দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উজ্জ্বল জ্যোতির্ময় রবিউল আউয়াল মাস, সেই পবিত্র মাস, যে মাসে নবীকুলের সরদার, পুতঃপবিত্র চরিত্রের অধিকারী, জ্ঞান বিজ্ঞানের আধার, ¯্রষ্টার সর্বোত্তম সৃষ্টি সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহধামে তাশরীফ এনেছেন, জড় জগৎসহ কুল কায়েনাতকে আলোকময় করেছেন। হে রবিউল আউয়াল শুভ বসন্তের নববার্তা নিয়ে তোমার আগমনে আকাশ-বাতাস মুখরিত, মানব দানব, কুল কায়েনাত পুলকিত। তোমার সমুন্নত মর্যাদায় আমাদের অন্তরাত্মার শ্রদ্ধা নিবেদিত। তোমার সমীপে শত সহস্র সালাম, তোমাকে জানাই অকৃত্রিম অভিবাদন। আহলান সাহলান! তুমি তো সুমহান মর্যাদায় ঐশ্বর্য্যমন্ডিত। মদীনার দুলাল, স্রষ্টার শ্রেষ্ঠতম আদর্শ, নবী মোস্তাফাকে তুমি বরণ করেছ, তুমি ধন্য মহিমান্বিত গৌরবান্বিত মদীনার প্রেমাস্পদকে ধারণ করে। তোমার স্মরণ মুসলিম মিল্লাতের তরে চির অম্লান। তোমার মর্যাদা অতুলনীয়, অপরিসীম। আল্লাহর পেয়ারা হাবীব মদীনার তাজেদার, বিশ্ববিজয়ী সিপাহ্সালার, মালিকে আবে কাউছার, নবী মোস্তাফার আগমন ঘটেছে তোমারই স্মৃতি বিজড়িত পুণ্যময় মাসে, তাইতো তুমি চির অক্ষয়, চির অব্যয়। তোমার আগমনে নবী প্রেমিকরা পাগলপারা। মর্দে মুমিন বীর মুসলিমরা মাতোয়ারা, তোমাতেই প্রিয় নবীর শুভাগমনে মুমীনদের অন্তরাত্মা আলোকিত। নিখিল বিশ্বভুবন ফুলে ফলে সৌরভে সুরভিত ও সুশোভিত, রহমতের বার্তাবাহী মাহে রবিউল আউয়ালের চন্দ্র পশ্চিমাকাশে উদিত হওয়ার সাথে সাথে নবী প্রেমিক মুসলমানরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে। প্রিয় নবীর বেলাদতের স্মৃতি বিজড়িত এ মোবারক মাসে প্রিয় নবীর প্রতি নিবেদিত উম্মতরা হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার সওগাত ও ভক্তির নযরানা পেশে বিভোর হয়ে পড়ে। সর্বত্র সাড়া পড়ে যায় ঐতিহাসিক জাতীয় ধর্মীয় আনন্দোৎসব জশনে জুলুসে ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপনের ব্যাপক প্রস্তুতি। সর্বত্র উচ্চকিত তৌহিদ ও রেছালতের জয় ধ্বনি।
বক্ষমান নিবন্ধে কুরআন, সুন্নাহ, এজমা, কিয়াসের আলোকে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সর্ম্পকে সৃষ্ট নানাবিধ বিভ্রান্তির অবসানে মুসলিম মিল্লাতের ঈমান আক্বিদা সংরক্ষণে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামার গুরুত্ব ও তাৎপর্য উপস্থাপনে আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।
মহাগ্রন্থ আল কুরআনের বাণীঃ
ওয়াইন তাইদ্দু নিআমাতাল্লাহে লা তাহছুহা, অর্থাৎ যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর তবে গুণে শেষ করতে পারবেনা। (পারা ১৩ রুকু ১৭) নিঃ সন্দেহে আল্লাহর নিয়ামতরাজি অসংখ্য যা গণনাতীত ও বর্ণনাতীত। কিন্তু সকল নিয়ামতের শ্রেষ্ঠ নিয়ামত উপরন্ত সকল নিয়ামতের প্রাণ সুষ্টির উৎসমূল, ঈমানের প্রাণ হল প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার পবিত্র সত্তা। যার কৃপায় অফুরন্ত সম্পদ ও নিয়ামতরাজি জগৎবাসীর প্রতি স্রষ্টার আর্শীবাদ স্বরূপ। আলা’হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (র.) কতই সুন্দর লিখেছেন-
উহ্ যো নথে তুকুছ নথে উহ যো নহো তুকুছ নহো
জান হে উহ্ জাহান কি জান হে তু জাহান হে
কাব্যনুবাদঃ তিনি যখন হয়নি ভবে কেউ ছিলনা তখন।
