পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যাত্রাবাড়ি থানার ২০ গজ দূরে ওভার ব্রীজের নীচে ডেগচিতে রান্না হচ্ছে। দু’টি ডেগচি চুলায়, নীচে আগুন জ্বলছে; পাশের দুই ডেগচি রান্না গরম খাবারের উপর ধোঁয়া উড়ছে। রান্না নিয়ে কয়েকজন পরিবহণ শ্রমিক ব্যাতিব্যস্ত। অদূরে থানার পুরাতন বিল্ডিংয়ের পাশে ছড়িয়ে ছিঁড়িয়ে রয়েছে শতাধিক শ্রমিক। কেউ লুডু খেলছে, কেউ তাস খেলছে, কেউবা আখ চিবাচ্ছে। গতকাল দুপুর আড়াইটায় এ দৃশ্য দেখে মনে হলো যেন পিকনিক করছে। বন-বাদারের বদলে রাজধানী ঢাকা শহরের সবচেয়ে ব্যস্ত সড়কের মাঝখানে পিকনিক! সেটাও আবার থানার সঙ্গে লাগোয়া যায়গায়!! অবিশ্বাস্য হলেও এ দৃশ্য দেখা গেছে। যাত্রাবাড়ি থাকার কয়েক গজ দূরে যাদের জন্য ডেগচিতে রান্না হচ্ছে, কয়েক ঘন্টা আগে তারা শনিরআখড়ায় আট লেন মহাসড়কে ত্রাস করেছে। প্রাইভেট গাড়ী আটকিয়েছে; পুলিশের সামনে সিএনজি ভাংচুর করেছে, স্কুূল-কলেজগামী ছাত্রছাত্রীদের হেনস্তা করেছে। প্রাইভেট কারের গ্লাস ভেঙ্গে ব্যাক্তিগত গাড়ির চালকদের নামিয়ে কান ধরে ওঠবস করিয়েছে। আগের দিন যাত্রীদের পিক-আপ থামিয়ে চালকের মুখে পোড়া মবিল মাখিয়েছে; মারধোর করেছে, ছাত্রীদের নামিয়ে হেনস্তা করেছে।
পুলিশের সামনে যে পরিবহন শ্রমিকরা এই নৈরাজ্যকর বাহাদুরী (!) করেছে; তাদেরই দুপুরের খাবার রান্না হয় যাত্রাবাড়ি থানার সমানে। এ যেন এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। বাস বন্ধ থাকায় ভ্যান, রিক্সার যাতায়াত করছে এবং পথচারীরা যারা ‘যাত্রাবাড়ি থানার পাশে মহাসমারোহে রান্নার এই দৃর্শ দেখছেন তাদের সকলেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। কেউ কেউ কপাল চাপরিয়েছেন। অসুস্থ শিশুকে রিক্সায় নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সময় এ দৃশ্য দেখে এক বয়স্ক মহিলা দেশে সরকার আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন। সড়কে কোনো ধরনের গণপরিবহন না থাকায় বিশেষ করে দিশেহারা হন চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীরা। জীবনের তাগিদে অনেক মানুষ হেঁটে গন্তব্যে যান। অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, ভ্যান, রিকশা চললেও তা যাত্রীর তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। আবার এসব পরিবহনে ভাড়াও নেয়া হয় কয়েকগুণ। জনদুর্ভোগ চরমে উঠলেও এখন পর্যন্ত ধর্মঘট প্রত্যাহারের কোনো আভাস মিলছে না। উল্টো ফের ৯৬ ঘন্টা ধর্মঘটের হুমকি দেয়া হয়েছে।
এর আগে পরিবহন শ্রমিকদের তান্ডবে ৭ বছরের শিশুর মৃত্যুসহ অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। অথচ পুলিশ থাকায় বিশেষ করে দিশেহারা হয় চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীরা। জীবনের তাগিদে অনেক মানুষ হেঁটে গন্তব্যে যান। অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, ভ্যান, রিকশা চললেও তা যাত্রীর তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। আবার এসব পরিবহনে ভাড়াও বেড়েছে কয়েকগুণ। জনদুর্ভোগ চরমে উঠায় সংসদে অবশ্য ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সবখানে নিরব দর্শক। অথচ রাজপথে মিটিং মিছিল হলেই আইন শৃংখলা রক্ষার নামে পুলিশের রুদ্রমুর্তি, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের রাজপথ দখল, হেমলেট বাহিনী, হুন্ডা বাহিনী মিছিলকারীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ার দৃশ্য মানুষ দেখেছে। ৮ দফা দাবি না মানলে ফের ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। ধর্মঘটে যাওয়ার আগে নৌ মন্ত্রীর মদদপুষ্ট শ্রমিক নেতারা এক সপ্তাহ সময় দিতে চান সরকারকে। এই সময়ের মধ্যে নতুন আইনের কয়েকটি ধারা পরিবর্তন করা না হলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ধর্মঘট ডাকা হতে পারে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা।
