বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নওগাঁয় অসাধু সুদখোর বা দাদন ব্যবসায়ীদের চড়া সুদের ফাঁদে পড়ে একের পর এক পরিবার নি:স্ব হয়ে পড়ছে। এমনকি অসাধু সুদ ব্যবসায়ীদের চড়া সুদের টাকা দিতে না পেরে নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার ইউনিয়নেই আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ৪ জন। এছাড়া এলাকার অনেকেই অসাধু সুদ ব্যবসায়ীদের চড়া সুদের টাকা দিতে না পেরে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সুদ ব্যবসায়ীদের চাহিদামত টাকা দিতে না পারায় অনেকের বিরুদ্ধেই চেকের মামলা দেয়ায় একদিকে মামলার কারণে হচ্ছে হয়রানি শিকার ও জায়গা-জমি হারিয়ে সম্বলহীন হয়ে পড়ছেন একের পর এক পরিবার।
সূত্রে জানা যায়, গত বছর থেকে চলতি জুলাই মাসের মধ্যেই এ ইউনিয়নের ফারাদপুর ও বলিহার গ্রামে অসাধু সুদ ব্যবসায়ীদের চাহিদামত চড়া সুদের টাকা দিতে না পেরে এবং তাদের চাপের মুখে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে ৪ জন। এছাড়া সুদখোর ব্যবসায়ীদের চাহিদা মত টাকা দিতে না পেরে পরিবার ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে আরো ৯ পরিবার।
তারা বলেন, যদি কোন ব্যাক্তি একবার সুদ ব্যবসায়ীদের পাল্লায় পড়েন তাহলে কোন ভাবেই সুদ ব্যবসায়ীদের কাছে খেকে আর রক্ষা পান না। অর্থ সঙ্কটে থাকা বিপদগ্রস্থ লোকজনের অভাব ও সরলতার সুযোগ নিয়ে টাকা দেয়ার সময়ই টাকা গ্রহীতার কাছে থেকে (টাকা ও তারিখের স্থান ফাঁকা) রেখে ব্যাংকের চেকে শুধুমাত্র স্বাক্ষর নেয়াসহ টাকা গ্রহীতার ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি ও সুযোগ পেলে ফাঁকা ষ্ট্যাম্পে ও স্বাক্ষর নিয়ে রাখেন সুদখোররা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন জানান, বর্তমানে নয়া কৌশল হিসেবে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের বিশেষ করে সমবায় এর নিবন্ধন নিয়ে (সমবায় সমিতির সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে) অন্তরালে (সমিতির বাইরে) প্রতি ১০ হাজার টাকার বিপরীতে প্রতি সপ্তাহে ১ হাজার টাকা সুদ নিচ্ছেন তারা। (এতে দেখা যাচ্ছে মাত্র ১০ হাজার টাকা সুদের উপর লাগিয়ে বছরে ৫২ সপ্তাহে ৫২ হাজার টাকা সুদ আদায় করার পর ও আসল ১০ হাজার টাকা ও আদায় করছেন) এক কথায় অসাধু সুদখোরদের বিরুদ্ধে প্রশাসন আইনানুগ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় দিনদিন সুদখোরদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
অসাধু সুদ ব্যবসায়ী ও তাদের লেলিয়ে দেয়া লোকজনের ভয়ে ও চাপের মুখে গলায় দড়ির ফাঁস ও গ্যাস বড়ি খেয়ে গত বছর থেকে চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ৪ জন আত্মহত্যা করেছেন এবং একজন বিধবা নারীসহ ৯ পরিবার পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এছাড়াও দুটি পরিবার ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন বলে জানা গেছে ।
আত্মহত্যাকারীরা হলেন, চৌমাশিয়া বাজারের মেসার্স হক ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী ফারাদপুর গ্রামের যুবক রুবেল হোসেন (২৫), বলিহার (কুরমইল) গ্রামের মৃত নগেন মন্ডলের ছেলে বাদল মন্ডল (৬০) ও একই গ্রামের মৃত সুবাস মালাকারের ছেলে তপন মালাকার (৩৮)। এছাড়া সুদ ব্যবসায়ী ও তাদের লেলিয়ে দেয়া লোকজনের চাপের মুখে পালিয়ে বেড়ানোরা হলেন, বলিহার গ্রামের মৃত নারায়ন প্রাং এর স্ত্রী জোসনা বালা (৩২), বলিহার (কুরমইল) গ্রামের মৃত সন্তোষ সরকারের ছেলে পরিতোষ সরকার (৪৫), ননীহার গ্রামের হাসান আলীর ছেলে বেলাল হোসেন (৩৮), কশবা গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে আহসান হাবিব (৪০), ননীহার গ্রামের মৃত হরেন সরকারের ছেলে নয়ন সরকার (৩৬), প্রল্লাদ এর ছেলে নিবারন (৫০), কুড়মইল গ্রামের মৃত শীতল মন্ডলের ছেলে ভূতনাথ মন্ডল (৪৮), কিসমত কসবা গ্রামের মৃত কিনা রবিদাসের ছেলে মেঘো রবিদাস (৩২) ও ফারাদপুর গ্রামের রামপদর ছেলে উত্তম কুমার মন্ডল (৪৫)। সুদ ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে বলিহার গ্রামের মৃত শিবনাথ কর্মকারের ছেলে দুলাল কর্মকার ভারতে পালিয়ে গেছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
একই রকম ঘটনা জেলার মহাদেবপুর উপজেলার নওহাটামোড় পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় ও ঘটেছে, নওহাটামোড় এলাকার ভীমপুর ইউনিয়নের বটতলি এলাকার একজন ব্যাক্তি জানান, গত বছর তেজপাইন গ্রামের সুদেব চন্দ্র (৪৭) নামের একজন গ্যাস বড়ি খেয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সম্প্রতি নওহাটামোড় চৌমাশিয়া বাজারের ব্যবসায়ী (সাইকেল মেকার) ও চৌমাশিয়া গ্রামের অনিল বৈরাগীর ছেলে বাবু বৈরাগী (৪১) দেশ ছেড়ে ভারতে পাড়ি দিয়েছে বলেও গ্রামের কয়েকজন জানিয়েছেন।
অসাধু সুদ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় নওগাঁর বিভিন্ন এলাকায় দিনদিন সুদ ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফলে সাধারণ লোকজন একের পর এক সর্বশান্ত হয়ে পড়ছে আর অসাধু দাদন বা সুদ ব্যবসায়ীরা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার মত অবৈধ লাখ লাখ টাকার মালিক হচ্ছেন। অবৈধ সুদ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের আশু পদক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।