Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তুঘলকি কান্ড

৮০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয়

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

এমআরআই, সিটি স্ক্যান মেশিনসহ অন্যান্য মেশিনের সার্টিফিকেট অথরাইজেশন জালিয়াতির মাধ্যমে ৮০ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে স্বাস্থ্যখাতের একটি দুষ্টচক্র। মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের ভারী যন্ত্রপাতি ক্রয়ে এ অনিয়মের বিষয়টি উঠে এসেছে। খোদ স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত এ মেডিকেল কলেজের এ অনিয়ম নিয়ে নড়ে চড়ে বসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা ও কালোতালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে। এদিকে জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত কোম্পানিকে কাজ দিতে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এর আগেও চক্রটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিম্নমানের এবং পুরাতন যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র মতে, যন্ত্রপাতি ক্রয়ে জাপানের নামী কোম্পানি ক্যাননের (তোশিবা) অথরাইজেশন লেটার জালিয়াতি করে ৮০ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে এএসএল ঢাকা নামক প্রতিষ্ঠান। যার সত্ত্বাধিকারী আফতাব আহমেদ।
জানা গেছে, মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের ভারী যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য গত ২২ জুলাই প্রকল্প পরিচালক টেন্ডার আহবান করে। টেন্ডারে কয়েকটি গ্রুপ অংশ নেয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রক্রিয়া শেষে দরপত্র জমা পড়ার পরই কয়েকটি প্রস্তুতকারী কোম্পানির কাছ থেকে টেন্ডারে অথরাইজেশন জালিয়াতির তথ্য পান কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজ ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা. মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। তথ্য পেয়েই কয়েকটি গ্রুপে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর দরপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই বাছাই করার উদ্যোগ নেন। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল (পিপিআর) এবং স্ট্যান্ড্যার্ড টেন্ডার ডকুমেন্ট (এসটিডি) মোতাবেক যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ম্যানুফ্যাকচারার অথোরাইজেশন লেটার এবং কোয়ালিটি স্ট্যান্ড্যার্ড সার্টিফিকেট চাওয়া হয়। আর এই অথোরাইজেশন লেটার এবং স্ট্যান্ড্যার্ড সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে নতুন মেশিনের পরিবর্তে কম দামে পুরাতন মেশিন দিয়ে বড় অঙ্কের অর্থ জালিয়াতির চেষ্টা করে এএসএল।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, জাপানি কোম্পানি ক্যানন থেকে একই মেশিন এমআরআই এবং সিটি স্ক্যান মেশিন ক্রয়ের দরদাতা প্রতিষ্ঠান হয়েছে বেঙ্গল সায়েন্টিফিক এন্ড সার্জিক্যাল কোং (বিএসএসসি), ঢাকা এবং এএসএল ঢাকা।
স্ট্যান্ড্যার্র্ড টেন্ডার ডকুমেন্ট (এসটিডি) এর শর্ত মোতাবেক দুইটি প্রতিষ্ঠান জাপানি কোম্পানি ক্যানন (তোশিবা) এর ম্যানুফ্যাকচারার অথোরাইজেশন লেটার এবং কোয়ালিটি স্ট্যান্ড্যার্ড সার্টিফিকেট জমা দেয়। তখন টেকনোলজী নির্বাহী কমিটি (টিইসি) সভায় যাচাই-বাছাই করে সন্দেহের উদ্ভব হলে সত্যতা যাচাই-বাছাইয়ে জাপানের ক্যানন কোম্পানির কাছে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ই-মেইল বার্তা পাঠান।
ই-মেইল এর জবাবে জাপানের ক্যানন জানায়, বেঙ্গল সায়েন্টিফিক এন্ড সার্জিক্যাল কোং (বিএসএসসি), ঢাকা এর দাখিলকৃত ম্যানুফ্যাকচারার অথোরাইজেশন লেটার এবং কোয়ালিটি স্ট্যান্ড্যার্ড সার্টিফিকেট সঠিক এবং এএসএল ঢাকার দাখিলকৃত এমআরআই এবং সিটি স্ক্যান এর ম্যানুফ্যাকচারার অথোরাইজেশন লেটার এবং কোয়ালিটি স্ট্যান্ড্যার্ড সার্টিফিকেট ক্যানন জাপান থেকে দেয়া হয়নি। আর এভাবেই জালিয়াতির স্পষ্ট প্রমান পান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ই-মেইলের এ তথ্য দৈনিক ইনকিলাবের কাছে রয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, গত ১০ অক্টোবর ক্যানন মেডিকেল সিস্টেমস কর্পোরেশনের ইন্টারন্যাশনাল সেলস ডিভিশনের সিনিয়র ম্যানেজার কোহ ইয়ামাদার কাছে ইমেইল পাঠান ডা. মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। কোহ ইয়ামাদা পরের দিনই ফিরতি মেইলে জানান, এএসএল ঢাকা এর দাখিলকৃত কাগজপত্রে স্বাক্ষরকারী সিনিয়র মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ জুনিচি নাকাহাতা নামে কোন ব্যক্তি ক্যাননে নেই। এই ডকুমেন্ট সঠিক নয়। এছাড়া এএসএল ফুড এন্ড ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) সার্টিফিকেটটিও জাল। কারণ এফডিএ সার্টিফিকেট কখনো দুটি প্রডাক্টের এক সঙ্গে দেয় না। পৃথক পৃথকভাবে দেয়। এএসএল এর দাখিলকৃত এমআরআই এবং সিটি স্ক্যানের এফডিএ সার্টিফিকেট একই সঙ্গে প্রদান করা হয়েছে। যা জালিয়াতির বিয়ষটি প্রমাণ করে।
এদিকে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উচ্চমূল্যের এসব স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতি ক্রয় দরপত্রে জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ হওয়ায় এখন বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করছে এএসএল, ঢাকা।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. মোশতাক হাসান ইনকিলাবকে বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। যে প্রতিষ্ঠানটি লোয়েস্ট হয়েছে তারা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে (সিপিটিইউ) আবেদন করেছে। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এসএসএল’র সত্ত্বাধিকারী আফতাব আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, একটি বিদেশী কোম্পানির ট্রেডিং হাউজ থেকে যন্ত্রপাতির অথরাইজেশন সার্টিফিকেট আনা হয়েছে। তবে বিদেশী কোম্পানি সাপ্লাইয়ারকে এটা দিতেই পারে। তাই সঠিক উপায়েই সার্টিফিকেট আনা হয়েছে। তিনি জানান, জাপানের প্রতিষ্ঠান ক্যাননেরই (তোশিবা) সিঙ্গাপুরের ট্রেডিং হাউজ এই সার্টিফিকেট দিয়েছে। একই সঙ্গে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের বিষয়টি ইতোমধ্যে স্থগিত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন আফতাব আহমেদ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বাস্থ্য


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