সৃষ্টির কুলের প্রাণ তিনি মহান প্রভুর প্রথম সৃজন।
এজন্যই মহীয়ান স্রষ্টা বিশ্ববাসীর প্রতি তাঁর প্রিয় হাবীব রাহমাতুল্লীল আলামীনের প্রেরণকে মহান আল্লাহর সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত বলে অভিহিত করেছেন, এরশাদ করেছেন লাক্বাদ মান্নাল্লাহু আলাল মুমিনীনা ইয বাআছা ফিহীম রাসুলান মিন আনফুছিহীম (পারা ১৪ রুকু ৮)
অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমীনদের প্রতি বড়ই অনুগ্রহ করেছেন, যেহেতু তিনি তাদের মধ্যে তাদেরই কল্যাণ্যার্থে একজন সম্মানিত রসুল প্রেরণ করেছেন। ঈমানদারদের উপর সর্বোত্তম নিয়ামত প্রেরণ করে তাদেরকে ধন্য ও কৃতার্থ করেছেন। সুতরাং ঈমানদার মাত্রই সকলের উপর এ নিয়ামতের যথার্থ মূল্যায়ন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা অবশ্যই কর্তব্য। বিশেষতঃ যে মাসে যে দিনে এ মহান অনুগ্রহ দান করেছেন সে মাসে সেদিনে এ নিয়ামতের আলোচনা করা স্রষ্টার নির্দেশেরই অনুগামিতা। আল্লাহ পাক কুরআন শরীফের বহুস্থানে খোদাপ্রদত্ত নিয়ামতের আলোচনা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং বিভিন্নভাবে এ নিয়ামতের যথার্থ স্মরণ করার নির্দেশ করেছেন। বিশেষতঃ সুরা দ্বোহায় এরশাদ করেছেন, ওয়াম্মা বিনেমাতী রব্বীকা ফাহাদ্দিস, অর্থাৎ আপনার পালন কর্তার নিয়ামতের র্চচা করুন। (পারা-৩০, রুকু ১৮)
অতঃপর আল্লাহ পাক নিয়ামতের অবমূল্যায়ন ও অস্বীকারকারীদের পরিণতি সর্ম্পকে এরশাদ করেছেন- আলাম ত্বারা ইলাল্লাযিনা বাদ্দালু নিআমাতাল্লাহে কুফরান,অর্থাৎ আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যারা অকৃতজ্ঞ হয়ে আল্লাহর নিয়ামতকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। (পারা ১৩ রুকু ১৭)
বোখারী শরীফ ও অন্যান্য তাফসীর গ্রন্থ সমূহে মুফাসসিরকুল শিরোমনি হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস ও হযরত ওমর (রা.) হতে বর্ণিত আছে, একমাত্র কাফিররাই আল্লাহর নিয়ামতের অকৃতজ্ঞ হতে পারে। আয়াতে বর্ণিত নিয়ামতুল্লাহ দ্বারা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামাকে বুঝানো হয়েছে। (বুখারী শরীফ ৩য় অধ্যায় ৬পৃষ্ঠা)
পবিত্র কুরআন হাদিসের আলোকে প্রতীয়মান হলো হুজুর করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত ও রহমত, যাকে আল্লাহ বিশেষ অনুগ্রহ বলে ঘোষণা করেছেন। উক্ত নিয়ামত ও রহমতের স্মরণ ও আলোচনা করার আদেশ করেছেন। সুতরাং প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার শুভাগমনের মাসে ও দিনে তাঁরই স্মরণ সভা, আলোচনা সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, মিলাদুন্নবী, জশনে জুলুছ, আলোকসজ্জা, শোভাযাত্রা, খানা পিনার আয়োজন, মিষ্টান্ন বিতরণ ইত্যাদি কর্মসূচী পালন করা এবং তাঁর স্মরণে খুশি উদযাপন করা আল্লাহর ও রাসুলের আনুগত্য বৈ কি? পক্ষান্তরে এর বিরোধিতা অকৃতজ্ঞতার পরিচায়ক; অকৃতজ্ঞতা কুফরীর নামান্তর।
রহমত লাভে খুশী উদযাপনঃ
পবিত্র কুরআনে আরো এরশাদ হয়েছে “কুল বিফাদলিল্লাহি ওয়াবিরাহমাতিহি ফবেজালিকা ফালয়াফরাহু হুয়া খায়রুন মিম্মা ইয়াযমাউন”(পারা ১১ রুকু ১১)
