Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর হায়াত-২

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ২ নভেম্বর, ২০১৮

রাসূলে পাক (সা.) এবং আম্বিয়ায়ে কেরাম আপন আপন কবরে বিভিন্ন প্রকার ইবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত আছেন। তবে তাদের এই ইবাদত পার্থিব জগতের ইবাদতের ন্যায় শরীয়ত কর্তৃক প্রদত্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য হিসেবে নয়, বরং শুধুমাত্র আত্মিক প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তির লাভ করা এবং আল্লাহপাকের অধিকতর খোশনুদী অর্জন করাই হলো এর উদ্দেশ্য। এ প্রসঙ্গে বহু হাদীস বর্ণিত আছে। যেমন: (ক) হজরত সুলাইমান তাইমি বলেন, আমি হযরত আনাস রা. কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, আমি হযরত মূসা আ.-এর নিকট দিয়ে গমন করলাম। তিনি কবরে সালাত আদায়ে নিমগ্ন ছিলেন। অন্য বর্ণনায় এই ঘটনাটি মিরাজের রাত্রের ঘটনা বলে উল্লেখ আছে। (সহীহ মুসলিম: খন্ড ২, পৃ. ২৬৮)। (খ) ওফাতের পর আম্বিয়াগণের সালাত বিভিন্ন সময়ে ও বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হয়। কোরআন হাদীসে এর বিবরণ বিদ্যমান আছে। এর দ্বারাই আম্বিয়াগণের মরণোত্তর জীবন প্রমাণিত হয়। (ফাতহুল বারী: খন্ড ১, পৃ. ১৩০)। (গ) হযরত মুসা আ. এর কবরে নামাজ আদায়, মিরাজ রজনীতে বাইতুল মুকাদ্দাসে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইমামতিতে নবীগণের সালাত আদায়, জান্নাতবাসীদের তাসবীহ পাঠ ইত্যাদি দ্বারা তারা পরিতৃপ্তি লাভ করেন। খুশি ও আনন্দের সাথে সময় অতিবাহিত করেন। এগুলোর কোনোটাই তাকলীফ বা বাধ্যতামূলক করণীয় কাজের অন্তর্ভুক্ত নয়, যা দ্বারা আল্লাহপাক বান্দাদের পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকেন। (ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইয়িমাহ: খন্ড ১, পৃ. ৩৫৪)। (ঘ) আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতভুক্ত লোকজন এবং আমাদের মাশায়েখগণের মতে রাসূলুল্লাহ (সা.) কবরে জীবিত আছেন। তার কবরের হায়াতও পার্থিব হায়াতের মতই। কিন্তু তিনি কবরে পার্থিব জীবনের মত মুকাল্লাফ নন। অর্থাৎ শরীয়তের আদেশ নিষেধ তার ওপর কবরে আরোপিত হয় না। এ ধরনের হায়াত কেবলমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা.) ও নবী গণের জন্য নির্ধারিত। (আল মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ: পৃ. ৩৭, ৩৮)।
বস্তুত: রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং অন্যান্য নবী ও রাসূলগণ কবরে যে জীবন লাভ করেছেন, তা এত শক্তিশালী ও পার্থিব হায়াতের সমতুল্য যে, অনেক জাগতিক হুকুম ও তাদের ওফাতের পর কবরদেশে থাকাকালীন তাদের ওপর প্রযোজ্য হয়। যেমন: (ক) নবী পত্নীদের বিবাহ অবৈধ হওয়া। (খ) নবীর সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন না হওয়া। (গ) সালাম প্রদানকারীদের সালাম শ্রবণ করা ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া, তার ইন্তিকালের পর তার সহধর্মিণীদের বিবাহ করা তোমাদের জন্য আদৌ বৈধ নয়। নিশ্চয়ই তোমাদের উক্তরূপ কাজ করা আল্লাহর নিকট বড় অপরাধ। (সূরা আল আহযাব: আয়াত ৩)। (খ) নবী পত্নী বিবাহ নবীর ইন্তিকালের পরও সঠিক ও অক্ষুণ্ন থাকে। (শরহে যুরকানী আলাল মাওয়াহিব: খন্ড ৫, পৃ. ৩৩৪)। (গ) নবী পত্নীদের জন্য কোনো ইদ্দত নেই। কেননা নবী কবরে জীবিত। অনুরূপ হুকুম সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের। (মিরকাত: খন্ড ১১, পৃ. ২৫৬)। (ঘ) এখানে প্রতিবন্ধক হলো এই যে, নবীদের ইন্তেকালের পর তার পরিত্যক্ত সম্পদ উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টিত না হওয়ার কারণ হল হয়ত শর্তের অনুপস্থিতি। অর্থাৎ উত্তরাধিকারীদের মধ্যে উত্তরাধিকারীত্বের গুণ বৈশিষ্ট্য না থাকা অথবা মুরিছের মৃত্যু না হওয়া। আর এটার ভিত্তি ‘নবীগণ কবরে জীবিত’। হাদীস শরীফে অনুরূপই বর্ণিত হয়েছে। (রাসাইলে ইবনে আবেদীন: খন্ড ২, পৃ. ২০২)। (ঙ) হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, যার কুদরতি হাতে আবুল কাসিমের সা. জীবন, অবশ্যই ঈসা ইবনে মারয়াম আ. (কিয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে) অবতরণ করবেন। তিনি যদি আমার কবর পার্শ্বে দাঁড়িয়ে ডাকেন, হে মোহাম্মদ (সা.), অবশ্যই আমি তার ডাকে সাড়া দিব। (মুসনাদে আবু ইয়ালা:খন্ড ৫, পৃ. ৪৯৭)। এতে স্পষ্টত:ই বুঝা যায় যে, ঈসা আ. আকাশ থেকে অবতরণের পর আমাদের নবী মোহাম্মদ (সা.) থেকে সরাসরি আহকাম শিক্ষা করবেন। নবী করিম (সা.) কবর দেশে থেকেই এই শিক্ষাদান কর্ম সম্পাদন করবেন। (রুহুল মায়ানী: খন্ড ২২, পৃ. ৩৫)।



