বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আমানতদারীও প্রকৃতপক্ষে সত্যবাদিতা ও সত্যনিষ্ঠারই এক বিশেষ রূপ। বাংলা পরিভাষায় এর মর্মার্থ শুধু এতটুকুই মনে করা হয় যে, কেউ কোনো বস্তু কারো কাছে গচ্ছিত রাখলে তাতে কোনো রকম খেয়ানত করা অবিশ্বস্ততা প্রদর্শন না করা এবং সে লোকের দাবি মোতাবেক বা নিজের থেকে যেমনটি তেমনিভাবে প্রত্যার্পণ করে দেয়া। আর এটিও নিঃসন্দেহে একটি নৈতিক সৎকর্ম।
কিন্তু আরবী ভাষা ও কোরআনি পরিভাষায় আমানতের মর্মার্থ এর চাইতে অনেক বেশি ব্যাপক। যাবতীয় হক ও দায়-দায়িত্ব বিশ্বস্ততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করা এবং প্রত্যেক ধর্তব্য ও বিবেচ্য বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা এর অন্তর্ভুক্ত। আমানতদারীর মর্মার্থের এ ব্যাপকতার কথা মনে রেখে এ প্রসঙ্গে কোরআনে আয়াতগুলোর প্রতি লক্ষ করুন।
সূরা নিসায় বলা হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমাদের কাছে এবং তোমাদের দায়িত্বে যাদের আমানত রয়েছে, সেগুলো তাদেরকে প্রত্যর্পণ করে দাও।’ (সূরা নিসা : আয়াত-৫৮)। সুতরাং এ আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য হলো এই যে, তার কাছে যদি কারো কোনো আমানত (গচ্ছিত থাকে কিংবা কারো সম্পদগত বা অসম্পদগত কোনো হক বা প্রাপ্য থাকে, তবে তা পুরোপুরি বিশ্বস্ততার সাথে পরিশোধ করে দেবে। তা পরিশোধ করতে গিয়ে কোনো রকম খেয়ানত ও শৈথিল্য করবে না।
তেমনিভাবে কারো কোনো গোপনীয়তা জেনে ফেললে, তাকেও আমানত বলেই গণ্য করবে এবং তা ফাঁস করা থেকে বিরত থাকবে। মোট কথা, আমানতের এই কোরআনি নির্দেশ এ ধরনের সমস্ত দিকই অন্তর্ভুক্ত। তদুপরি কোরআন মাজীদে আমানত পরিশোধ সংক্রান্ত এ হুকুম বা নির্দেশ ছাড়াও এর প্রতি এভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে যে, যথাযথভাবে আমানত পরিশোধকারীদেরকে সফলকাম ও জান্নাতি বলে অভিহিত করা হয়েছে।
সুতরাং সূরা মুমিনুন ও সূরা মাআরিজের প্রথম রুকুতে সাফল্যমÐিত ও জান্নাতবাসীদের গুণ-বৈশিষ্ট্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘আর যারা নিজেদের আমানসমূহ ও ওয়াদার প্রতি লক্ষ রাখে।’ (সূরা মুমিনুন : আয়াত-৮, সূরা মাআরিজ : আয়াত-৩২)। কোরআন মাজীদে আমানতদারী গুণের মহিমা প্রকাশ প্রসঙ্গে একে আল্লাহ, নবী-রাসূল এবং আল্লাহর নৈকট্যশীল ফেরেশতা হজরত জিবরাঈল আ. এর বিশেষ গুণ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
সূরা শুআরায় কয়েকজন রাসূলের আলোচনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, তারা তাদের উম্মতদের বলেছেন, ‘ইন্নি লাকুম রাসূলুন আমীন। ফাত্তাকুল্লাহা ওয়া তিয়ুওন।’ অর্থাৎ আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত আমনদার রাসূল। (আমার বিশেষ পয়গাম হলো এই যে), তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনীত নির্দেশাবলির আনুগত্য করো।’ (সূরা শুআরা : আয়াত-১৭৮ ও ১৭৯)। আর কোরআন মাজীদ সম্পর্কেও এই সূরা শুআরাতেই এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘নাযযালা বিহির রুহুল আমীন’। অর্থাৎ, একে (কোরআনকে) নিয়ে রুহুল আমীন (আল্লাহ তায়ালার খাস আমানতদার ফেরেশতা জিবরাঈল) অবতীর্ণ হয়েছেন। (সূরা শুআরা : আয়াত-১৯৩)।
অতএব, আল্লাহ তায়ারার নবী-রাসূল এবং তার নৈকট্যশীল ফেরেশতাদের সাথে সামঞ্জস্য অর্জন, তাদের পবিত্র গুণ-বৈশিষ্ট্য ও চরিত্রে নিজেদের অংশগ্রহণ যাদের কাম্য, তাদের উচিত আমানদারীর গুণ অর্জন করা এবং তাদের দায়িত্বে যাদের যে হক ও দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে তা পুরোপুরি আমানতদারী সহকারে পূরণ করা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।