Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন তার

সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

 সীতাকুন্ডের শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম রাব্বি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চায়। সে ভাটিয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর শাপলা শাখার ছাত্র। রফিকুলের দু’হাত না থাকলেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন তার চোখে মুখে।

একটি দুর্ঘটনা তার দু’হাত কেঁড়ে নেয়। দু’হাত না থাকলেও মনোবল ছিল অনেক বেশি। এখন সে মুখের সাহায্যে খাতায় লিখে মডেল টেষ্ট পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করেছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গাজী হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, চলতি বছরের ১৮ নভেম্বর রফিকুল সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিবে। ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবরে উপজেলার ভাটিয়ারী পূর্ব হাসনাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. বজলুর রহমানের পুত্র ৫ম শ্রেণীর শিশু শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম রাব্বি বিদ্যালয়ে আসছিল। এসময় ভাটিয়ারী ফুট ওভার ব্রিজের উপর থাকা বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে সে গুরুতর আহত হয়। শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করান। বিদ্যুতের তারে তার শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দু’হাত। পরে ১মাস ১৯দিন চিকিৎসা শেষে সে দু’হাত হারিয়ে আবার সে বাড়িতে চলে আসে। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শারীরিক প্রতিবন্ধী বাহার উদ্দিন রায়হান তাদের বাড়িতে আসেন। রফিকুলের পড়ালেখা করার আগ্রহ দেখে তিনি মুখ দিয়ে লেখা শিখানোর প্রশিক্ষণ দেন এবং স্কুলে লেখাপড়া করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।

প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, রফিকুল অসুস্থ থাকা অবস্থায় আমাদের বিদ্যালয়, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসসহ অনেকেই আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলামের সাথে আলাপকালে সে জানায়, বিজয় স্মরণী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাশেদসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী দুর্ঘটনার সময় তাকে উদ্ধার করে দ্রæত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। পরে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের এক মেধাবী শারীরিক প্রতিবন্ধী তাকে মুখ দিয়ে লিখা না শিখানো হলে সে হয়তো বাসায় বসে বেকার সময় কাটাতে হতো তাকে। তাই তাকে যারা বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে বলে, পড়ালেখা করে উচ্চ শিক্ষিত হতে চাই। কারন আমাকে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ¯েœহকরে। আর ক্লাশের শিক্ষার্থীরাও সার্বক্ষনিক ভাবে বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করে। তার পরেও আমি সামনে এগিয়ে যেতে চাই। তার জন্য সকলের দোয়া সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন।

এদিকে রফিকুলের পিতা মো. বজলুর রহমান ও মা রোজী আক্তার বলেন, আমরা স্বামী ও স্ত্রী দু’জনই দিনমুজুর। কিন্তু ছেলে রফিকুরের অনেক ইচ্ছে সে একদিন উচ্চ শিক্ষিত হয়ে মা, বাবার দুঃখ দূর্দশা দূর করবে। দু’হাত না থাকলেও মুখ দিয়ে অনেক সুন্দর করে লিখতে পারে সে। তাই একটু সহযোগিতা পেলে মুখ দিয়ে লিখে তার প্রতিবন্ধী পুত্র দেশের শুনাম কুড়িয়ে আনতে সক্ষম হবে বলে ধারণা রফিকুলের বাবা ও মায়ের।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ নুরুছোফা ও সহকারি শিক্ষা অফিসার মো. আলাউদ্দিন বলেন, সীতাকুÐে ঝরেপড়া শিশুদের বিদ্যালয় মুখি করার জন্য উপজেলা শিক্ষা প্রশাসন নিয়মিত ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যাতে করে একজন শিক্ষার্থীও যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়। সেসব বিষয়ে বিবেচনা করে মানসম্মত শিক্ষা এবং সমতার প্রতীক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তারই ধারাবাহীকতায় রফিকুলের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। তারা আরো বলেন, সে আমাদের ধারণা পাল্টে দিয়েছে। ইচ্ছে থাকলে মুখ দিয়ে লিখে ভাল ফলাফল করা যায় তারই একমাত্র দৃষ্টান্ত মো. রফিকুল ইসলাাম রাব্বি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বপ্ন

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