অর্থাৎ হে প্রিয় হাবীব! আপনি বলে দিন, তারা যেন আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তিতে খুশি উদযাপন করে উক্ত খুশি ও আনন্দ তাদের সমুদয় সঞ্চয় থেকে অতি উত্তম। উপরে বর্ণিত আয়াত সমূহে যেরূপভাবে নিয়ামতের চর্চা ও স্মরণ করার উল্লেখ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে অত্র আয়াতে দয়া, অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তিতে খুশী উদযাপনের র্চচা ও স্মরণ করার উল্লেখ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে অত্র আয়াতে দয়া, অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তিতে খুশী উদযাপনের নির্দেশ রয়েছে। প্রিয় নবী যে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহর রহমত, এতে মুসলিম মিল্লাতের কোন দ্বিমত নেই। অত্র আয়াতে যদি ফজল ও রহমত দ্বারা অন্য কিছু উদ্দেশ্য করা হয় তাও হুজুরের ওসীলায় সৃজিত। সর্বাবস্থায় প্রিয় রাসুলের পবিত্র সত্তা আল্লাহ পাকের সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত হওয়া প্রমাণিত। উভয় জাহানে তারই রহমতের বারিধারা প্রবাহিত, সুতরাং তাঁর গুণগান শান মান মর্যাদা ও মাহাত্ম্য স্মরণ করাও আলোচনা করা বিধাতার আনুগত্যের নামান্তর, পক্ষান্তরে এর বিরোধিতা করা অস্বীকার করা অকৃতজ্ঞতার পরিচায়ক।
বেলাদত দিবসের গুরুত্বঃ
হযরত কাতাদাহ (রঃ) থেকে বর্ণিত, প্রিয় রাসুলের কাছে সোমবার দিবসে রোজা রাখা সর্ম্পকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, প্রিয় নবী এরশাদ করেন, ফিহী উলিদতু ওয়াফিহী উনযিলা আলাইয়্যা অর্থাৎ এ দিনেই আমি আবির্ভূত হয়েছি এবং এদিনেই আমার উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। (মিশকাত শরীফ ১৭৯ পৃষ্ঠা) প্রিয় নবীর উপরোক্ত হাদিস থেকে মিলাদুন্নবী তথা প্রিয় নবীর জন্ম দিবস ও নুযুলে কুরআন দিবসের গুরুত্ব এবং ঐতিহাসিক স্মরণীয় দিবসের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন ও নেয়ামত প্রাপ্তির কৃতজ্ঞতা স্মরূপ রোজা পালনের বৈধতা প্রমাণিত হলো। সুতরাং সাপ্তাহিক হিসেব অনুসারে প্রতি সোমবার যেমনি মুসলমানদের নিকট ঐতিহাসিক গুরত্ব রাখে তেমনি বার্ষিক হিসেবে ১২ রবিউল আউয়াল শরীফের সোমবার বিশ্ব মুসলমানদের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ এবং এ মাসে এ দিবসের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা অপরিসীম। ২৭ শে রমজান পবিত্র কুরআন অবতরনের দিন হিসেবে যেভাবে গোটা রমজান মাস সম্মানিত স্মরণীয় বরণীয়। তেমনিভাবে প্রিয় নবীর বেলাদত দিবস সোমবার ১২ রবিউল আউয়াল মাসে হওয়ার কারণে গোটা মাস মুসলিম মিল্লাতের কাছে ঐতিহাসিকভাবে সমাদৃত এবং এ মাসের গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব ওলামায়ে ইসলামের সর্বসম্মতিক্রমে ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। প্রসঙ্গতঃ বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম আহমদ বিন মুহাম্মদ কুস্তালানী মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (র.) প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ বর্ণনা করেন যে, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রা.) এর মতো বিশ্ববিখ্যাত ওলামায়ে কেরাম বলেন-প্রিয় নবীর জন্মদিবস শবে ক্বদর থেকে উত্তম, আরো বলেন শুক্রবার আদম (আঃ) এর জন্ম দিবস হওয়ার কারণে যদি সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এর গ্রহণযোগ্যতা সর্বজন স্বীকৃত হয় তাহলে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জন্ম দিবসের পবিত্র ক্ষণ ও মুহূর্ত তোমার ধারণা মতে কেমন হওয়া উচিত? তাঁর সমুন্নত মর্যাদার যথার্থতা বর্ণনা আদৌ কি সম্ভব। (জুরকানী শরহে মাওহেব পৃঃ ১৩২-১৩৫ মাদারেজুন্নবুয়ত ২য় খন্ড ১৩ পৃষ্ঠা)
