পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গণতান্ত্রিক দেশকে জঙ্গলের শাসন কায়েম করা হয়েছে অভিযোগ করে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের আহবায়ক আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেছেন, এখন যা হচ্ছে ৪৭ বছরের ইতিহাসে এইসব দেখি নাই। ৮০ বছরের বয়সে এইসব দেখে আমাকে অপমানিত করা হচ্ছে। এটা তো কোনো রাজার শাসনের দেশ নয়। আদালত জামিন দিয়েছে অথচ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এসব কি শুরু হয়েছে, একটি সভ্য দেশকে জঙ্গল বানানো হচ্ছে। এইসব তো জঙ্গলীরাও করেনি। বিনা কারণে কেন এই সরকার এ্ইগুলো করছে। আমি মনে করি তাদের (সরকারের) মাথা খারাপ হয়েছে গেছে। সংবিধানে আছে যারা দেশ শাসন করার সময় মাথা খারাপ হয়ে যায়; তাদেরকে অতিদ্রুত পরীক্ষা করা হয়।
আমি মনে করি একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তাদের পরীক্ষা করা হোক। গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে বলছি, কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী বলে না সবাই মামলা করো মামলা করো। এদেশে তাই ঘটছে। আইনমন্ত্রী তুমি বুঝাও যে এইগুলো কথা বলা যায় না। ড. কামাল হোসেন বলেন, মইনুল হোসেন একজন আইনজীবী। সরকার ভালভাবে তাঁকে চিনেন। তাকে জেলে পাঠানো হয়েছে কেন কেন উত্তর চাই। এই সরকারের নাকি তথাকথিত একজন আইনমন্ত্রী আছে; তোমার কাছে আমি জবাব চাই। তুমি একজন আমার জুনিয়র আইনজীবী। তোমার বাবাও একজন আইনজীবী ছিলেন। তিনি আমার বন্ধু ছিলেন। তুমি কি হয়ে গেছো? তিনি আরো বলেন, আইনমন্ত্রী তুমি তো আমার জুনিয়র। তুমি (আইনমন্ত্রী) হয়ে আইন ভুলে গেছো। কোন গ্রাউন্ডে মইনুলকে জেলে রাখা হয়েছে। দেশকে চরম স্বৈরাতন্ত্রে পরিণত করেছো। যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে এটা গণতন্ত্র নয়। যার চাকরি করছো তাকে বুঝাও। গণতন্ত্র মানে যা ইচ্ছা তাই করতে পার না। এটা আমাদের সংবিধানে ক্ষমতা দেননি। কেন কেন মইনুল হোসেনকে জেলে রাখা হয়েছে এটা জানতে চাই। আমরা জানতে চাই মইনুল হোসেনকে অপমান করে কে? কেন বন্দী করা হয়েছে কেন কেন জানতে চাই।
ড. কামাল হোসেন বলেন, যেটি শুনি যে মানহানি। এটি তো জামিন দিয়েছে। আর কত মামলা করবে। এটা খুব লজ্জাকর। অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে বলছি, প্রধানমন্ত্রী কোন দেশে বলে না সবাই মামলা করো মামলা করো। আইনমন্ত্রী তুমি বুঝাও যে এইগুলো কথা বলা যায় না। বোঝানো ক্ষমতা না থাকলে আমরা সাহায্য করবো। বই পড়ে তোমাকে দেখাবো। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাবো। ৪৭ বছরের ইতিহাসে এইসব দেখি নাই। আজ আমার ৮০ বছরের বয়সে এইসব দেখে আমাকে অপমানিত করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের সামান্য কর্মী ছিলাম। এইগুলো তো আওয়ামী লীগের কাজ নয়। এইসব করে কি বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে? যার স্বাক্ষর আমাদের সংবিধানে ১ নম্বরে রয়েছে। আইনমন্ত্রী তুমি দেখ। তুমি তো শপথ নিয়েছে। আইনে শাসনের জন্য। এটা সংবিধাণে লেখা আছে।
কামাল হোসেন আরো বলেন, কি শুরু হয়েছে এটা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। ৪৭ বছর এইসব কি দেখার কথা। আইনমন্ত্রী আমাকে বুঝাও। হচ্ছেটা কি মন্ত্রী হলে কি সব ভুলে যেতে হবে। আমি ক্ষুদ্র মানুষ। তিনি বলেন, তথাকথিত পার্লামেন্ট আছে কোথায় আছে আরো দুই দিন আছে, দাঁড়িয়ে বক্তব্য দাও। নম্বর ঘন ঘন গ্রেফতার, মানহানীর মামলা, একই মামলা ওই মামলা সন্ধ্যার পরে গ্রেফতার। এটা কি নিয়ম আছে রাতে গ্রেফতার করতে হবে? তিনি কি অন্য জায়গার চলে যাবেন। জামিন যোগ্য মামলা। আইনমন্ত্রী অন্য কিছু না জানলে....? তুমি কি জান? বেইল অফেরনস বিষয়টি বুঝাও। যার চাকরি কর তাকে বুঝাও। না বুঝার কারণ নাই। আইনমন্ত্রী; কি হয়েছে তোমার? মন্ত্রী হলে কি সব ভুলে যেত হয়। সকালে বেইল হয়েছে। দুইটি বেইল হয়েছে। সন্ধার পরে কেন গ্রেফতার। গ্রেফতারের পরে কেন জেলে নিয়ে যাওয়া হল। পরের দিন সকালে করা যেত না। এটাকে বলে মেলাফাইডে (উদ্দেশ্য প্রণোদিত)। এটার অর্থ বুঝ? এটা তোমার মেলাফাইডে (উদ্দেশ্য প্রণোদিত) প্রমাণিত। হ্যান্ডেড র্পাসেন্ট প্রমাণিত। আজকে না হয় কালকে ১০ বছরের পরে না হয় দ্রæত তোমার বিচার হবে। আমাদেরকে মেরে ফেলতে পার। তিনি বলেন, গায়েবি মামলা, এটা কী? সিলেটে দেখলাম, কোন কারণ ছাড়াই গ্রেফতার করা হচ্ছে। এটা বন্ধ করো। সাত দফা দাবি মানতেই হবে। এটা তো রাজার দেশ না, যে যা বলবা তাই হবে। আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ফ্যাসিবাদের পতন হবেই। ফিল্ড মার্শাল দেখেছি না। তিনি আরো বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক কয়েজন সভাপতিকে এক সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় এরশাদের সময় সময়। মাঝে মাঝে জানোয়ার মাথা চাড়া দেয়। এটা প্রথম কোন জানোয়ার নয়। এর আগেও জানোয়ার দেখেছি।
