Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচন কমিশনের আওয়ামী চেহারা উন্মোচিত হচ্ছে -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:২৪ পিএম
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, নির্বাচন কমিশন খোলস ভেঙ্গে তাদের আওয়ামী চেহারাটা ততটাই উন্মোচিত হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগেই সম্ভবত ক্ষমতাসীন দলের ‘বিজয়’ নিশ্চিত করতে নানা রকম কলা-কৌশল ফন্দি-ফিকির করছে কমিশন। এর একটি ড্রেস রিহার্সেল হয়ে গেল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের মধ্য দিয়ে। বিএনপির প্রার্থী, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র কেবল যাচাই-বাছাই হয়েছে এবং বাতিল করা হয়েছে গণহারে। বুুধবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।          
রিজভী অভিযোগ করে বলেন,  আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়নি। বিষয়টি এমন ছিল যে, বিএনপি হলেই অবৈধ আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেই বৈধ। আওয়ামী লীগের ব্লু-প্রিন্টের কুখ্যাত কারিগর এইচ টি ইমাম যে তালিকা সিইসিকে দিয়েছে তাই বৈধ বলে প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন জেলার রিটার্নিং অফিসাররা।  এই এইচ টি ইমাম সরকারের সকল কু-কর্মের হোতা। তবে এখনও আওয়ামী লীগের বোধোদয় হচ্ছে না যে এই এইচ টি ইমাম যেকোন মূহুর্তে চোখ উল্টে দিতে পারে, যেমন ‘৭৫ এ তৎকালীন প্রেসিডেন্ট  শেখ মুজিবর রহমানের লাশ ডিঙ্গিয়ে খন্দকার মোশতাকের সাথে হাত মিলিয়েছিলেন। শপথ পড়িয়েছিলেন মোশতাক সরকারকে। তিনি যদি মরহুম শেখ মুজিবর রহমান ও আওয়ামী লীগের এতোটাই অনুসারী ও ভক্ত হতেন তাহলে তো শেখ মুজিবর রহমানের মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে কেবিনেট সেক্রেটারি পদ থেকে পদত্যাগ করতে পারতেন, কিন্ত তিনি তা করেননি। মীর জাফরের সকল গুণই এই এইচ টি ইমামের মধ্যে বিদ্যমান। 
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে এই বিএনপি নেতা বলেন, নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ছকের মধ্য থেকেই কাজ করছেন কে এম নুরুল হুদা কমিশন। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে সরকারের মনোবাঞ্ছা বাস্তবায়ন করার পর এখন মাঠের নিয়ন্ত্রণ যাতে ক্ষমতাসীন দলের হাতেই থাকে, সেজন্য নির্বাচন কমিশন কখনো প্রকাশে আবার কখনো পর্দার অন্তরালে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ইসি নোটিশ দিচ্ছে নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে পোলিং এজেন্টদের তালিকা তাদেরকে দিতে হবে। সেই তালিকা ধরে নতুন করে ধরপাকড় শুরু করার নীলনক্সা এটা।। গাজীপুর, রাজশাহী ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমরা এমন পরিস্থিতি দেখেছি। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন এমপির দাপট তো থাকবেই। এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের প্রতিটি পদক্ষেপে ক্ষমতাসীন দল জোরালো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে না। শুধু তা-ই নয়, জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা প্রশাসনে রদ-বদলের দাবি করে এলেও মনে হয় আসাহাব কাহাবের মতো ইসি দীর্ঘকাল ঘুমিয়ে থাকবে।
একই আইনের দ্বিমুখী প্রয়োগের কথা তুলে ধরে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার জন্য রেজা কিবরিয়ার মনোনয়ন বাতিল করা হলেও এক কোটি টাকার ঋণখেলাপি হয়েও বৈধতা পেল আওয়ামী লীগ জোটের বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী। ব্যাংকের লোক গিয়ে আপত্তি জানালেও রিটানিং কর্মকর্তা তা আমলে নেননি। রিটানিং কর্মকর্তা তা গণমাধ্যমের কাছে স্বীকারও করেছেন। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামালের আয়কর রিটার্নের নানাবিধ অসঙ্গতি থাকার পরও তার মনোনয়নপত্র বৈধ করেছে রিটার্নিং অফিসার। রিটার্নে ব্যবসায়িক আয় অপ্রদর্শিত। এ কে এম শাহজাহান কামালের আর্থিক বিবরণী দাখিলকৃত হলফনামার সাথে কোন মিল নেই। তারপরেও তার মনোনয়নপত্র বৈধ করা হয়েছে।
দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া ১৩ বছরের সাজার তথ্য গোপন করেও মনোনয়নপত্রের বৈধতা পেয়েছেন বরিশাল-৪ আসনে মহাজোট প্রার্থী। বিষয়টি বরিশালের রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগসহ অবহিত করার পরেও তা গুরুত্ব পায়নি। পত্র পত্রিকায় এসেছে ম খা আলমগীর তার হলফনামায় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের কোন হিসাবই দেননি। অনেক ছক পুরণ করেননি। এছাড়াও তিনি ২০০৭ সালে ১৩ বছরের দন্ডপ্রাপ্ত। তারপরও তার মনোনয়নপত্র বৈধ করা হয়েছে। হাজী সেলিম, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার কথাতো আগেই বলেছি।তিনি বলেন, জনগণের অধিকার নিয়ে এত জুলুম করার কারণে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্বায়নকারী ইসি সচিব হেলালুদ্দীন। তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক একজন নিরাপত্তারক্ষী নিয়োজিত থাকলেও ভরসা পাচ্ছেন না।তিনি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা আরও বাড়াতে চান। সেই লক্ষ্যে পিস্তলধারী নয়, এবার শটগানধারী একজন নিরাপত্তারক্ষী চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন করেছেন। হেলালুদ্দীন সাহেব এসির মধ্যে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থেকে বাড়তি নিরাপত্তা দাবি করছেন ভাল কথা, কিন্তু জনগণের নিরাপত্তার কথা কী একবার বিবেচনা করছেন ? কোন ভোটার এখনও নিরাপদ নয়। ভোটাধিকার প্রয়োগে ভোটার’রা শঙ্কিত ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। বিএনপির এই নেতা বলেন, সারাদেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের যে তালিকা সরবরাহ করছে সেগুলোই ইউএনও সাহেবদেরকে মানতে বাধ্য করা হচ্ছে। নির্বাচনের দিন ভোট গণনা শুরু হওয়া থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আওয়ামী ক্যাডার’রা পরিকল্পিতভাবে গোলমাল করবে, এই সুযোগে আওয়ামীমনা প্রিজাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার’রা ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দিয়ে ভোট নিয়ে কোন ফন্দি-ফিকির করবে।
তিনি বলেন, পুরো পরিস্থিতি বদলে যাবে। সুবিধাভোগী কিছু কর্মকর্তা ছাড়া মানুষের অধিকারের ব্যাপারে জনপ্রশাসন ও পুলিশের সবাই বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। আমরা বিশ্বাস করি-জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে কান্ডজ্ঞান ও নৈতিক মানসম্পন্ন ব্যক্তিরা এখনও আছেন। ভোট হচ্ছে জনগণের শক্তি। সব জনপ্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না। জেল জুলুম হুলিয়া, গ্রেফতার, হুমকি ও গুম খুনের ভয়কে জয় করে সব প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও ভোটাররা বেরিয়ে এসে সাহসের ভোট কেন্দ্রে যাবে।
এ ছাড়া তরুণ ভোটাররা এবার হবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার অগ্রদূত। এর মধ্যে আড়াই কোটি নতুন ভোটার এবার প্রথম ভোট দেবেন। এই তরুণ ভোটাররাই স্বৈরাচারীর সকল বাধার বিন্ধ্যাচল অতিক্রম করে তাদের অধিকার প্রয়োগের জন্য ভোটকেন্দ্রে যাবেন। এই জালিমশাহীর পতন ঘটবে ইনশা-আল্লাহ।


 

Show all comments
  • দুর্বাশা দুর্বার ৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম says : 0
    মন্তব্য করবে কি করে ইসির নজরদারী রয়েছে না !
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