Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্ষীরা চাষে নীরব বিপ্লব

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, মেঘনা থেকে ফিরে : | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:১৯ এএম

কুমিল্লার মেঘনার বুকে অসংখ্য চর। সব মৌসুমেই এসব চরে ক্ষীরার চাষ হয়। তবে শীতকালে ক্ষীরা উৎপাদন হয় একটু বেশি। বিশাল চরে ক্ষীরা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকে।

জানা গেছে, প্রায় ৬০ বছর আগে লুটেরচরে ক্ষীরা চাষের এ নীরব বিপ্লব শুরু হয়। এখন এ বিপ্লব লুঠেরচর ছাড়িয়ে মেঘনার ভাটিতে যেমন বিস্তৃতি ঘটেছে। বিপ্লবের এ ছোঁয়া লেগেছে আশপাশের জনপদেও। শীতে স্থানীয় চরগুলো হয়ে যায় ক্ষীরার চর। মাইলের পর মাইল যত দূর চোখ যায় শুধু দেখা যায় ক্ষীরা আর ক্ষীরার ক্ষেত। দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটার চরের ৫ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে বছরে প্রায় ৮ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি ক্ষীরা উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য ২কোটি টাকারও বেশি। অনেকেই চরে ক্ষীরা চাষের দিকে ঝুকে পড়ে।

ভাটেরচরের মত দাউদকান্দির গঙ্গাপ্রসেদ, বাহেরচর, হাসনাবাদ, গোলাপিরচর, চাঙ্গকান্দি, চরবাউইসা, পশ্চিমকান্দি, বকতারকান্দি, বড়কান্দি, মধ্যকান্দি, দক্ষিণকান্দি, ময়নারকান্দি, টেকপাড়া, শান্তিনগর, নয়াকান্দি, ফরাজেকান্দি, নয়াহাসনাবাদ, দুধগাটা, কুমিল্লার কোরারচর, গুয়াগাইচা, চোদ্দআটিয়সহ বহু এলাকার প্রায় দেড় হাজার পরিবার ক্ষীরা চাষের সঙ্গে জরিত। অনেক চাষি বগুড়া থেকে ৭শ’ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিজ কিনে আনে। আনেক চাষী নিজেই বিজ উৎপাদন করে চাষ করে। শীতকালে কানি প্রতি ক্ষীরা হয় ২০/২২ মন। গরমে এর উৎপাদন কমে আসে। এ সময়ে কানি প্রতি ৭/৮ মন ক্ষীরা উৎপাদন করা যায় বলে স্থানীয় চাষিরা জানায়।

চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিঘা প্রতি খরচ হয় ৩ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয় ৩/৪ হাজার টাকা। বস্তা প্রতি বিক্রি হয় ৩/৪শ টাকা। ক্ষীরা বিক্রির স্থানীয় দু’টি বাজার বাটেরচর ও দক্ষিনকান্দি এলাকায় বিকেলে বসে বাজার। এখান থেকে ট্রাক ও বিভিন্ন যানবাহনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজার গুলোতে ক্ষীরা পাইকারি দরে বিক্রি করা হয়।

আনাচরের ষাটোর্ধ ইব্রাহীম বলেন, গত ৫০/৬০ বছর আগে কিছু মানুষ ক্ষীরা লাগানো শুরু করেন। এখন তো হাজার হাজার মানুষ ক্ষীরা চাষ করে এলাকার মানুষের আয় হয়, সংসার চলে। ক্ষীরা চাষের উপর নির্ভর করে প্রায় ৪৫ গ্রামের মানুষ। এ এলাকার সিংহভাগ মানুষের জীবন জীবিকাই চরগুলোতে ক্ষীরা চাষকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। গঙ্গাপ্রসেদ এলাকার গাফফার মিয়া বলেন, এখানকার চরগুলোতে ক্ষীরা চাষ শুরু হয় সম্ভবত ১৯৩৮ সালের দিকে। আমি তখন ছোট। বাবা চরে ক্ষীরা ক্ষেত করে ভাটেরচর বাজারে নিয়ে বিক্রি করতেন। এখন আমরাও করি।
দুধগাটা গ্রামের পরেশ আলী বাবার পেশার সূত্র ধরে চরে ক্ষীরা চাষের দিকে জড়িয়ে পরেছেন। তিনি বলেন, চরে ক্ষীরা ক্ষেত করে আমরা অভাবী মানুষ দু’ বেলা খাবার জোটাতে পারছি। এইডা আমাগো সুখ।’ আরেক কৃষক চরবাউইস্যা গ্রামের বাচ্চু মিয়া বলেন, আমার বাবাও ক্ষীরা চাষ করতেন। আমি মনে করি ক্ষীরাচাষ আমাদের পূর্ব পূরুষের ঐতিহ্য। আর যাই হোক ক্ষেত করে দুই বেলা পেট ভরে খেতে পারছি। বড়লোক হওয়ার ইচ্ছা আমাদের নেই।

চরাঞ্চলের প্রায় ৪৫ এলাকার মানুষ ক্ষীরা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। মেঘনার লুটেরচর, বাটেরচর, আনারপুরা ও বড়াইকান্দি চরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নারী, পুরুষ ও শিশু ক্ষীরা ক্ষেতে কাজে ব্যস্ত। কেউবা ক্ষীরা তুলছে, কেউ ক্ষীরা বাছাই করছে, আবার কেউবা বস্তায় ভরছে। ভাটাইচরের ক্ষীরা ক্ষেতে কথা হয় আমেনা বেগমের সঙ্গে। তার কথা, আমার বাপ গরিব মানুষ। ক্ষীরা ক্ষেত কইরা চারটা ডাল-ভাত পেটে দিবার পারি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