রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকা প্রাচীন লাউড় রাজ্যের হলহলিয়া গ্রামে দুর্গ খননে মিলছে পাঁচ যুগের সভ্যতার সন্ধ্যান। দেশের ইতিহাসে আবিষ্কৃত এ সকল সভ্যতা যুক্ত হতে যাচ্ছে এমন খবরে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে উচ্ছ্বাস। অপর দিকে, খননের কবলে পড়তে পারে গ্রামের ভূমিহীন ৭০টি পরিবারে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভূমিহীন ৭০টি পরিবার পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে গ্রামের সামনে মানববন্ধন করেছে হলহলিয়া গ্রামের শঙ্কিত ভূমিহীন ৭০টি পরিবার। মানববন্ধনে গ্রামের প্রায় চার শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেয়। মানববন্ধন শেষে প্রতিবেদককে জড়িয়ে গ্রামের নারী পুরুষ কাঁদতে থাকেন। তাদের চোখে মুখে গৃহহারা হওয়ার আতঙ্কের ছাপ। তারা চান খননের কবলে পড়ে বসতভিটা হারালে পুনর্বাসনের গ্যারান্টি। পুরো গ্রাম ঘুরে তাদের আতঙ্কের সত্যতা পাওয়া যায়।
সরেজমিন জানা যায়, হলহলিয়া নামে এ গ্রামে প্রাচীন আমলের রাজবাড়ি ছিল। বাড়ির কোনো চিহ্ন না থাকলেও চারদিকে দেয়ালের চিহ্ন রয়েছে। গ্রামের ভেতরে আছে ইট-পাথরের সংমিশ্রন, আছে প্রাচীন বিল্ডিংয়ের ধ্বংসাবশেষ। অনেক বিল্ডিং মাটির নিচে চাপা পড়ে গেছে কবে কে জানে? পুরো রাজবাড়িটি হলহলিয়া গ্রাম নামে গড়ে উঠেছে। এখানে বাস করে সত্তরটি ভূমিহীন পরিবার। সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নিয়ে তারা এখানে বসতি স্থাপন করে আসছে। সভ্যতা আবিষ্কারের নেশায় গ্রামের এসব প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ ও মাটির নিচে চাপাপড়া বিল্ডিং খনন হলে ভ‚মিহীনদের বসতভিটা হারানোর শঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। খননের প্রস্তুতির লক্ষ্যে তারা গাছপালা, বাঁশঝাড়, টয়লেট, বারান্দা, রান্নাঘর ভেঙে ফেলেছে। ভূক্তভোগীরা রান্নাবান্নার কাজ সারতে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রাকৃতিক কাজ সারতে হচ্ছে খোলা মাঠে। এসব তথ্য জানালেন গ্রামের লোকজন। তবে, এটিও তারা জানিয়েছেন যে, আমরা চাই সভ্যতা আবিস্কার হোক। বিশ্ব আমাদের জানুক। এখানে গড়ে উঠুক, প্রত্মতত্ত্ব পর্যটন কেন্দ্র। তবে যেন খননের আগে পুনর্বাসনের গ্যারান্টি দেয় সরকার। এখন পর্যন্ত সরকারে কাছ থেকে পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত না হওয়ায় তাদের আতঙ্কের মাত্রা বহুগুণ বেড়ে গেছে।
তবে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে পুনর্বাসনের প্রশ্নই উঠে না। যেহেতু কারো বাড়ি উচ্ছেদ হচ্ছে না, যে যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে। তাদের অক্ষত রেখে সভ্যতার নিদর্শন খোঁজা হচ্ছে। একই কথা বলছেন প্রত্ত্মত্ত্ব বিধ ও খননকাজে অংশ নেয়া লোকজন। গ্রামে কথা হয় ৭০ বছরের বৃদ্ধা হালিমা খাতুনের সাথে তিনি বলেন, টয়লেট গেছে, গাছগাছালি কাটছে, রান্নাঘরে যেতে দেয় না। বাড়িঘরও ভাঙবে। আমরা এখন কই যামু? সাংবাদিক সাব, সরকারকে বইলিয়া আমাদের যেন একটু মাথা গোজার ঠাঁই রাখে। এভাবে মিনারা বেগম, জাহের বানু বলেন, আমাদের কোন জমি নাই একখানি ঘর আছে। এই খানি গেলে পানিতে ভাইসা মরমু। গ্রামের মুরব্বি জুনাব আলী, আতাবুর রহমান ও নুর মোহাম্মদ বলেন, ছোট বেলায় পুকুর ও পাটলাই নদীতে কলসি, খাসার জিনিস, পয়সা পাওয়া যেত আমরা এসব নিয়ে খেলতাম। এখন এসব নেই। হলহলিয়া গ্রামে আরো আগে খনন হলে তেমন ক্ষতি হতো না। তখন তেমন, দালানকোঠা ছিল না। এখন অনেক বাড়িঘর নির্মাণ হয়েছে। এসব খনন হলে তো গৃহহীন হওয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। অভাবী ওই লোকগুলোর ঠিকানা তখন কোথায় হবে? আমরা চাই সরকার যেন জনগুরুত্বপূর্ণ মনে করে পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত নেন। একই বক্তব্য দিলেন রহমত আলী, সৈয়দ আহমদও।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুর্নেন্দু দেব বলেন, হলহলিয়ায় খননকাজ চলছে। আমি গিয়ে গ্রামবাসীকে হতাশ না হওয়ার জন্য বলেছি। পুনর্বাসনের কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ আমরা তো তাদের উচ্ছেদ করব না। প্রত্মত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ আঞ্চলিক পরিচালক ড. মো. আতাউর রহমান বলেন, প্রাচীন লাউর রাজ্যের হলহলিয়া গ্রামে চার যুগের সভ্যতার সন্ধান মিলেছে। এক সভ্যতার সাথে আরেক সভ্যতার সংযোগ মিলেছে। এটি হবে প্রত্মত্ত্ব পর্যটন কেন্দ্র। খননকাজ চলমান রয়েছে। আমরা কারো বসতভিটা উচ্ছেদ করব না। বসতভিটা ঠিক রেখেই খনন চলবে এবং কোনো কারণে বাড়িঘর ক্ষতির সম্মুখীন হলে তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।