কামাল হোসেন বলেন, আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ হন দেশের ন্যায অধিকারের জর্য। আজও ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। আইনমন্ত্রীকে বলব আপনি চোখ খুলে দেখুন দেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মিটিং করতে হলে অনুমতি নিতে হবে। অবাক রাগে। প্রশাসনের আজ সভ্য মানুষ আছে। তোমরা (সরকার) অসভ্য বানাচ্ছো। তারা বলেন, উপরের আদেশ। আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর উপরে আর কে আছে। আমরা চাই সময়মতো নির্বাচন হোক। নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। আমাদের দাবিগুলো ২০০৬ সালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখে কথা। আপনি বলেছিলেন। সরকারের থাকলে একরকম কথা আর বিরোধী জোটে থাকলে অন্যরকম কথা এটা হতে পারে না।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, জাতীয় ঐক্য ফ্রণ্ট গঠনের পর সরকার বিচলিত হয়ে গেছে। সুষ্ঠ নির্বাচন হলে সরকারের পতন অনিবার্য। যে কোন সরকারের পতনের জন্য প্রয়োজন ঐক্য। আজ সেই ঐক্য হয়ে গেছে।
বার কাউন্সিলেল সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, গণতন্ত্রের সাহসী সন্তান ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। অবৈধ প্রধানমন্ত্রী মামলা করার উসকানি দেয়ার পরেই একটি মানহানি মামলায় গ্রেফতার করা হয়। এই মামলা জামিনযোগ্য হলেও তাকে জামিন না দিয়ে সাধারণ কয়েদির সাথে রাখা হয়েছে। এই সরকার একটি জলন্ত অগ্নিগিরির উপর বসে আছে। যেকোন সময় সরকারের পতন হবে। গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, সরকার ফিটনেস ও লাইসেন্সহীন।ফিটনেসবিহীন সরকার মানা যায় না। সরকারের মাথা ঠিক নাই। বিচার বিভাগ সরকারের অনুগত হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সৈরাচার নয় ফ্যাসীবাদীতে পরিণত হয়েছে বর্তমান সরকার। বাংলাদেশকে কারাগারে পরিণত করতে চায়।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের আহŸায়ক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এবং আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা খান, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, অ্যাডভোকেট জালাল হোসেন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট গরীবে নেওয়াজ, অ্যাডভোকেট এসএম কামাল হোসেন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট শফি উদ্দিন ভূইয়া, অ্যাডভোকেট কে এম জাবের, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম, অ্যাডভোকেট মনির হোসেন, অ্যাডভোকেট গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল, অ্যাডভোকেট ড. মেহেদী, অ্যাডভোকেট শরীফ ইউ আহমেদ, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন ও অ্যাডভোকেট মতিলাল বেপারী প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক খান, মহসিন মিয়া, ইকবাল হোসেন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, আজাদ মাহবুব, গোলাম রহমান ভুইয়া, গোলাম মোস্তাফা, ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান, কাজী জয়নাল, মির্জা আল মাহমুদ, সগীর হোসেন লিয়ন, শেখ তাহসীন আলী, মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
আলোচনা শেষে আইনজীবী ঐক্য ফ্রন্টের আহŸায়ক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সভাপতি খালেদার মুক্তি ও তারেকের সাজা বাতিল সহ আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের সাতটি ঘোষণা দেন। সভাপতির বক্তব্যে জয়নুল আবেদীন বলেন, জাতীয় ঐক্যফন্টের আহŸায়ক ড. কামাল হোসেনের নির্দেশে নির্দেশিত হয়ে সাতটি ঘোষণা দিচ্ছি। এসব হলো-
১. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে আমরা খালেদা জিয়াসহ সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের মুক্তি দাবি করছি। তারেক রহমানের মামলা সাজা বাতিল করতে হবে।
২. জনগণ ভোটের মালিক, তাদের অধিকার তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
৩. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নিরপেক্ষ সরকার ঘোষণা করতে হবে।
৪. আইনের শাসন কায়েম করতে হবে।
৫. বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
৬. সুপ্রিম কোর্ট সহ সকল জেলা আইনজীবী সমিতিতে জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট ৭ দিনের মধ্যে গঠন করতে হবে।
৭. সারা বাংলাদেশের আইনজীবীদের নিয়ে একটি মহাসমাবেশ করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।