দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মুফতী পিয়ার মাহমুদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও তাফসীরবিদগণ এর তাফসীর করতে গিয়ে বলেছেন- গানবাজনা, বাদ্যযন্ত্র, অনর্থক গল্প, উপন্যাস ও কিস্যা-কাহিনীসহ যে সকল বিষয় মানুষকে আল্লাহর ইবাদত ও স্মরণ থেকে গাফেল করে দেয় সে সবই ‘লাহওয়াল হাদীস’ এর অন্তর্ভুক্ত। (মাআরিফুল কুরআন: ৭/৪)। মহানবী (সা.) বলেন- আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। তাদের সামনে গায়িকারা গান গাবে বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র-বাজিয়ে। আল্লাহ তাআলা এদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিবেন আর কতকের আকৃতি বিকৃত করে বানর ও শুকরে পরিণত করে দিবেন। (ইবনে মাজা: ২/৪০২০; ইবনে হিব্বান, হাদীস: ৬৭৫৮; তাবরানী-কাবীব: ৩/৩৪১৯)। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে- ইবনে আব্বাসের (রা.) বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- আল্লাহ তাআলা মদ, জুয়া-তবলা ও সারেঙ্গী হারাম করেছেন। (আহমাদ, আবু দাউদ)। এছাড়াও বহু প্রমাণ ও নির্ভরযোগ্য হাদীস রয়েছে যাতে গান-বাদ্য হারাম ও নাজায়িয বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে রয়েছে বিশেষ সতর্কবাণী ও কঠিন শাস্তির ঘোষণা। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝতে পারলাম বার্থ ডে বা জন্ম দিবস উদযাপনকে ইসলাম আদৌ সমর্থন করে না এবং এটি একটি নিষিদ্ধ ও নাজায়িয অনুষ্ঠান এবং পরকালে ভয়াবহ আযাবে নিপতিত হওয়ার কারণ। এ ছাড়া যুক্তির নিরিখেও বার্থ ডে পালনের কোন উপযুক্ততা খুঁজে পওয়া যায় না। কারণ যেদিন সে দুনিয়ার আলো দেখলো সে দিন তো তার জন্ম দিন নয়। সে দিন হলো তার ডেলিভারী ডে বা গর্ভপাত দিবস। তার জন্ম দিন তো হলো সেদিন যেদিন সে মাতৃগর্ভে জন্মেছে। তারপর পর্যাক্রমে পূর্ণ মানবের আকৃতিতে মায়ের উদর থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। মাতৃগর্ভে কোন দিন কখন তার জন্ম তা কতজন মা-বাবা সঠিকভাবে বলতে পারবেন? বোধ করি শতকরা একজন মা-বাবাও তা হলফ করে বলতে পারবে না। তাই বলি উন্মাদ হওয়ার আগে একটু ভেবে দেখুন, যে দিনটি নিয়ে এতো হৈচৈ, এতো পাপের মহড়া আসলে তার কোন ভিত্তি আছে কি না? যে দিনটির গোড়ায়ই গলদ তা নিয়ে কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এতো লাফালাফি ও দাপাদাপি করতে পারে না। ব্যাপার কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এ ভুলের মধ্যেও ভুল। যে তারিখে সে জন্ম নিল সে তারিখটি কতজন বাবা-মা আইডি কার্ড, জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট, সার্টিফিকেট ইত্যাদিতে সঠিকভাবে লিখান? স্কুলে ভর্তির সময় প্রায় অভিভাবকরাই বয়স কম লিখিয়ে থাকেন। আবার বেকায়দায় পড়লে অনেকেই বয়স বাড়িয়ে দেন। যাদের মা-বাবা জন্ম তারিখ জানেন না তাদের সন্তানের জন্ম তারিখ অনুমান করে শিক্ষকরাই বসিয়ে দেন। এই হযবরল ও গোঁজামিলের তারিখটাই পরবর্তীতে আইডি কার্ড, জন্ম নিবন্ধন, সার্টিফিকেট ইত্যাদিতে বসিয়ে দেন।
আরও মজার ব্যাপার হলো, গর্ভপাত দিবসকে জন্ম দিবস এবং গর্ভপাত দিবসকে সঠিকভাবে স্মরণ রেখে সঠিক তারিখেই জন্ম দিবস পালন করছে তর্কের খাতিরে এ কথা মানতে আপত্তি না থাকলেও বিপত্তি আছে অন্য জায়গায়। যেমন ধরুন, যে দিনটিতে আপনার সন্তান জন্মেছিল তা ছিল ২০০১ সালের ২০ ডিসেম্বর। বাংলায় ছিল ১৪০৮ সালের ১৯ পৌষ। আর আরবিতে ছিল ১৪২২ হিজরীর ১৮ জুমাদাল উলা। দিনটি ছিল বুধবার। এখন আপনার বিবেককে জিজ্ঞাসা করুন, কোন তারিখটি মানবেন। ইংরেজি, বাংলা, নাকি আরবী। আমরা যেহেতু সকল কিছুতেই ইংরেজপ্রেমী (বোধ করি অনেক মুসলমানের বাচ্চা কাশিটাও ইংরেজিতে দিতে পারলে তৃপ্তি পেত!) তাই মেনে নিলাম জন্ম দিবস ইংরেজি তারিখেই পালন করবেন। আপাতত এই সমস্যার সমাধান হলো কিন্তু ব্যাপারটি তালগোল পাকিয়ে গেছে অন্য জায়গায়। উদাহরণত ২০০১ সালের ২০ ডিসেম্বর ছিল বধুবার। কিন্তু ২০০২ সালের ২০ ডিসেম্বর যে দিনটিতে জন্ম দিবস পালন করছেন তা হলো মঙ্গলবার। এভাবে ২০০৩ সালের ২০ ডিসেম্বর হলো শুক্রবার। এই বিপত্তির সুরাহা করবেন কিভাবে? যে জন্ম দিবস পালনে এত বিপত্তি আর আপত্তি কোন বিবেকবান সুস্থ মানুষ কি শুধুই জাতে উঠার জন্য এই খৃষ্টানী রুসুম পালন করতে পরে? আল্লাহ মালুম হতভগা এই মুসলিম উম্মাহর বোধ উদয় কবে হবে?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।