বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
হারুন-আর-রশিদ
বাংলাদেশে এখন প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। মানুষের জীবনের মূল্য এখন কীটপতঙ্গের চেয়ে অধম। ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে দ্রুত লয়ে। কাসিমপুর কারাগারের রক্ষী খুন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খুনের পর রাজধানী ঢাকার কলাবাগানের ঘরে ঢুকে জোড়া খুনের ঘটনা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে। তাছাড়া চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক পেরিয়ে গেছে। আর যারা এভাবে নিহত হচ্ছে তাদের বেশির ভাগই নিরীহ ও সাধারণ গ্রামবাসী। ইউনিয়ন পরিষদের ছয় ধাপের নির্বাচনে প্রথম তিন ধাপে অর্ধশতাধিক আমজনতার মৃত্যুও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে কোনো বিষয় নয়। দেশের গ্রাম পর্যায়ের নির্বাচনের অবস্থা যদি এরকম হয় তাহলে বর্তমান নির্বাচন কমিশনারের অধীনে জাতীয় পর্যায়ের বড় নির্বাচনে নিহতের সংখ্যা যে হাজার ছাড়িয়ে যাবেÑ এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে ৩১ মার্চ ২০১৬ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বলেছেÑ নির্বাচনে যা ঘটছে তা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশে খুনের নির্বাচন অতীতে এত ভয়াবহ রূপ ধারণ করেনি।
যে নির্বাচনে সাধারণ মানুষের জীবন কেড়ে নেয়, সেই নির্বাচনের প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না তা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে অদ্যাবদি সব নির্বাচনে স্পষ্টতর হয়েছে। ২০১৪ থেকে নির্বাচন নিয়ে এত মানুষের জীবনহানি বিশ্বে বিরল ঘটনা। সুতরাং মানুষের প্রাণ ও সম্পদ রক্ষার্থে এই নির্বাচন আর এগোতে না দেওয়া সব রাজনৈতিক দলের মানবিক দায়িত্ব। অন্যথায় পরবর্র্তী যে কোনো সময়ে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানির জন্য তাদের আগামীর কাঠগড়ায় অবশ্যই দাঁড়াতে হবে। এটাই চলমান রীতি, ¯্রষ্টার বিধানও তাই। কথায় আছে, খুনের মতো মহাপাপের বিচারের জন্য আখিরাত পর্যন্ত আল্লাহ অপেক্ষা করেন নাÑতামাম বিশ্বে এর নজির আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে। ইতিহাসের পৃষ্ঠা উল্টালেই এর ভয়াবহ শাস্তির দৃশ্য দিব্য চোখে উপলব্ধি করা যাবে। ক্ষমতার লোভে মানুষ যখন বিবেকহীন অন্ধ হয়ে যায় তখন খুনের নেশায় তাদের পেয়ে বসে। তখন যা ইচ্ছা তাই করে। নফস শয়তান মানুষ দিয়ে মানুষ খুন করায়। বাংলাদেশে এরকম একটি খুনের ও ধর্ষণের সংস্কৃতি খুবই বেগবান বহু দিন ধরে।
বাংলাদেশের একশ্রেণীর ক্ষমতাধর রাজনীতিকের কাছে মানুষের প্রাণের চেয়েও অধিক মূল্যবান স্বীয় ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা। এ জন্য কয়েক ডজন মানুষ খুন হলেও তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। অতীতও সুখকর ছিল না। পেট্রলবোমায় হত-নিহত পোড়া মানুষগুলোর কারণে যদি হুকুমের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় বিরোধী দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের, তাহলে বর্তমানে পুলিশের গুলিতে এবং দলীয় ক্যাডার বাহিনীর চাপাতির কোপে হত-আহত ব্যক্তিদের জন্যও শাসক দলের একই পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে। কারণ ইতিহাস সে কথাই বলে।
মানুষের প্রাণের চেয়ে রাজনীতি ও ক্ষমতা কখনই বড় হতে পারে না। নিরীহ মানুষ কেন রাজনীতির দুষ্ট খেলায় প্রাণ দেবে। খেটে খাওয়া মানুষের তো সারা জীবনই খেটে খেতে হয়। এই নোংরা খেলায় তাদের কোনো লাভ নেই। বিভিন্ন জরিপে এ তথ্যই প্রকাশিত হয়েছে। আল্লাহর দোয়াই লাগে মানুষকে আর খুনের পথে ধাবিত করবেন না।
