মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
এম এম খালেদ সাইফুল্লা
চীন, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান ও পাকিন্তানের সঙ্গে সীমান্ত থাকলেও বিএসএফ বা ভারতীয়রা ওইসব সীমান্তে বাংলাদেশের মতো হত্যাকা- চালায় না। উইকিপিডিয়ার এক পরিসংখ্যানে বরং জানানো হয়েছে, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিন বছরে মাত্র ৪৬ জন পাকিস্তানীকে হত্যা করেছে বিএসএফ। তাদের সবাই সামরিক বা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য। অর্থাৎ বাংলাদেশের মতো নিরস্ত্র কোনো সাধারণ পাকিস্তানী নাগরিক নিহত হয়নি।
নিরীহ বাংলাদেশীরা কেবল নিহতই হচ্ছে। চীনসহ অন্য কোনো দেশের সীমান্তেও বিএসএফকে এত বেশি হত্যাকা- চালাতে দেখা যায় না। বিএসএফের যতো বাহাদুরী সবই নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের বেলায়! শান্তি ও বন্ধুত্বের আহ্বানের জবাবে বিএসএফ কেবল হত্যা ও নিষ্ঠুরতার অভিযানকেই ক্রমাগত জোরদার করে চলেছে। গুলির পাশাপাশি তাদের শারীরিক নির্যাতনেও মৃত্যু ঘটছে অনেক বাংলাদেশীর। বহু বাংলাদেশীকে তারা অপহরণ করেও নিয়ে গেছে। এসবই তাদের প্রায় নিয়মিত কর্মকা-ে পরিণত হয়েছে।
আমরা বিএসএফের হত্যাকা- ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোকেই যথেষ্ট মনে করি না। কারণ, ইতিহাসের পর্যালোচনায় প্রমাণিত সত্য হলো, ভারতের সঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের হত্যার পরিবর্তে গ্রেফতার ও হস্তান্তরের ব্যাপারে সমঝোতা ও চুক্তি থাকলেও বিএসএফ সেসবের কিছুই মানছে না। বিজিবি ভারতীয়দের হস্তান্তর করলেও বিএসএফ এখনো দেখামাত্র গুলি করার নীতিই অনুসরণ করে চলেছে। এমন অবস্থার কারণ আসলে হত্যাকা-ের বিচার না হওয়া। বস্তুত কুড়িগ্রামের কিশোরী ফেলানীসহ কোনো একজন বাংলাদেশী হত্যার বিচার ও শাস্তি হয়নি বলেই বিএসএফ আরো বেপরোয়া হয়ে উঠতে পেরেছে। সেজন্যই সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যাকা- কেবল বেড়েই চলেছে। বিএসএফ শুধু হত্যা করছে না, অনেক ক্ষেত্রে নিহতদের লাশও নিয়ে যাচ্ছে ভারতের অভ্যন্তরে। অপহরণও করছে তারা যখন তখন।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বিএসএফের এ ধরনের কর্মকা- আশংকাজনক শুধু নয়, নিঃসন্দেহে ভীতিকরও। আমরা উদ্বিগ্ন এজন্য যে, স্বাধীনতার পর থেকেই বিএসএফ বাংলাদেশের নিরীহ নাগরিকদের হত্যা করে এসেছে। চাষাবাদ করার বা গরুকে ঘাস খাওয়ানোর মতো কোনো জরুরি প্রয়োজনে সীমান্তের কাছাকাছি নিজেদের জমিতে গেলেও বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশীরা। অন্যদিকে সব জেনে-শুনেও ভারতের কাছে বলিষ্ঠভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছে না বর্তমান সরকার। এ অবস্থারই সুযোগ নিচ্ছে বিএসএফ। রীতিমতো টার্গেট করে, ফেলানীর মতো কারো কারো ক্ষেত্রে পয়েন্ট ব্ল্যাংক দূরত্ব থেকে গুলি করেও হত্যা করছে বিএসএফের সন্ত্রাসী সৈনিকরা। বিএসএফ কেন এত বেশি বেপরোয়া হতে পেরেছে তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দেশপ্রেমিক বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতিই এ জন্য দায়ী। এই অভিমতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ থাকতে পারে না। একই কারণে নতজানু অবস্থানে পরিবর্তন ঘটানোর পাশাপাশি আমরা বিজিবিকে শক্তিশালী করার এবং প্রয়োজনে সীমান্তে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার দাবি জানাই। স্মরণ করা দরকার, বিডিআর যখন ছিল তখন বিএসএফ কিন্তু এত বেশি দুঃসাহস দেখাতো না। পাদুয়াসহ সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় মাঝেমধ্যে সমুচিত জবাব দেয়ায় বিডিআরকে বিএসএফ বরং বাঘের মতো ভয় করতো। একই বিএসএফ বর্তমান বিজিবিকে সামান্য পাত্তা পর্যন্ত দিচ্ছে না।
আমরা মনে করি, সরকারের পররাষ্ট্রনীতির সূত্র ধরে সীমান্তে যে অবস্থা চলছে তা দীর্ঘকাল ধরে চলতে দেয়া যায় না। সরকারকে অবশ্যই প্রতিটি হত্যাকা- এবং অপহরণসহ সকল ঘটনার জন্য ভারতের কাছে কঠোর প্রতিবাদ জানাতে হবে। ভারত সাড়া না দিলে এবং বিএসএফের খুনি জওয়ানদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে সরকারকে আন্তর্জাতিক আদালতে নালিশ জানাতে হবে। আমরা চাই, সব মিলিয়ে এমন আয়োজন নিশ্চিত করা হোক, যাতে সীমান্তে আর কোনো হত্যাকা- এবং অপহরণ না ঘটতে পারে। চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত থাকা সত্ত্বেও কোনো সীমান্তেই বিএসএফ বা অন্য কোনো ভারতীয় বাহিনী কেন মানুষ হত্যার সাহস পায় না- তার কারণ লক্ষ্য করলে এবং তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিলেও নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের জীবন বাঁচানো সম্ভব বলে আমরা মনে করি। সেটাই সরকারের দায়িত্বও বটে।
ষ লেখক : যুগ্ম মহাসচিব, কেন্দ্রীয় কমিটি ও সভাপতি, ঢাকা মহানগর, এলডিপি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।