 

Show all comments
  • Md. Yousuf ২ নভেম্বর, ২০১৮, ৯:৩৮ এএম says : 0
    জাজাকা আল্লাহু ! অনেক সুন্দর তথ্যবহুল লেখা।এতে রাসুল (সাঃ) যে হায়াতুন নাবী কথাটি দিবালোকের মত সু স্পষ্ট। কিন্তু তার পরে ও কিছু মুর্খ লোক এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্কে জড়ায়। আরো লেখার আবেদন রইল।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ২ নভেম্বর, ২০১৮, ১০:৫৮ এএম says : 0
    সুবহানাল্লাহ। আল্লাহর মুজিজা । আমরা শেষ নবীর উম্মুত হিসেবে জন্ম গ্রহন করে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন আমরা ঈমান ও আকিদার সাথে জীবন পরিচালিত করতে পারি। আমীন
    Total Reply(0) Reply
  • md jahangir kabir ২ নভেম্বর, ২০১৮, ৬:৩২ পিএম says : 0
    thanks
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফ ৬ নভেম্বর, ২০১৮, ৯:৪৮ এএম says : 0
    আল্লাহ মাওলানা সাহেবকে ও ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে এর উত্তম প্রতিধান প্রধান করুন। আর আমাদের সকলকে হিদায়েত প্রাপ্তদের দল ভুক্ত করুন। আমার প্রিয় নবী (সাঃ) জিন্দা ছিলেণ- আছেন এবং থাকবেন। মৃত্যু তো তাদের যারা আল্লাহ ও তাঁর হাবিব (সাঃ) এর দুশ মন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাসূলে পাক (সা.)
আরও পড়ুন