গত ২৮ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন মন্তব্য কলামে একজন মহিলা পাঠক লিখেছেনÑ সরকারের সাফল্য এখানেই, মৃত্যুর প্রতিবাদ তো দূরে থাক, কেউ কথাও বলে না। বাংলাদেশের মানুষ মেতে আছে ফেসবুক, ক্রিকেট, জন্মদিন, পয়লা ফাগুন, পয়লা বৈশাখ, মোটের ওপর নানা উৎসব নিয়ে। আসলে আমরা উপায়হীন মানুষ সমস্যা ভুলে থাকতে চাই উৎসবের মাধ্যমে। তনু হত্যাকা- নিয়ে তার বাবার কথাÑ ‘দেখি কালভার্টের পাশে মেয়ের একটি জুতা’ ২০ মার্চ ২০১৬ রাত সোয়া ১০টা। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন কাজ সেরে সবে বাড়ি ফিরেছেন। এত রাতেও মেয়েটা ফেরেনি। কখনো এমন হয় না। তনুর বাবা ইয়ার হোসেন খুঁজতে বেরোলেন নিজের মেয়েকে। তাকে বেশি দূর যেতে হয়নি। বাড়ির কাছেই কালভার্টের পাশে প্রথমে পাওয়া গেল মেয়ের এক পাটি জুতা, তারপর লাশ ও সংবাদটি পড়ে পাঠক বিপ্লব লিখেছে, ‘মেয়ে তো সবার ঘরেই আছে, সেই আদরের মেয়ে যদি এই রকম নির্মমতার শিকার হয়, তাহলে মা-বাবা-ভাইবোন হিসেবে আপনাদের কেমন লাগবে? আমাদের দেশে আইন আছে কিন্তু বিচার নেই। সবলের জন্য বিচার, আর দুর্বলের জন্য অবিচার। তবে এ ঘটনার বিচার না হলে আমাদের মেয়েদের অবস্থা আরও করুণ হবে। এদেশে ত্বকি হত্যার বিচার হয়নি, সাগর-রুনী হত্যার বিচার হয়নি, সোহাগী হত্যারও বিচার হবে না। বিচার হবে না অগণিত শিশু হত্যারও। এটাই বাংলাদেশে চলমান ধারা-আর আমরা একে বলি নিয়তি।’
মনকে প্রশমন করতে পারি না যখন দেখি ধর্ষক ধর্ষণ করে ক্ষান্ত হয় না, তাকে খুন করে মাঠিচাপা দেয়। এই ধর্ষকই কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য। ধর্ষককে ভাই বা মস্তান হিসেবে না দেখে ধর্ষক হিসেবে দেখুন। তাকে আইনের হাতে তুলে দিন। বিচার না হওয়া পর্যন্ত লেগে থাকুন। এ ব্যাপারে সহায়তা করুন। শিশুদের ছোট বয়স থেকেই আদব কায়দায় ও নৈতিকতার শিক্ষায় রপ্ত করান। তাহলে হয়তো আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে আর ধর্ষণের প্রতিবাদ করতে হবে না। লাল-সবুজ পতাকাটিকে আর কলঙ্কিত করবে না। মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া এই দেশটিতে যদি এখনো মা-বোনের ইজ্জত আব্রু লঙ্ঘিত হয় তাহলে ¯্রষ্টার কাছে আমরা বড় অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হব।
যখন আমি এই লেখাটি লিখছি তখন দেখলাম একটি চড়ই পাখি জানালার কার্নিশে বসে আছে। কিছুক্ষণ ভাবলাম এই পাখিটির দিকে তাকিয়ে, কত শান্তশিষ্ট পাখি। কারো ক্ষতি করে না। আমরা কি পাখির মতো হতে পারি না। মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টির সেরা জীব করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন কিন্তু আমরা একশ্রেণির মানুষ ¯্রষ্টার সেরা জীবের কাজটি কি করছি? এক শব্দে যার উত্তরÑ করছি না। যদি না-ই করে থাকি তাহলে সার্বিক অমঙ্গল আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। কোরআনে সে কথা এভাবে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা সীমা লঙ্ঘন কর না। সীমা লঙ্ঘনকারীদের আমি কঠোরভাবে পাকড়াও করি।’
মাঝে-মধ্যে আমি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে যাই। গেলে বরেণ্য শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সাইয়িদের সাথে দেখা করি। সম্প্রতি তার সাথে দেশের নানা বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি এক কথায় এর জবাব দিলেন। বললেনÑ আমাদের বুকের বাম পাশে একটি গোস্তের টুকরা আছে। আমরা একে মন, অন্তর বা দিল নানা বিশেষণে ডাকি। কিন্তু আসল কথা হলোÑ আমাদের অসুখটা ওই জায়গায়। ওটা ভালো হলেই গোটা দেশ ভালো হয়ে যাবে। তখন পানি, বায়ু, মাটি, আলোÑএগুলো আর দূষিত হবে না। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য এই চারটি জিনিস দরকার। মনের অসুখটা যখন ভালো হয়ে যাবে তখন প্রকৃতির এই চারটি উপাদান শুদ্ধতায় রূপ নেবে। মনের অসুখ সারাতে প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা। দেশে এই শিক্ষার চরম দুর্ভিক্ষ চলছে।
