Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্মঘটের জট বন্দরে

২দিনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে লাগবে ২ সপ্তাহ কন্টেইনারের স্তুপ তৈরী পোশাক ও নিটওয়্যার খাতে বেশি ক্ষতি

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার টানা অবরোধে জটের মুখে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় বন্দরে আমদানিকৃত খোলা পণ্য কন্টেইনারের স্তুপ জমেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে পণ্য পরিবহন শুরু হলেও বন্দর ও আশপাশের এলাকার সবকটি সড়কে কন্টেইনারবাহী ভারী যানবাহনের তীব্র জটে বেসামাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জট ছড়িয়ে পড়ে বন্দর থেকে শুরু করে আশপাশের বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো এবং মহাসড়কেও। ফলে বন্দরের ভেতরে বাইরে জটের কারণে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন স্থবির হয়ে পড়েছে।
পরিবহন ধর্মঘটের নামে অনাকাক্সিক্ষত এ পরিস্থিতিতে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরসহ আমদানি-রফতানি ও ব্যবসা-বাণিজ্য তথা দেশের অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে আরও অন্তত দুই সপ্তাহ সময় লাগবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন চট্টগ্রাম বন্দর। আবার নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি। অর্থাৎ মন্ত্রীর ডাকা ধর্মঘটেই অচল হলো দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি চট্টগ্রাম বন্দর। টানা ধর্মঘটে হরতালের চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ী ও আমদানি-রফতানিকারকেরা। কারণ হরতালের সময় রাতের বেলা ঝুঁকি নিয়ে পণ্য পরিবহন করা হতো। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার অবরোধে বন্দরে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন পুরোপুরিই বন্ধ ছিল।
আর এতে করে আমদানি পণ্য বন্দরে আটকা পড়েছে। রফতানি পণ্যও যেতে পারেনি বন্দরে। ফলে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শতভাগ রফতানিমুখী তৈরি পোশাক ও নিটওয়্যার খাতে। ৪৮ ঘণ্টায় কারখানা থেকে পণ্য পরিবহন হয়নি। আবার জাহাজিকরণের জন্য আগে যেসব পণ্য বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনালে রাখা হয়েছিল সেগুলোও বন্দরে যেতে পারেনি। বন্দরে আসা কাঁচামাল পৌঁছতে পারেনি কারখানায়। ফলে উৎপাদনও ব্যাহত হয়েছে। যথাসময়ে পণ্য জাহাজিকরণ না হওয়ায় রফতানি অনিশ্চিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যথাসময়ে পণ্য আনা-নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ কারণে কন্টেইনার রাখার চার্জ, অপেক্ষমান জাহাজের ক্ষতিপূরণ, নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য রপ্তানিতে অনিশ্চয়তাসহ ক্ষতির শেষ নেই। টানা দুই দিনে দেশের অর্থনীতির চরম ক্ষতি হয়েছে। আমদানি-রফতানি দুই দিকেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বন্দর সূত্র জানায়, অবরোধ চলাকালে বন্দরের ভেতরে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামা বিঘ্নিত হয়েছে। ফলে সোমবার বন্দর জেটিতে নতুন কোন জাহাজ ভেড়ানো হয়নি। কোন জাহাজ ছেড়েও যায়নি। অথচ ওইদিন মোট আটটি জাহাজ জেটিতে আসা-যাওয়ার শিডিউল ছিল। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বন্দরে কনটেইনারবাহী প্রাইম মুভার, পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় কার্যত অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ২০ ফুট দীর্ঘ মাত্র ৮৬টি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। আগের দিন যা ছিল ৩ হাজার ১৪২টি। বন্দরে প্রতিদিন আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান, প্রাইম মুভারসহ চার হাজারের মতো ভারী যানবাহন আসা-যাওয়া করে। অবরোধে কোন যানবাহনই পণ্য পরিবহন করেনি।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড ও টার্মিনালে ২০ ফুট দীর্ঘ হিসেবে কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮টি। শেষখবর পাওয়া পর্যন্ত বন্দরে ছিল ৩৮ হাজার ১৯৩টি। এরমধ্যে এফসিএল ড্রাই কন্টেইনার ধারণক্ষমতা ৩৩ হাজার ২৪৮টি, ছিল ৩০ হাজার ৬৮৬টি। এলসিএল (রেফার) এক হাজার ৬২০টি ধারণক্ষমতার বিপরীতে ছিল এক হাজার ৪১৩টি। এফসিএল অফডকগামী কন্টেইনার ছিল এক হাজার ৭০৮টি। সবমিলে আমদানি পণ্য ভর্তি ৩৭ হাজার ৬২০টি কন্টেইনারের ধারণক্ষমতার বিপরীতে ছিল ৩৪ হাজার ৩০২টি। একই অবস্থা খোলা পণ্যের ক্ষেত্রেও। ধর্মঘটের কারণে আমদানিকৃত পণ্যের স্তুপ পড়েছে বন্দরের ইয়ার্ডে। বন্দরে এ জট স্থায়ী না হলেও পরিবহন ধর্মঘটের কারণে জট পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ সময়টাতে স্বাভাবিকভাবে বন্দরে কোন জট থাকে না। কারণ আবহাওয়া অনুকূল রয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও নেই যানজট।
এদিকে পরিবহন ধর্মঘট শেষ হওয়ার পর গতকাল সকাল থেকে বন্দরমুখী ভারী যানবাহনের তীব্র জটলা সৃষ্টি হয়। বন্দরের অদূরে পতেঙ্গায় গড়েওঠা বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনালগুলো থেকে বন্দরমুখী ভারী যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। দেশের সবচেয়ে বড় চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড থেকেও বন্দরমুখী ভারী যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এর ফলে বন্দরকে ঘিরে আশপাশের সড়কগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তীব্র যানজট ছিল। একই অবস্থা বন্দর থেকে শুরু করে ফৌজদারহাট পর্যন্ত (টোল রোড) মহাসড়কে। ভারী যানবাহনের ভিড়ে অচল হয়ে পড়েছে পোর্ট কানেকটিং রোডও। বন্দর এলাকায় যানজটের কারণে স্বাভাবিক পণ্য পরিবহন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
অবরোধ উঠে যাওয়ায় দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও আসাদগঞ্জেও ভারী যানবাহনের ভিড় বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসব বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে শত শত কোটি টাকার পণ্য বেচাকেনা হতো। অবরোধের কারণে তা বন্ধ ছিল। অবরোধ উঠে যাওয়ার পর বেচাকেনা শুরু হলেও তীব্র জটের মুখে পড়েছে এসব বাণিজ্যিক এলাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিবহন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