Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আজ সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল এখনো অরক্ষিত উপকূল

প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এস এম ফরিদুল আলম
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল। বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর উপকূলে এ রাতে আঘাত হেনেছিল মহাপ্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। লাশের পর লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল চারদিকে। বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। পরদিন বিশ্ব অবাক হয়ে গিয়েছিল সেইদিনের ধ্বংসলীলা দেখে। কেঁপে উঠেছিল বিবেক। সহায় সম্বল ও স্বজনহারা উপকূলের কিছু মানুষ পেয়েছিলেন নবজন্ম। এত বছর পর কেমন আছেন তারা।
২৫ বছর আগের এই দিনে মহাপ্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে বিলীন হয়ে গিয়েছিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকার প্রায় আড়াইশ কিমি বেড়িবাঁধ। বিশেষ করে আমার জন্মস্থান বাঁশখালী উপকূলীয় ৩নং খানখানাবাদ ইউনিয়নসহ অপর ৯টি উপকূলীয়  ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নের বেড়িবাঁধও মাটির সাথে মিশে গিয়েছিল। এখন চলছে ঝড়, বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় মৌসুম। আবাহওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে  এপ্রিল-মে, জুন মাসে একাধিক নিম্নচাপের আশংকার কথা প্রকাশ করেছে। কিন্তু এখনো সম্পূর্ণ অরক্ষিত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার উপকূল অঞ্চলসমূহ। বাংলদেশের অন্যতম সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামের বন্দর নগরীর পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুন্ড, মিরসরাই, সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালীসহ উপকূলীয় অঞ্চলের লোকজন এখনো রয়েছে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্কে।
’৯১ সালে এই ভয়াল রাতে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ফলে এসব এলাকায় ব্যাপক প্রাণহানী ঘটলেও এখনো সেখানে নির্মিত হয়নি স্থায়ী বেড়িবাঁধ। তবে গত বছরের ১৯ মে বাঁশখালী উপকূলীয় ৬টি ইউনিয়নে ১৪ কিমি বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য একনেকের সভায় ২১০ কোটি টাকা পরবর্তী সময়ে তা বর্ধিত করে ২৫৫ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে মর্মে দৈনিক পত্রিকা সূত্রে জানতে পারি, তৎজন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। উপকূলবাসী উপর্যুপরি দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারের লোনাপানি ঢুকে পড়ছে। বাঁশখালীর বিস্তৃর্ণ উপকূলীয় এলাকা বিশেষ করে প্রেমাশিয়া গ্রাম ও অন্যান্য গ্রামে মৎস্য চাষ ও আউশের ক্ষতিসহ বহু বসতঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় উপকূলীয় ইউনিয়নগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। অপরদিকে উত্তর প্রেমাশিয়ার প্রাক্তন জেলা ও দায়রা জজ ফজলুল করিম সাহেবের বাড়ী সংলগ্ন এলাকাটির হাজার হাজার জনগণকে বিগত ৪১ বছর ধরে ওয়াবদার বেড়িবাঁধের বাইরে রাখায় ঐ এলাকার মানুষ অত্যন্ত ভয়াবহভাবে বঙ্গোপসাগরের লবণাক্ত জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এসব এলাকায় চাষাবাদতো বিগত ৩ যুগের অধিক কাল ধরে হচ্ছেই না। উত্তর প্রেমাশিয়া, দক্ষিণ প্রেমাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটোসহ একাধিক মাদ্রাসা তিনটি সাইক্লোন সেল্টারসহ, মসজিদ, মন্দির, শ্মশান, কবরস্থান, সরকারি, বেসরকারি অনেক অবকাঠামো নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। মোদ্দাকথা প্রেমাশিয়া ও পশ্চিম রায়ছটার জনগণ ওয়াপদার আওতায় না থাকাতে বেশি ক্ষতি হচ্ছে।  তাই উক্ত বরাদ্দকৃত অর্থের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় এলাকাবাসীর খুবই উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠায় আছে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি ইতিবাচক জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। নচেৎ ’৯১ এর পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলেও অভিজ্ঞ মহল আশংকা ব্যক্ত করছেন। তাই অবিলম্বে অত্র এলাকার জনগণের জানমাল সম্পদ রক্ষার্থে ওয়াপদার আওতাভুক্ত করে ওয়াপদা বাঁধ নির্মাণ জনস্বার্থে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। অতীতে লক্ষ করা গেছে বাঁধ নির্মাণ ঘোর বর্ষাকালে উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের পানি ঠেকাতে রিং বাঁধ নির্মাণ, মেরামত, সংস্কার ইত্যাদি নানা নামে প্রতি বছরই নেয়া হয় বিভিন্ন প্রকল্প। কিন্তু এসব প্রকল্পে ঘটে সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ নয় ছয়-এর ঘটনা। নিরীহ উপকূলবাসীর মা-বোনদের জীবনের ভাগ্য নিয়ে চলে নানান খেলা। লুটেরাদের পেটে চলে যায় বরাদ্দকৃত অর্থের সিংহভাগ।
বর্ষা এলে ভেঙ্গে যায় বাঁধ, আবারো নতুন নতুন প্রকল্পের নামে আসে নতুন বরাদ্দ। এভাবে বছরের পর বছর উপকূলীয় বাঁধের কাজের নামে চলে আসছে সরকারি অর্থের অপচয় ও আত্মসাৎ। বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্বের শতকরা ৮০ শতাংশ অর্থ যোগানদানকারী বাণিজ্যিক রাজধানী অন্যতম সমুদ্র বন্দর শহর রক্ষা বাঁধ হিসেবে পরিচিত বন্দর নগরীর পতেঙ্গা বেড়িবাঁধটি এখনো স্থায়ী ও টেকসইভাবে নির্মিত হয়নি। ৯১ সালের মহাপ্রলংকারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে এ বাঁধটি ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছিল নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, শিল্পকারখানা ও স্থাপনার, বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকার বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ বর্ষার পূর্বে সংস্কারের দাবি জানিয়ে এলেও অদ্যাবধি কোন ইতিবাচক সংবাদ আসেনি বলে এলাকাবাসী আতংকগ্রস্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। অপরদিকে প্রেমাশিয়ার কৃতীসন্তান অস্ট্রেলিয়ায় অধ্যাপনায় নিয়োজিত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আরিফ মঈনুদ্দীন সিদ্দিকী অতীব দুঃখের সাথে বলেন যে, একটি টেকসই স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী থাকলেও আজও তা পূরণ হয়নি এবং এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
তবে এখনও স্বজন হারানোর বেদনায় কাতর হয়ে উঠে উপকূলীয় এলাকার মানুষ, অপরদিকে বেড়িবাঁধ নির্মাণের নামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাতা কলমে একাধিক প্রকল্প রেকর্ড হয়েছে আর সরকারি অর্থের খরচ দেখানো প্রচুর। কিন্তু আদৌ পুরোপুরি অরক্ষিত উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে এখনো ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে তাদের চালিয়ে যেতে হয় অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ।
লেখক : আজীবন সদস্য, উপকূলীয় উন্নয়ন ফাউন্ডেশন



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আজ সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল এখনো অরক্ষিত উপকূল
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