সারাদেশে চলমান পরিবহন ধর্মঘটে মুখে গতকাল সোমবার ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গাড়ি থেকে নামিয়ে চালকদের কান ধরে ওঠবস করাতে দেখা যায় আন্দোলনকারীদের। আগের ধর্মঘটের প্রথমদিন বিভিন্ন স্থানে সাধারণ চালক ও যাত্রীদের মুখে পোড়া মোবিল মাখিয়ে হয়রানি করেছে শ্রমিকরা। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও শনির আখড়ায় বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত যানবাহন চালকদের কান ধরে ওঠবস করানো হচ্ছে। এসময় সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন চালকদের গাড়ি থেকে নামিয়ে কান ধরে উঠবস করান পরিবহন শ্রমিকরা। রেহাই পায়নি স্কুলছাত্রীরাও। সাংবাদিকসহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেও ছাড় দেয়া হয়নি। ঢাকার গাবতলী, মীরপুর, মালিবাগ, শান্তিনগর, মহাখালী, ধানমন্ডি, ফার্মগেইট, শাহবাগ, মতিঝিল সর্বত্রই প্রায় অভিন্ন দৃশ্য দেখা গেছে। পরিবহন শ্রমিকরা মিছিল করছে, সাধারণ মানুষকে হয়রানী করছে, প্রাইভোট কারের ড্রাইভারদের কান ধরো উঠবস এবং মুখে কালি মেখে দিচ্ছে; পরিবহনের অভাবে সাধারণ মানুষ দূর্বিসহ অবস্থায় তারপরও আইন শৃংখলা বাহিনী নীরব দর্শক। বিভিন্ন স্পটে পথচারী এবং বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বললে তারা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাদের অভিযোগ পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা সারাদেশের মানুষকে জিম্মী করছে; অথচ সরকার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা ও উদ্যোগ নিচ্ছে না। হরতাল অবরোধ হলে সাধারণত সরকার নাগরিকের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে অতিরিক্ত যানবাহন চালানো এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর কড়া নজরদারীতে নামায়। পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে সেটা দেখা যায়নি। পথে সামান্য কয়েকটি বিআরটিসি’র বাস দেখা গেলেও অধিকাংশ বাস রাস্তায় নামানো হয়নি। এর রহস্য কী? ভুক্তভোগীরা মনে করছেন এই রহস্যের নেপথ্যে রয়েছে দুইজন মন্ত্রী। একজন মালিকদের নেতা প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা; অন্যজন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। মূলত পরিবহন শ্রমিকদের চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টির এই কর্মসূচির নেপথ্যে পর্দার আড়ালে রয়েছেন শাহাজান খান। তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি। শাহাজান খান ২০১৫ সালে বিএনপির ৯২ দিন অবরোধ কর্মসূচিতে গুলশানে নিজ অফিসে অবস্থানরত বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের লেলিয়ে দিয়েছিলেন। পরিবহন শ্রমিকদের ব্যবহার করে বিএনপিকে ‘সাইজ’ করার জন্যই শীর্ষ মহল থেকে তিনি সব সময় প্রশ্রয় পেয়ে থাকেন।
যে আইনটি সংশোধনের দাবিতে শ্রমিকদের এই কর্মসূচি সেই আইনটি মন্ত্রিসভায় পাস, আইনটির খসড়ার ওপর আইন মন্ত্রণালয় ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক মতামত গ্রহণ, পরিবহণ শ্রমিকদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক সবখানে শাহাজান খান ছিলেন। অথচ হঠাৎ করে তিনি শ্রমিকদের পথে নামালেন। সচিবালয়ে সাংবাদিকরা এনিয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি দাবী করেন এসবের কিছুই জানেন না। শুধু এবারই নয়, নৌ পরিবহন মন্ত্রী হওয়ার পর তিনি মন্ত্রী হয়েও গত কয়েক বছরে অনেকবার পরিবহন শ্রমিকদের উষ্কে দিয়ে, জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহাণিতে সরকার যখন বিব্রত তখন তিনি ঘোষণা দেন ‘রাস্তার ছাগল ভেঁড়া চিনলেই’ ড্রাইভারদের লাইন্সেস দিতে হবে। বিভিন্ন সময় পরিবহন ও নৌ পরিবহণ ধর্মঘটের সময় তিনি পরিবেশ শান্ত করার পরিবর্তে শ্রমিকদের উষ্কে দিয়ে বিশৃংখলা সৃষ্টিতে সহায়তা করেন। কখনো ‘সর্প হইয়া দংশন/ ওঝা হয়ে ঝাড়া’ প্রবাদের মতো শ্রমিকদের উষ্কে দেন; আবার মন্ত্রী হিসেবে বিরোধ মিটানোর চেস্টা করেন। এমনি কী তিনি দু’বছর আগে একটি টিভির লাইভ টকশোতে একজন সাবেক মন্ত্রীর চোখ উপড়ে নেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। মূলত যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু যখন