২০০১-২০০৬ এই পাঁচ বছর বিএনপি দেশ শাসন করেছিল। তখনো দেশে দুর্নীতি হয়েছে। আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটেছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতি আরো বেগবান হয়েছে। প্রশ্ন হলোÑ তখন বিরোধী দলে থেকে আওয়ামী লীগ এবং সমমনা বুদ্ধিজীবীরা যারা সেসময় কিছু হলে দেশ পাকিস্তান-আফগানিস্তান হয়ে গেল বলে শোরগোল করতেন; আজ দেশের অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামাজিক ব্যবস্থার যে করুণ অবস্থা চলছে তা সব অতীতকে হার মানিয়েছে। কিন্তু তাদের মুখে টুঁ-শব্দটি নেই আজ। শুধু মিডিয়ায় দেখি উন্নয়নের জোয়ার নিয়ে নানা গল্প ও কাহিনীর বিন্যাস। নারীবান্ধব সরকার অথচ নারীদের যেভাবে মানসম্মান বিনষ্ট করা হচ্ছে ’৭১-এ নারীর ইজ্জত রক্ষার্থে যে প্রাণপণ লড়াই করেছিল এদেশের মানুষ সেই ইজ্জত নিয়ে চলছে লজ্জাজনক ব্যবসা, এ কষ্ট লাঘব করি কীভাবে। পরাধীন জাতি কষ্ট লাঘব করার একটি উপায় খুঁজে পায়। সেটি হলোÑ আমরা পরাধীন অর্থাৎ অন্যের অধীন। তাই কষ্ট সহ্য করতে হবে। কিন্তু স্বাধীন জাতি হয়ে মা-বোনের ওপর এমন পাশবিক অত্যাচার এবং এত খুন আমরা কীভাবে সহ্য করি। তাহলে কী বলব, মানবতা এখন পরাজিত।
সম্প্রতি দুদকের এক অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, বড় দুর্নীতিবাজদের অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রী আরো বলেছেন, শুধু ঘুষ আর অবৈধ আর্থিক লেনদেন ছাড়াও দুর্নীতি হয়। সেটি হলো কাজের ধীরগতি। নিজের কাজ ঠিকমতো না করাও বড় দুর্নীতি (৩১ মার্চ ১৬)। বাংলাদেশে একটি প্রকল্পের কাজ শেষ হতে দীর্ঘ সময় লাগে। চুরি বিদ্যা হয় বড় ধরা যদি নাহি পড়ে ধরা। চোখে বিষাক্ত মলম, মরিচের গুঁড়া লাগিয়ে নিরীহ পথিকের সর্বস্ব কেড়ে নেওয়া বাংলাদেশে এখনো নিত্যদিনের ঘটনা। রাতের ট্রেনে সামান্য কয়েকশ টাকার জন্য কোনো অসহায় যাত্রীকে খুন করে লাশ বাইরে ছুঁড়ে ফেলার বহু ঘটনা ইদানীং ঘটছে, যার সামান্য অংশই মিডিয়া তুলে ধরতে সক্ষম হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা ব্যবহৃত হয়েছে ক্যাসিনোতে, জুয়া খেলায়। খেলাপি ঋণ, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির পরে ঠগিদের টুপিতে যুক্ত হওয়া নতুন এই পালক রিজার্ভ হ্যাকিং জাতীয় সম্পদ লুটপাটে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। পাকিস্তানের ২৩ বছরে পাঞ্জাবি ঠগিরা যে পরিমাণ শোষণ করতে পেরেছিল বাঙালিদের, স্বাধীনতার ৪৫ বছরে বাঙালি ঠগিরা তার শতগুণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এক এক সরকার আসে আর নতুন ঠগির দল লুটপাটের চৌকস সব উপায় বের করতে কোমর বেঁধে লেগে পড়ে। বাংলাদেশে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ৪৫ বছরে কখনো ছিল না। এখন সম্পদও অনিরাপদ হয়ে পড়েছে ঘরে এবং বাইরে।
