Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বিনা-১৬ ধান উৎপাদনে রেকর্ড

গোপালগঞ্জ থেকে মো. অহেদুল হক | প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

গোপালগঞ্জে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত নতুন জাতের স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন বিনা-১৬ ধান আমন মৌসুমে উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়েছে। প্রতি হেক্টরে এ জাতের ধান ৬.৬৯ মেট্রিক টন ফলেছে বলে বুধবার বিকেলে কাশিয়ানী উপজেলার পশ্চিম মাঝিগাতি গ্রামের কৃষক হুমায়ূন খন্দকারের জমিতে উৎপাদিত বিনা-১৬ ধান কেটে পরিমাপ করে মাঠ দিবস থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্র আয়োজিত এ মাঠ দিবসে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ফরিদপুর অঞ্চলের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মহিউদ্দিন, গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের ডিডি সমীর কুমার গোস্বামী, জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ব্রক্ষসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন। এতে সভাপতিত্ব করেন গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্রর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শেফাউর রহমান। গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্র জানিয়েছে, এ বছর এ কেন্দ্রের তত্তা¡বধানে গোপালগঞ্জ জেলার ১০০ একর জমিতে ৩০০টি প্রদর্শনী প্লটে এ ধানের আবাদ করা হয়েছে। স্বল্প মেয়াদে সম্পন্ন এ জাতের ধান রোপনের ১০০ দিনের মাথায় কাটা হয়েছে। মাঠ দিবসে এসব প্রদর্শনী প্লটের ধান কেটে পরিমাপ করে প্রতি হেক্টরে এ ধান ৬.৬৯ টন ফলন পাওয়া গেছে। আমন মৌসুমে প্রচলিত জাতের তুলনায় এটি সবচেয়ে বেশি ফলন দিয়ে দেশে নতুন রেকর্ড করেছে। এর আগে এ ধান হেক্টরে ৫.৯৭ টন ফলেছে বলে ওই উপকেন্দ্র জানিয়েছে।

গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার পশ্চিম মাঝিগাতি গ্রামের কৃষক হুমায়ূন খোন্দকার বলেন, এ বছর আমি বিনা-১৬ জাতের ধান আবাদ করেছি। প্রচলিত আমনের তুলনায় এ ধান রেকর্ড পরিমাণ ফলন দিয়েছে। এ ধান প্রচলিত আমনের একমাস আগে কাটা যায়। বাজারে ধানের দাম ভালো পাওয়া যায়। এ ধানের আবাদের পর সরিষা, কলাই বা মসুরের আবাদ করা যায়। আগে আমরা বছরে দুটি ফসল পেতাম। কিন্তু এ ধানের বদৌলতে একই জমিতে বছরে তিন ফসল ফলিয়ে আমরা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারব। এতে আমাদের লাভ হবে। একই গ্রামের কৃষক খন্দকার সিদ্দিক বলেন, প্রচলিত জাতের ধান চাষে লাভ নেই। স্থানীয় আমনে রোগবালই দেখা দেয়। কিন্তু বিনা-১৬ জাতে কোনো রোগ বালাই নেই। কারেন্ট পোকা আক্রমণ করে না। তাই কীটনাশক খরচ লাগে না। ধান হেলে বা ঝরে পড়ে না। অধিক ফলন দেয়। এ জাত চাষ করে আমরা লাভের মুখ দেখেছি। কাশিয়ানী উপজেলার সমসপুর গ্রামের কৃষক মঞ্জুর হোসেন শেখ বলেন, ক্ষেতে উৎপাদিত ধান থেকেই এ ধানের বীজ পরবর্তী বছরের চাষাবাদের জন্য সংরক্ষণ করা যায়। এ ধানের চাল চিকন ও ভাত খেতে সুস্বাদু।
এসব কারণে আমরা আমন মৌসুমে এখন থেকে বিনা-১৬ ধানের আবাদ করব।

গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্রর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শেফাউর রহমান বলেন, লাভজনক শস্য বিন্যাস উদ্ভাবন কর্মসূচির আওতায় গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে ও কৃষি সম্প্রসারণের সহযোগিতায় গোপালগঞ্জে বিনা-১৬ ধানের আবাদ করে কৃষক আমন মৌসুমে সব রেকর্ড ভেঙে হেক্টরে সর্বোচ্চ ৬.৬৯ টন ধান উৎপাদন করেছে। এটি দেশের সর্বোচ্চ ফলন। গত বছর এ ধান ৫.৯৭ টন ফলে ছিল। স্বল্প জীবনকালের এ ধান ক্ষেত থেকে কাটার পর কৃষক একই জমিতে আরো দুটি ফসল ফলাতে পারবেন। এতে গোপালগঞ্জে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে কৃষকের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটবে। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ফরিদপুর অঞ্চলের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মহিউদ্দিন বলেন, গোপালগঞ্জের মাটি খুবই উর্বর। এ জেলার মাটিতে ধান উৎপাদনের সব ধরনের উপাদান বিদ্যমান। ধানে পোকার আক্রমণ কম হয়। এ কারণে এখানে ধানের ফলন বরাবরই ভালো হচ্ছে। বিনা-১৬ রেকর্ড পরিমাণ ফলন দিয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুঁটিয়েছে। এ ধান লাভজনক শস্য বিন্যাসে কৃষককে সহায়তা করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধান


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