ঈদ শব্দের মর্মার্থঃ
উপর্যুক্ত বর্ণনার আলোকে প্রতীয়মান হলো, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার ঘোষনানুসারে পবিত্র জুমাবার যেরূপ আদম (আ) এর জন্ম দিবস তেমনিভাবে ঈদের দিবসও বটে। বরঞ্চ আল্লাহর নিকট ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিবসের চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠ। (মিশকাত শরীফ ১২৩-১৪০ সংক্ষিপ্তসার) সুতরাং আদম (আঃ) এর জন্ম দিবস যদি ঈদের দিবস বরঞ্চ উভয় ঈদ হতে শ্রেষ্ঠ দিবস হতে পারে, তাহলে ইমামুল আম্বিয়া সৈয়্যদিল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা এর শুভাগমন দিবস ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে কেন শ্রেষ্ঠ দিবস হবেনা?কুল কায়েনাত যাঁর নুরানী কদম পাকের কৃপায় সৃজিত, যাঁর নুরানী আলোকধারায় কুল মাখলুকাত আলোকিত লক্ষ কোটি দরুদ সালাম যারই তরে নিবেদিত, সেই অসহায়ের সহায় মানবতার কান্ডারী মুক্তির দিশারী বিশ্বশান্তির মূর্ত প্রতীক সৈয়্যদানা মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শুভাগমনের স্মৃতি বিজড়িত পুণ্যময় দিবসের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনাতীত নিঃসন্দেহে।
ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের অভিমতঃ
একদা হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) “আল ইওমা আকমালতু লাকুম দ্বীনাকুম ওয়াতমামতু” আয়াতটি পাঠ করলে এক ইয়াহুদী বলল এ আয়াতটি যদি আমাদের উপর অবতীর্ণ হতো তাহলে আমরা অবতরনের দিবসকে ঈদের দিবস হিসেবে উদযাপন করতাম। তখন হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন এ আয়াত সেদিনই নাযিল হয়েছে যেদিন দু’টি ঈদ ছিল শুক্রবার দিবস এবং আরাফাত দিবস ( মিশকাত শরীফ ১২১ পৃঃ) মিশকাতের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মিরকাতে অত্র হাদিসের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তাবরানীসহ অন্যান্য বর্ণনা সূত্রে অনুরূপ প্রশ্নোত্তর সম্বলিত হাদিস হযরত ওমর (রা.) থেকেও বর্ণিত আছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো যে, উভয় সাহাবী একথা বলেননি যে, ইসামের মধ্যে শুধুমাত্র ঈদুল আযহা, ঈদুল ফিতর নির্ধারিত, আমাদের জন্য তৃতীয় কোন ঈদ উদযাপন করা বিদয়াত ও নিষিদ্ধ। বরঞ্চ জুমাবার ছাড়াও আরাফাত দিবসকে ঈদ ঘোষণা করে এ কথা প্রমাণ করলেন যে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ নিয়ামত প্রাপ্তির দিবসকে বিশেষভাবে স্মরণ করা এবং নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং শরীয়ত সম্মত উপায়ে আনন্দ ও খুশী উদযাপন করা কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ যা শরীয়ত সম্মত ও কুরআন সুন্নাহ কর্তৃক অনুমোদিত। তাছাড়া বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস মোল্লা আলী ক্বারী (র.) এক স্থানে বর্ণনা করেন যে, প্রত্যেক খুশী ও আনন্দ বিষয়ক দিনের ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তে ঈদ শব্দ ব্যবহারযোগ্য।