এক উদ্বিগ্ন রোগী জিজ্ঞেস করেছিল, ডাক্তার সাব আমার আসলে কী হয়েছে। নিরুদ্বেগ ডাক্তার জবাব দিয়েছিলেন, আপনার আসলে কী হয়েছে তা জানা যাবে ময়নাতদন্তের পর। আমাদের দেশের অবস্থা কোনদিকে যাচ্ছে উল্লিখিত বক্তব্যে তার কিছুটা আঁচ করা যাবে। ভাবতেও অবাক লাগে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মাত্র ২৭ বিলিয়ন ডলারের ওপর চোরদের দৃষ্টি পড়ল। নিশ্চয়ই এর পেছনে বড় কারণ রয়েছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি রিজার্ভ রয়েছে চীনের। তা হলো ৩ হাজার ৮৮৮ বিলিয়ন ডলার, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জাপান, তাদের রিজার্ভ ১ হাজার ২৬১ বিলিয়ন ডলার, এরপর সৌদি আরব, সুইজারল্যান্ড, তাইওয়ান, রাশিয়া দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল, হংক এবং দশম স্থান ভারতের। তাদের রিজার্ভ ৩২০ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে বাংলাদেশের রিজার্ভ অতি সামান্যই বলা যায়। প্রশ্নটা হলোÑ এত বড় বড় রিজার্ভের দেশ থাকতে বাংলাদেশের নগণ্য সঞ্চয়ের ওপরই কেন চোখ পড়ল চোরদের। আমাদের আর্থিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা অতি নাজুক বলেই চোরেরা এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়েছে। আমাদের লেনদেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কোনোকালেই বিশ্বমানের ছিল না। এখন আরো নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। চোরেরা সেই খবরটি রেখেই সুইফটের নিরাপত্তা ব্যূহ ভেদ করতে সক্ষম হয়েছিল। বিশ্বের সবচেয়ে কালো টাকার দেশ ফিলিপাইন। এই ক্যাসিনো খ্যাত দেশটির সহায়তা নিয়ে ঘটনাটা ঘটানো হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞজনরা অভিমত দিয়েছেন। তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের ভেতরে অনিয়ম ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এসব অপকর্ম ঘটেছে মূলত ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা, দুর্বল তদারকি ব্যবস্থা এবং সুশাসনের অভাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের যে কঠোর অবস্থান গ্রহণের দরকার ছিল সেটা তারা করেনি। যখন থেকে ব্যাংক খাতে নানা প্রযুক্তির সূচনা করা হয়েছিল, তখনই সেগুলোর নিরাপত্তার বিষয়ে গভীর মনোযোগ দেওয়া উচিত ছিল। চিন্তা করা উচিত ছিল যদি এ ধরনের প্রযুক্তি কখনো দুষ্ট লোকের হাতে পড়ে তাহলে তার কুফল বা নেতিবাচক দিক কী হতে পারে। সেই বিবেচনাটি আমাদের আর্থিক খাতে যথাযথভাবে করা হয়নি। এ ছাড়া প্রযুক্তি প্রতিদিন পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু নিজেদের ব্যবস্থাটিকে সুরক্ষিত করার জন্য যে ধরনের দক্ষ, প্রশিক্ষিত জনবলের দরকার, সেটিও গড়ে তোলা হয়নি। সে ক্ষেত্রে আমরা বলব, সম্প্রতি দেশে ব্যাংকিং খাতে যে বিরাট আর্থিক অনিয়মের ঘটনা একের পর এক ঘটে যাচ্ছে সেহেতু দুর্নীতির শাস্তি দ্রুত এবং দৃষ্টান্তমূলক হওয়া উচিত। এসব কথা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও বর্তমান ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সালেহ উদ্দিন আহমেদ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন।
নিবন্ধের শুরুতে বলেছি বাংলাদেশে জীবনের নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। পাশাপাশি জাতীয় অর্থ সম্পদ যা সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত তাও লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। নৈতিকতার চরম ধস নেমেছে সমাজের প্রতিটি স্তরে। এসব সামাল দিতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ অচিরেই আবার ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রের তালিকায় ঢুকে যাবে। অতএব এখনই সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে।
য় লেখক : গ্রন্থাকার, গবেষক ও কলামিস্ট
যধৎঁহৎধংযরফধৎ@মসধরষ.পড়স
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।