টার্গেট করে ৫০ জনের মতো দলের হেভী ওয়েট জনপ্রিয় নেতা ও সাবেক এমপি’দের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপি’র অসংখ্য মনোনয়ন প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে বগুড়া’র ডিসি মনোনয়নপত্র বাতিল করার মাধ্যমে বেগম জিয়া আরও একটি আক্রোশের শিকার হলেন শেখ হাসিনার। সোমবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, বিনা অজুহাতেই বিএনপি প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারদের কক্ষ সংলগ্ন ‘ছোট রুম’টিই এখন টক অব দি কান্ট্রি। বিএনপি প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হবে কি হবে না সেটি জানার জন্য বারবার রিটার্নিং অফিসার ঐ ছোট রুমে ছুটে যান। মূলত: সরকারের নির্দেশ শোনার জন্যই রিটার্নিং অফিসারকে বারবার ঐ রুমে যেতে হয়। বিএনপি’র প্রার্থীদের অনেকেরই মনোনয়নপত্র নির্ভূল থাকার পরেও উক্ত ছোট রুম থেকে ফিরে এসে রিটার্নিং অফিসার (ডিসি) বলেন, উপরের নির্দেশ আছে বলেই এই মনোনয়নপত্রটি বাতিল করতে আমি বাধ্য হচ্ছি। এদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর একজনেরও মনোনয়ন পত্র বাতিল হয়নি। কারণ তাদেরকে সাধু সন্যাসী বলে মনে করে নির্বাচন কমিশন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মনোনয়ন পত্রে স্বাক্ষর না করা সত্ত্বেও তার মনোনয়নপত্র বৈধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে-সৈয়দ আশরাফের মনোনয়ন পত্রে টিপসই দেয়া হয়েছে, তিনি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় অচেতন হয়ে থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। কেউ বিদেশে অবস্থান করলে তার স্বাক্ষর কিংবা টিপসই সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ এ্যাম্বেসি’র একজন ফার্ষ্ট সেক্রেটারী কর্তৃক সত্যায়িত করতে হবে, যার মর্যাদা হবে প্রথম শ্রেণীর একজন ম্যাজিষ্ট্রেটের সমমানের। এধরণের কর্মকর্তার দ্বারা সত্যায়িত হয়নি সৈয়দ আশরাফের মনোনয়নপত্র। তার মনোনয়নপত্র নোটারী করা হয়েছে বাংলাদেশে, যা আইনসিদ্ধ নয়। সৈয়দ আশরাফের নামে নির্বাচনী কোন ব্যাংক একাউন্ট নেই, যেখান থেকে নির্বাচনী খরচ চালানো হবে। তাহলে সৈয়দ আশরাফের মনোনয়নপত্র বৈধ হলো কিভাবে ? লক্ষীপুর-৩ আসনে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল কাগজপত্র ও অন্যান্য তথ্য দাখিল না করলেও তার মনোনয়নপত্র বৈধ করা হয়েছে। এটি নিউজ করতে গেলে তিনি সাংবাদিকদেরকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের অনেক দন্ডিত নেতারও মনোনয়নপত্র বৈধ করা হয়েছে।
রিজভী বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন আওয়ামী গ্ল্যামারই ধারণ করে আছে। তারা প্লেয়িং ফিল্ড সমতল করা থেকে অনেক দুরে অবস্থান করছেন। নির্বাচনী প্লেয়িং ফিল্ড এখন বরেন্দ্র ভূমির ন্যায়। গত ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে গণতন্ত্রকে হত্যার পর এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে সেই লাশটির ময়নাতদন্তের রিপোর্টও গায়েব করে দিতে উদ্যোগী হয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফশীল ঘোষনার পর থেকে অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি নেতাকর্মীদের শান্তি নেই, স্বস্তি নেই, ঘুম নেই। নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত গুম আর গ্রেফতার হচ্ছে কিংবা গ্রেফতার ও গুম আতঙ্কে ভুগছে। আওয়ামী আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বন্য প্রাণীর মতো শুঁকে শুঁকে বিএনপি’র গন্ধ পেলেই শমনভবনে পাঠানোর জন্য হামলে পড়ছে।নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশন সরকারের পরিব্যাপ্ত ছায়া। সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন কমিশন। প্রধানমন্ত্রীর প্রচ্ছন্ন নির্দেশেই ইসি সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকান্ডেই বোঝা যায় যে, তারা কোন জাতের। গণতন্ত্র ও সুষ্ঠূ নির্বাচনের নেতিবাচক চরিত্র হলেন এইচ টি ইমাম। তিনি নির্বাচনকে নিয়ে যত রকমের কারিগরি করা দরকার তাই করছেন। ভোটের দিন ইন্টারনেট থ্রি-জি, ফোর-জি মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া হবে। আজ থেকে মনিটরিং করা হবে ফেসবুকসহ সামাাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। সরকারের সমালোচনা করলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়ার হুমকি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিব।তবুও এদেশের অধিকারহারা জনগণ ও জাতীয়তাবাদী শক্তি ‘শিকল ভাঙ্গা পণ’ নিয়ে গণতন্ত্র পূণরুদ্ধার ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার নির্বাচনী প্রতিযোগিতার যুদ্ধে এগিয়ে যাবে। গণশক্তির ক্ষিপ্রগতি অশে^র হ্রেষাধ্বণিতে গণতন্ত্রের শত্রুদের বুকে কম্পন উঠেছে। আওয়ামী নেতারা গর্জাচ্ছেন, এটা শুন্যকুম্ভের বাজনা। জনগণকে সাথে নিয়ে লড়াই সংগ্রাম করে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করবোই।