলাদেশের সর্বত্র মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। ক্রমাগত বিপর্যয়ে দিশাহারা ঢাকার পাকিস্তানি জেনারেলরা তখনও বাইরের সাহায্য প্রাপ্তির অলীক স্বপ্নে বিভোর। এদিন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী সাংবাদিকদের সাথে এক ঘরোয়া বৈঠকে দাবি করেন, পঁচিশ বছর ধরে পাকিস্তান টিকে আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। এর দশ দিনের মাথায়ই পাকিস্তান সেনাবাহিনির সেই লজ্জাকর আত্মসমর্পণের ঘটনা ঘটে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় যশোর, ঝিনাইদহ ও কুড়িগ্রাম। প্রথম কোন জেলা শহর হিসেবে যশোরই প্রথম হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধা আর ভারতীয় বাহিনির যৌথ আক্রমণে যশোর ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তান বাহিনি। ক্যান্টনমেন্ট ত্যাগ করে তারা খুলনার শিরোমনিতে অবস্থান নেয়।
এই দিনে শত্রুমুক্ত হয় কুড়িগ্রাম জেলা। ৮টি থানা নিয়ে সে সময়ে কুড়িগ্রাম একটি মহকুমা ছিল। মুক্তিবাহিনী ১লা ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম শহরের চারপাশে অবস্থান নেয়। পাক হানাদার বাহিনির উপর নিয়মিু আক্রমণ চালাতে থাকে। অতঃপর ৬ই ডিসেম্বর বিকেলের দিকে শত্রু মুক্ত হয় কুড়িগ্রাম।
আজকের দিনে আখাউড়া, বকশিগঞ্জ, কলাপাড়া, কলারোয়া, পীরগঞ্জ (রংপুর), বড়লেখা, চুনারুঘাট, দামুড়হুদা, দর্শনা, ছাতক, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, ফেনী, মেহেরপুর, শ্রীমঙ্গল, ছাগলনাইয়া প্রভৃতি স্থান হানাদারমুক্ত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুক্তিযোদ্ধা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