Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এক মাসে চার দফা অগ্নিকান্ড, তদন্ত কমিটি গঠন নাশকতার আগুনে পুড়ছে সুন্দরবন

প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বাগেরহাট (শরণখোলা) উপজেলা সংবাদদাতা : পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের গহীন অরণ্যে নাশকতার আগুন ৩০ ঘন্টায়ও নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হয়নি। বুধবার বিকেলে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের আড়ুয়ার খাল সংলগ্ন তুলাতলা- টেংরার বিল এলাকার ২৫ নম্বার কম্পার্টমেন্টে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠে। আগুন যাতে গোটা বনে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য বুধবার সন্ধ্যা থেকে ফায়ার লাইন কাটার কাজ শুরু করে বনবিভাগ।
রাত ৮টার দিকে দুর্ঘটনাস্থলে পৌছায় ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট। ফায়ার সার্ভিসের বাগেরহাট, শরণখোলা, মংলা ও মোরেলগঞ্জের ওই চার ইউনিট সারা রাত ধরে পাইপ বসানোর কাজ করে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয় আগুন নেভানোর মূল কাজ। পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলেও দুপুর পর্যন্ত তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে আসেনি। আগুন বিভিন্ন স্থানে থেকে থেকে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠছে। ইতিমধ্যেই পুড়ে গেছে কয়েক একর বনভূমি। দুর্ঘটনাস্থলে থাকা বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের ডিএডি মানিকুজ্জামান দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে পরিকল্পিতভাবে বনে আগুন দেয়ার সাথে জড়িতদের চিহিৃত করাসহ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে চাঁদপাই রেঞ্জের এসিএফ মো. বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম জানান, এবারের নাশকতার আগুনের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঘটনাস্থলে তদন্ত কাজ শুরু করেছে।
সুন্দরবনে বার বার আগুন লাগার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশন’র চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, এক মাসে ৪ বার আগুন লাগার ঘটনা পরিকল্পিত। সুন্দরবনে শুধু অগ্নিকান্ডই নয়, প্রতিনিয়ত বিষ দিয়ে মাছ ধরা, বাঘ-হরিণ শিকার ও গাছ পাচারসহ নানা ধরণের অপরাধমুলক কর্মকাণ্ড চলছে। যার অধিকাংশই দৃশ্যমান না হওয়ায় মিডিয়াতে আসছে না। যা সম্পূর্ণ ভাবে গোপন থাকছে। আর আগুন লাগার বিষয়টি দৃশ্যমান হওয়াতে বারবার এটি মিডিয়াতে আসার পরও বন সন্নিহিত লোকালয় বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জের শাসক দলের কতিপয় জনপ্রতিনিধি এবং তাদের আশ্রিত দূর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, সুন্দরবন রক্ষার স্বার্থের বনে অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করা প্রয়োজন। কারণ বন জুড়ে যা হচ্ছে সবই অবৈধ, বেআইনি ও পরিকল্পিত। তাই এই বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন সুরক্ষায় এখন থেকেই সকলকে সম্মিলিত ভাবে এগিয়ে আসা এবং কাজ করা প্রয়োজন।
শরণখোলা উপজেলার স্থানীয় ধানসাগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেন বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, এখনো আগুনের কুণ্ডলী দেখে মনে হচ্ছে গত কয়েক বারের লাগা আগুনের চেয়ে এবার বড় ধরনের অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। কারেন্ট জাল ব্যবহার করে বনের মৌসুমি মাছ শিকারিরা এ অগ্নিকান্ড ঘটায় বলে ধারণ করা হচ্ছে।
খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মো. জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, সুন্দরবেনর বিলে অবৈধভাবে যারা মাছ শিকার করে তার্ইা বনে আগুন লাগিয়েছে। এই চক্র যতো শক্তিশালী হোক তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। তিনি জানান, আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে বনবিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও এলাকাবাসী প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। এ ঘটনায় গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সুন্দরবন সন্নিহিত পাঁচ জেলার সাংবাদিকদের সংগঠন ‘সুন্দরবন সাংবাদিক ফোরাম’ এর আহবায়ক মো. মনিরুজ্জামান নসিম আলী ও সদস্য সচিব শেখ আহসানুল করিম বনে বার বার অগ্নিকান্ডে গবীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, সুন্দরবনের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে লোক চলাচল ও বনের সব ধরণের সম্পদ আহরণ বন্ধ করাসহ এসব দুষ্কর্মের সাথে জড়িত সব পক্ষকে দ্রুত বিচার আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৮ মার্চ এবং ১৩ ও ১৮ এপ্রিল লাগা আগুনে বনের ব্যাপক এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ১২ ও ১৮ এপ্রিল এ দুটি নাশকতার আগুনের ঘটনায় শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. শাহজাহান হাওলাদার ওরফে শাহজাহান শিকারিসহ শাসক দলের স্থানীয় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে সুন্দরবন বিভাগ পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে। মামলা হলেও শরণখোলা থানা পুলিশ আজ পর্যন্ত তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