সকলকে নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে ব্যস্ত, দিনরাত ছুটে চলেছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত, তখন সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদের ঘোষণা দিয়ে ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর গঠিত হয় জাসদ। ওই সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে জাসদ দেশে বিশৃংখল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। সেই জাসদের নেতা শাজাহান খান এখন আওয়ামী লীগ সরকারের নৌ পরিবহন মন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা যখন দেশ গড়ার কাজে মহাব্যস্ত তখন মাঝে মাঝে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেন তিনি। পরিবহণ শ্রমিক আন্দোলন, গ্রার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন, নৌ পরিবহণ শ্রমিক আন্দোলন সব কিছুতেই তিনি ‘আন্দোলনে ঘি’ ঢালেন। কোটা বাতিলের দাবিতে ছাত্রছাত্রীদের কর্মসূচিতেও ঘি ঢালেন। তার এই কর্মকান্ডে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই বিক্ষুব্ধ হলেও কেউ কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না।
পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে শিশু মৃত্যু, ছাত্রী লাঞ্ছনাসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, পরিবহণ শ্রমিকদের আচরণ বড়ই দুঃখজনক ও জাতির জন্য উদ্বেগের। মানুষকে জিম্মি করে এভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা কোনভাবেই কাম্য নয়। তিনি সড়কের নৈরাজ্য বন্ধ করে দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান। পরিবহন শ্রমিকদের পরিবহন ধর্মঘটের নামে নৈরাজ্য ও মানুষকে জিম্মির প্রতিবাদে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জনাব মোঃ ইনসুর আলী এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশন পরিবহণ আইনকে ইস্যু করে এদেশের মানুষকে জিম্মি করে শ্রম আইন পরিপন্থী অবৈধ ধর্মঘট ডেকেছে। অথচ এই পরিবহণ আইন বাংলাদশে সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা উপস্থিত থেকে খসড়া চূড়ান্ত করে পার্লামেন্টে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করে। নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করার জন্য শেখ হাসিনার সরকারকে বিপদে ফেলতে এই বেআইনী ধর্মঘট। তারা পরিবহণ শ্রমিকদের ভিন্ন পথে পরিচালনা করে দেশবাসীর সামনে প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে উপস্থাপন করেছে। বেআইনী ও অবৈধ ধর্মঘট আহ্বানকারী এবং পরিবহণ ভাংচুর, মানুষের মুখে কালি লেপন ও শিশু হত্যার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দেশের বেশক’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, নিয়োগ পরীক্ষা, রোগীসহ এম্বুল্যান্স আটকে দেয়া, অতি জরুরী প্রয়োজনে রাস্তায় বের হলে ব্যাক্তিগত গাড়ীর যাত্রী ও চালকের মুখে কালি লেপন, গ্রামে-গঞ্জে গণপরিবহণের পাশাপাশি মোটরসাইকেল, রিক্সা চলাচলে বাধাদানের কারণে সমগ্র দেশবাসী কতিত পরিবহণ শ্রমিক নামধারী দুবৃর্ত্তদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ছাত্র-ছাত্রী, অসুস্থ রোগীকেও রিক্সা থেকে নামিয়ে দিচ্ছে, নাজেহাল করা হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরব দর্শকের ভুমিকায় দেশবাসী হতাশ হয়েছে। রাস্তায় যাত্রী, পথচারী, ছাত্র-ছাত্রী, অসুস্থ রোগীর পথে পথে চরম দূর্ভোগের পাশপাশি পরিবহণ শ্রমিকদের হাতে লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনায় সরকারের ভাবমুর্তি প্রশ্নের সম্মুখীন। প্রভাবশালী শ্রমিক নেতা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের এমপিরা মুখ না খুললেও জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান সংসদে বলেছেন, পরিবহন ধর্মঘটের নামে সারাদেশে শ্রমিকদের নৈরাজ্য চলছে। অথচ পুলিশ প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। দুই দিন ধরে অবরোধের নামে শ্রমিকদের নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। বিভিন্ন স্থানে যাত্রী ও চালকদের মুখে পোড়া মোবিল মেখে দেয়া হয়েছে। একটি অসুস্থ শিশুকে হাসাপাতালে নেয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেয়ায় শিশুটি মারা গেছে। এই অবরোধে সারাদেশের মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অবরোধের নামে মানুষের আত্মমর্যাদায় যারা আঘাত করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নীরব রয়েছে। এই ঘটনা আমাদের আহত করেছে। আমি এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করছি।
রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যানবাহনের জন্য অফিসগামী যাত্রীরা অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। ঢাকায় শুধু বিআরটিসি ছাড়া আর কোনো গণপরিবহন চোখে পড়েনি। যখনই এ পরিবহনের কোনো গাড়ি আসছে সবাই যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। অনেকে বাধ্য হয়ে বিকশা, অটোরিকশা বা রাইড শেয়ারিং নিচ্ছেন। তবে তাতেও মুক্তি নেই যাত্রীদের। এখানেও তাদের গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বাড়তি ভাড়া।
গুলিস্তানে কথা হয় ব্যবসায়ী আবুল হাসানের সাথে। তিনি বলেন, গুলিস্তান থেকে বারিধারা যাব। কীভাবে যাব জানি না, অফিস তো মিস দেয়া যাবে না। ব্যবসায়ী কাজে গতকাল গুলিস্তান থেকে ভ্যানে রামপুরা, তার পর সেখান থেকে রিকশায় বারিধারা গিয়েছিলাম। ফিরে আসতে আসতে ৫ঘন্টা সময় লেগেছে। টাকা গেছে কয়েকগুন বেশি। একই সাথে সময়ও বেশি লেগেছে। গত দু’টি দিন খুব কষ্টে গেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পরিবহন শ্রমিকদের তান্ডবের দ্বিতীয় দিন রাজধানীর বিভিন্ন স্পট সরেজমিন ঘুরে মানুষের দুভোগের ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। ঘর থেকে বের হয়ে মানুষকে পড়তে হয়েছে দুর্বিসহ যন্ত্রনায়। ২০ টাকা দূরত্বের রিক্সার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। একশ টাকা দূরত্বে সিএনজির ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৫শ থেকে ৬শ টাকা। ভ্যান, উবার, ওভাই যে ভাবে পারছে তিনগুন চারগুন বেশি ভাড়া আদায় করছে। সকাল সাড়ে ১০টায় মৌচাকের সামনে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোঃ হাবিব জানান, সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি, কোনো গাড়ি নেই। সিএনজিতে যেখানে ২৫০ টাকায় মিরপুর যাওয়া যায়, সেখানে আজ তারা সুযোগ পেয়ে ৪০০ টাকা ভাড়া চাইছে। উপায় নেই, তাই বাড়তি ভাড়াতেই মিরপুরে যেতে হবে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে শ্রমিকদের এই আন্দোলনে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফাহমিদা জিগর জাহান নামে সাভারের একজন ফেইসবুকে লিখেছেন, গতকাল রোববার) থেকে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট। পরিবহন শ্রমিকদের দাবি অযৌক্তিক। দেশের মানুষের ভোগান্তি। হেঁটে, রিকশায় ৩২ কিলোমিটার সড়ক চলেছি আজ। দুপুর ১২টায় মালিবাগ থেকে বিমান বন্দর যাবেন হায়দার আলী। রাস্তায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, রাস্তায় বাস নেই দেখে উবার মোটো কল করেছিলাম। সাধারণত যত টাকায় যাই, তার চেয়ে আজকে দ্বিগুণ রেট দেখাচ্ছে অ্যাপে। এক আত্মীয় আসবে বিদেশ থেকে, যত টাকাই দাবি করুক আমাকে যেতেই হবে।
মেরুল বাড্ডা এলাকা থেকে মতিঝিলগামী ব্যাংক কর্মকর্তা ইয়ামিন হোসেন বলেন, বাস না থাকায় তিনি অটোরিকশা ধরার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ভাড়ায় বনেনি। শেষ পর্যন্ত আরেকজনের সঙ্গে শেয়ারে রিকশায় করে অফিসে যেতে হয়েছে। কমলাপুর স্টেশনের সামনে শত শত মানুষের মাঝে দাঁড়িয়েছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুল কাইয়ুম। তিনি যাবেন গুলশান। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও যাওয়ার কোনো ব্যবস্থাই করতে পারলেন না তিনি। সিএনজিচালিত অটোরিকশা যেগুলো যেতে রাজি হচ্ছে তারাও ভাড়া চাচ্ছে অনেক বেশি। ক্ষোভের সাথে তিনি বলেন, কোনো বাস নেই, যাত্রীদের এমন বিপদ বুঝে এরাও ভাড়া বেশি করে চাচ্ছে। মানুষও তাদের কাছে জিম্মি হয়ে বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়াতে যেতে হচ্ছে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, সকালে খুলনার আন্তঃজেলা সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। সারি-সারি দাঁড়িয়ে ছিল বাসগুলো। শিববাড়ি ও রয়্যালের মোড়ের বাস কাউন্টারগুলোর সামনে কোনো বাস ছিল না। কাউন্টারগুলো ছিল বন্ধ। কর্মবিরতির প্রথমদিনের মতো স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বহনকারী মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার চলাচলেও বাধা দেয় শ্রমিকরা। সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল এলাকা ও জিরো পয়েন্ট এলাকায় রাস্তায় লাঠিসোটা হাতে নিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে শ্রমিকরা। অবরোধকারীরা অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখে। বিভিন্ন রাস্তায় বাস রেখে, গাছ ফেলে দড়ি টানিয়ে আটকে রাখে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, আইন বাতিলের জন্য যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের জিম্মি করতেই গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা। এর আগেও বিভিন্ন দাবিতে এভাবেই গাড়ি চলাচল বন্ধ করেছেন শ্রমিকরা। অযৌক্তিক এ পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছেন তারা।
ধর্মঘট ডেকে যারা মানুষকে জিম্মি করছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটেও টানা দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে শ্রমিকদের কর্মবিরতি। দ্বিতীয় দিনে এসে পরিবহন শ্রমিকদের বেপরোয়া আচরণ থামছেই না। তাদেরকে থামানোর কোনও উদ্যোগও নিচ্ছে না প্রশাসন। সোমবার সকাল থেকে নগরীর দক্ষিণ সুরমা এলাকাতে পরিবহন শ্রমিকরা ন্যাক্কারজনক আচরণ করেছেন যাত্রীদের সাথে। তারা রোগীবাহী বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সের পথ আগলে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকরা কোন বাধাই মানছে না। যেকোন মূল্যেই তাদের দাবি আদায়ে তারা ব্যস্ত। তাদের এমন আচরণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। কয়েকজন যাত্রী ক্ষোভের সাথে জানিয়েছেন, পরিবহন শ্রমিকদের থামানো প্রয়োজন। কয়েকদিন পর পর তারা রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। তারা কাউকেই পরোয়া করেনা। এতো ক্ষমতা তারা কোথা থেকে পাচ্ছে? এমন প্রশ্ন অনেকের।
বিশেষ সংবাদদাতা, যশোর ব্যুরো জানায়, পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে একই চিত্র ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। পথে পথে যাত্রীসাধারণের ভোগান্তি চরমে ওঠে। বেনাপোল, দর্শনা, ভোমরায় ভারত প্রত্যাগত পাসপোর্ট যাত্রীরা পড়েন আটকা। যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরা, মেহেরপুর ও সাতক্ষীরার সব রুটে পরিবহন চলাচল করেনি। রোববারের চেয়ে সোমবার সড়ক মহাসড়কে ধর্মঘটী শ্রমিকদের ব্যাপক সোচ্চার থাকতে দেখা গেছে। তারা বাধা দেয় নছিমন, করিমন , ভটভটি ও ইজিবাইক চলাচলে। বিকল্প যানবাহনে চলাচলকারী যাত্রীরা শ্রমিকদের মারমুখী আচরণে দারুণ ক্ষুব্ধ হন।
কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, কুষ্টিয়ায় ধর্মঘটের কারণে ঢাকাগামীসহ সকল রুটে যাত্রীবাহী বাসসহ সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারন মানুষ। এছাড়া সবজি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা ।
শিবচর (মাদারীপুর) সংবাদদাতা জানান, শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি রুটে চরম অচলাবস্থা বিরাজ করছে। পরিবহন সঙ্কটে থমকে দাড়িয়ে আছে ফেরিগুলো। দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা জরুরী কাজে যারে গন্তব্যে যাচ্ছেন তারা সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। হালকা যানবাহনে যাত্রীরা গন্তব্যে পৌছানোর চেষ্টা করছেন। অনেক ট্রাক ঘাটেই অবস্থান করছে। তবে কোন অপ্রীতিকর অবস্থা নেই ঘাটে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।