দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
ফিরোজ আহমাদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
কেউ যদি হযরত রাসূল (সা.) রওজার পাশে দাঁড়িয়ে সালাম প্রদান করেন। হযরত রাসূল (সা.) সরাসরি সালামের জবাব দেন। যত হাজি সাহেবগণ এ পর্যন্ত মদিনা শরীফ গিয়ে হযরত রাসূল (সা.)-এর রওজার সামনে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়েছেন। অনেক হাজী সাহেব হযরত রাসূল (সা.)-এর নিকট প্রদত্ত সালামের উত্তর শুনেননি কিন্তু বিশ্বাস রাখতে হবে যে রাসূল (সা.) সালামের জবাব দিয়েছেন। জীবিতরা পরকালে কোথায় থাকবে এর সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, যারা মহান আল্লাহ ও (তাঁর) রাসূলের আনুগত্য করে, তারা পুণ্যবানদের সাথে থাকবে, যাদের ওপর আল্লাহ পাক প্রচুর নেয়ামত বর্ষণ করেছেন এরা (হচ্ছে) নবী-রাসূল যারা (হেদায়াতের) সত্যতা স্বীকার করেছে, শহীদ ও অন্যান্য নেককার মানুষ সাথী হিসেবে এরা সত্যিই উত্তম। ( সূরা নিসা: ৬৯)।
আমরা যখন কবরের পাশ দিয়ে যাই। আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর বলি। তখন কবরবাসীরা আমাদের সালামের জবাব দিয়ে থাকেন। কবরবাসীরা সালাম প্রদানকারীকে চিনতে পারেন। যারা প্রশান্ত আত্মার অধিকারী তারাও কবরবাসীকে চিনতে পারেন। আমলের উপর যেমন দোযখ-বেহেস্তের ধরন ও মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের ভোগবিলাস নির্ভর করে। তেমনি আত্মার ধরন অনুযায়ী জীবিতও পরস্পরের মধ্যে মৃতদের সাথে কথাবার্তা হয়, ভাব বিনিময় হয়। তবে সকলের সাথে একই ভাষায় একই অবস্থায় কথা বার্তা হয় না। যারা শুধু সিরাতুল মোস্তাকিমের অনুসরণ করবে তারাই শুধু ইহা বুঝতে পারবে।
দুনিয়া ও আখেরাতের সকল রহস্যময় ঘটনা কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু দুনিয়ার মোহ মায়া ব্যবস্ততায় কুরআন নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ হয়ে উঠে না। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, তবে কি এরা কোরআন সম্পর্কে গবেষণা করে না! না কি এদের অন্তর সমূহের উপর তালা ঝুলে আছে? (সূরা মুহাম্মদঃ ২৪)। রূহের দেখা-সাক্ষাৎ বুঝতে হলে কুরআন নিয়ে পড়াশুনা করা প্রয়োজন। আরও ইরশাদ হয়েছে, আসমান ও যমীনে ওর চেয়ে ছোট কিংবা এর চেয়ে বড় কোনো কিছুই নেই যা এ স্পষ্ট গ্রন্থে লিপিবদ্ধ নেই। (সূরা ইউনুস: ৬১)। ধামতী আলিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা হযরত আজিমুদ্দিন আহমাদ (রহ:) তাঁর মারেফাতের মূলতত্ত্ব কিভাবের ৭৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “শর্ষিনার মরহুম পীর কেবলা ছাহেব কোন রাত্রে খাবে আসিয়া আমার নিকট উপস্থিত হইলেন। আমি হুজুরকে জিজ্ঞাসা করিলাম, আপনি কবরে কি হালে আছেন? হুজুর বলিলেন, আমি পাছ-আনফাছের হা’লাতে আছি। তারপর জিজ্ঞাসা করিলাম আপনি কি জন্য আসিয়াছেন? বলিলেন, আমার কতজন মুরীদান লইয়া আপনার নিকট আসিয়াছি। আপনি তাহাদিগকে তা’লীম দিবেন। আমি বলিলাম, হুজুর কোন তরিকায় তালিম দিব? তদুত্তরে তিনি বলিলেন, উহা আপনার ইচ্ছা ”।
কাশফ বা ইন্দ্রিয় শক্তি বিশেষ বিশেষ বান্দার জন্য আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে বিরাট এক নেয়ামত স্বরূপ। এছাড়া যে সকল বান্দাদের কাশফ খোলা তথা অন্তর চক্ষু খোলা থাকে। তাদের লতিফাগুলো সার্বক্ষণিক মোরাকাবা মোশাহেদা অবস্থায় থাকে। কাশফ শক্তির দৃষ্টি ক্ষমতা বিদ্যুতের গতির চেয়ে কয়েক লক্ষাধিক গুণ বেশি। যারা নিজেকে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর উপর সোপর্দ করতে সক্ষম হয়েছে। তারাই ফানাফিল্লাহ ও বাকাবিল্লাহর মোকাম অর্জন করতে অবস্থা সক্ষম হয়েছে। ফানা বাকার মোকামে পৌঁছানো ছাড়া রূহের বুঝা অসম্ভব। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, অবশ্য যে বান্দা আল্লাহর জন্য স্বীয় অস্তিত্বকে বিলিয়ে দেয় এবং সৎকর্মশীল হয়েছে। ফলত তার জন্য তার প্রতিপালকের নিকট প্রতিদান রয়েছে এবং তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা পেরেশানও হবে না। (সূরা বাকারা:১১২)। আল্লাহর দৃষ্টিকে যেমন তাঁর কোনো সৃষ্টি এড়াতে পারে না। তদ্রƒপ আল্লাহর এমন কিছু বান্দা আছেন। যাদের দৃষ্টি কোনো কিছু এড়াতে পারে না। তারা নিজের অস্তিত্বকে আল্লাহর স্বীয় অস্তিত্বে বিলীন করে দিয়েছেন। জাহের বাতেনে তারা একই অবস্থানে থাকে। শুধু স্থানের পরিবর্তন হয়। রূহের সাথে দেখা সাক্ষাতের বিষয়ে আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে। মোরাকাবা মোশাহেদার মাধ্যমে আত্মার উন্নয়ন ঘটিয়ে রূহের পরস্পরের দেখা সাক্ষাতের বিষয়টি অনুধাবনের চেষ্টা করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।