Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এবার গোটা পূর্ব সুন্দরবন জুড়ে রেড এলার্ট জারি

প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বাগেরহাট (শরণখোলা) উপজেলা সংবাদদাতা : সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের পঁচিশ নম্বর কম্পার্টমেন্টের তুলাতলা ও টেংরা এলাকার আগুন তিন দিনেও সম্পূর্ণ নেভাতে পারেনি বনবিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। প্রায় ৩০ একর বনভূমির বিভিন্ন স্থানে এখনো ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুন্দরী, গেওয়া, বলাসহ অসংখ্য গাছপালা ও লতাগুল্ম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে বন্য প্রাণিও মারা পড়েছে। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া বন সংলগ্ন এলাকার শতাধিক মানুষ স্বেচ্ছায় আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় এবং পানি সরবরাহের সুব্যবস্থা না থাকায় আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। নাশকতার এই আগুন পুরোপুরি কখন নেভানো সম্ভব হবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। এবছরে সংঘটিত চার দফা অগ্নিকান্ডের মধ্যে এটিই ভয়াবহ অগ্নিকান্ড বলে মন্তব্য করেছেন আগুন নেভানোর কাজে অংশগ্রহণকারীরা। তবে, আগুনের তীব্রতা কমে গেছে এবং তা এখন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে বলে দাবী করেছে বন বিভাগ। শুক্রবার দুপুরে বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মো. জহির উদ্দিন আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে, সুন্দরবনে এক মাসে চার দফা অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং বনবিভাগ। গোটা পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ (শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জ) জুড়ে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। জেলে, বাওয়ালী, মৌয়ালদের পাশ-পারমিট এবং বনে সব ধরণের লোক প্রবেশ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে, বিদেশী পর্যটকরা অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার শুধুমাত্র চাঁদপাই রেঞ্জে সবধরনের পাশ-পারমিট বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। শুক্রবার সকাল থেকে গোটা পূর্ব সুন্দরবন জুড়েই এ নির্দেশ জারি করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। এ দুটি রেঞ্জে র‌্যাব ও কোস্টগার্ড সদস্যরা টহলে রয়েছে বলে জানিয়েছে বনবিভাগ।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মো. জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, সুন্দরবন সুরক্ষার স্বার্থে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। সুন্দরবনের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত সব ধরনের পাশ-পারমিট বন্ধ ও সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে যারা পাশ পারমিট নিয়ে সুন্দরবনে অবস্থান করছেন তাদের দ্রুত বন থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্তের পাশাপাশি জিপিএস সিস্টেমের মাধ্যমে আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে। আগুন এখন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক মানিকুজ্জামান মানিক বলেন, বুধবার সন্ধ্যা থেকে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট বিরতি হীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ঘটনাস্থলের প্রায় দুই কিলোমিটার দূর থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে। দমকল কর্মীরা প্রখর তাপদাহে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এজন্য খুলনা ফায়ার সার্ভিস থেকে ১২ সদস্যের একটি দল শুক্রবার সকালে সুন্দরবনে এসে কাজে যোগ দিয়েছেন। তাছাড়া তীব্র বাতাসের কারণে আগুন নেভানোর কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় এখনো ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে আগুন জ্বলে উঠছে। আগুন পুরোপুরি নেভাতে কতো সময় লাগবে তা বলা যাচ্ছেনা। সম্পূর্ণ নিভে না যাওয়া পর্যন্ত দমকল কর্মীরা ঘটনাস্থলে অবস্থান করবেন বলে জানান তিনি।
প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মো. ইউনুছ আলী বলেন, অপরাধীদের বিষয়ে বন অধিদপ্তর জিরো টলারেন্স দেখাবে। যাদের অবহেলায় সুন্দরবনে নাশকতা হচ্ছে সেসব বন কর্মীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সকল বিভাগের সাথে যোগাযোগ রাখছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