জুমার দিন ঈদ হওয়া, আরাফাত দিবস ঈদ হওয়া, আয়াত অবতরনের দিবস ঈদ হওয়া, প্রত্যেক অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তির দিবস ঈদ হওয়া এবং প্রত্যেক শরীয়ত সম্মত খুশী পালনের দিন ঈদ হওয়া, যখন সুস্পষ্ঠভাবে প্রমাণিত হলো, সে ক্ষেত্রে সকল দিনের শ্রেষ্ঠ দিন ও উত্তম দিন মিলাদুন্নবী তথা নবীর জন্ম দিবস ঈদের দিন হওয়াতে বাধা কোথায়? নিঃসন্দেহে তা ঈদের দিবস। এ কারণে মুসলিম মিল্লাত ও ওলামায়ে-কেরামের দৃষ্টিতে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জন্ম দিবস উদযাপন ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা হিসেবে বহুল প্রচলিত। পবিত্র কুরআন অনুসন্ধানে এ সত্যের বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায় যে, মরিয়ম তনয় হযরত ঈসা (আ.) আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করলেন-হে প্রতিপালক! আমাদের জন্য আসমান হতে একটি মায়িদা অবর্তীণ করুন যা আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ হিসেবে পরিগণিত হবে (পারা-৭-রুকু-৫) সুবহানাল্লাহ, মায়িদা তথা দস্তরখান এবং মান্না সালাওয়া জাতীয় খাদ্য নিয়ামত স্মরূপ অবতরণ হওয়ার দিন যখন ঈদের দিন হিসেবে স্বীকৃতি পেল সেক্ষেত্রে সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ নিয়ামত মিলাদুন্নবী তথা নবীর জন্ম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে খুশী উদযাপন করা নিঃসন্দেহে শরীয়ত সম্মত।
মুহাদ্দিসগণের অভিমতঃ
ইমাম আহমদ বিন মুহাম্মদ কুস্তুলানী, আল্লামা মুহাম্মদ বিন আবদুল বাকী জুরকানী, শায়খ মুহাক্কিক আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (র.) প্রমুখ বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিসগণ নিম্নোক্ত দোয়া বর্ণনা করেন, ফরহেমাল্লাহুইমরান এত্তাখাজা লায়লীয়া শাহরে মাওলাদিহীল মোবারকে আয়াদান, অর্থাৎ ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হউক যে ব্যক্তি তাঁর প্রিয় নবীর শুভাগমনের মাসের রাত্রি সমূহকে ঈদের মত উদযাপন করে (জুরকানী মাওয়াহেব ১ম খন্ড ১৩৯ পৃষ্ঠা, মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ ৬০ পৃষ্ঠা) স্থানের মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার পদধুলি ধন্য প্রিয় নবীর জন্ম স্থানটি পুণ্যময় ও বরকতময়।
উপরের বর্ণনায় বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিসগণ শুধুমাত্র একদিন নয় বরঞ্চ রবিউল আউয়াল মাসের সকল রাত্রি সমূহকে ঈদ আখ্যায়িত করেছেন এবং মিলাদুন্নবী উদযাপনকারীদের জন্য রহমত কামনা করেন। যে দিনের সৌভাগ্যে গোটা রবিউল আউয়াল মাস সম্মানিত ও বরণীয় মাস হিসেবে পরিগণিত সেক্ষেত্রে ১২ রবিউল আউয়ালের সে গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ দিবসটি কেন ঈদের দিন হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের সোপানে অভিষিক্ত হবেনা? বরং মাহযাবের ইমামগণ বলেন, মক্কা শরীফে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র স্থানটি মসজিদে হেরম ব্যতীত পৃথিবীর সকলস্থানের মধ্যে সর্বোত্তম। মক্কাবাসীগণ আজিমুশশান শান শওকতের মাধ্যমে ধর্মীয় উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে সেখানে গুরুত্বসহকারে মাহফিলের ব্যবস্থা করতেন। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।