দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
ফিরোজ আহমাদ
রূহ বের হয়ে গেলে মানুষ মৃত। এরপর শুরু হয় আপন আপন ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার কাজ। মৃত ব্যক্তি মুসলিম হলে করবস্থ করা হয়। হিন্দু হলে দাহ করা হয় ইত্যাদি। রূহ আল্লাহতায়ালার একটি আদেশ মাত্র। রূহ সম্পর্কে জানার আগ্রহ কৌতূহল কমবেশি সবার রয়েছে। রূহের আলোচনা অনেকের নিকট বাতেনী জগতের আলোচনা হিসেবে পরিচিত। যাহারা বিভিন্ন সূফি দরবেশের দরবারে নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন। রূহ সম্পর্কে তাদের জানার আগ্রহ বেশি। রূহের জগৎ রহস্যময়। রূহ সম্পর্কিত আলোচনা অন্তর আত্মা তথা অন্তর চক্ষু দিয়ে বুঝতে হয়। রূহ কিভাবে মানব দেহে আসে, রূহ কিভাবে পুনরায় বের হয়ে যায়, রূহ বের হওয়ার পর রূহগুলোর কি হয়, রূহগুলো কোথায় ছিল, মৃত্যুর পর রূহগুলো কোথায় যাবে ইত্যাদি প্রশ্ন আধ্যাত্মিক জ্ঞানানুসন্ধানিদের চিন্তার জগতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। রূহ সম্পর্কে কুরানুল কারীমে অনেক রহস্যময় ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে। কুরআনে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন, জীবতকে মৃত থেকে এবং মৃতকে জীবত থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আরো উল্লেখ করা হয়েছে, প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মৃত্যুর পর পুনরায় প্রাণ ফিরিয়ে দেয়া হবে ইত্যাদি। মুসলিম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী রূহকে কবরে প্রথম তিনটি প্রশ্ন করা হয়। কবরবাসী পাপী হলে জিজ্ঞাসিত তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না। উত্তর দিতে না পারলে কবরে সত্তর হাত লম্বা ফেরশতা আসবে। কবরে চারপাশের মাটি মৃত ব্যক্তির উপর চাপ প্রয়োগ করবে। অনেক বড় বড় সাপ বিচ্ছু কবরে আসবে ইত্যাদি। যারা জান্নাতি ও দুনিয়াতে ভাল কাজ করছে নেক আমল করছে তারা সকলে কবরে জিজ্ঞাসিত তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। তারা জান্নাতী হয়ে যাবে। অথচ জান্নাত আমরা কেউ দেখেনি। এখানে উল্লেখ্য যে, ঈমানের একটি অংশ হলো না দেখে বিশ্বাস স্থাপন করা। আরেকটি অংশ হলো দেখে বিশ্বাস স্থাপন করা। আমাদেরকে সকল বাতেন বিষয়ের উপর না দেখে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। হযরত রাসূল (সা.) যখন যা বলেছেন সাহাবারা ইহা অকপটে বিশ্বাস করেছেন। ইহাই হলো ঈমান। তদ্রƒপ রূহের বিষয়গুলো খুবই সূক্ষ্ম ও জটিল। সহজে যে কেউ বুঝবে না।
দেহ থেকে যখন রূহগুলো বের হয়ে যায় তখন রূহগুলো মুক্ত হয়ে যায়। হযরত রাসূল (সা.) যখন মেরাজে গিয়েছিলেন তখন হযরত মূসা (আঃ)-এর সাথে ষষ্ঠ আসমানে দেখা হয়েছিল। মেরাজ শেষে ফেরার পথে পাঞ্জেখানা নামাজের সংখ্যা নির্ধারণ নিয়ে হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর সাথে হযরত মূসা (আঃ)-এর কথা হয়েছিল। মেরাজে যাওয়ার পথে সকল নবীদের সাথে নিয়ে হযরত মোহাম্মদ (সা.) জামাতে নামাজ আদায় করেছেন। হযরত মূসা (আঃ) তখন জাহেরীভাবে দুনিয়াতে ছিলেন না। কিন্তু কি করে সম্ভব হলো নামাজ আদায় করা। এবং সকল ফেরশতাদের সাথে নিয়েও জামাতে নামাজ আদায় করেছেন। অথচ আমরা কেউ ফেরেশতাদের সরাসরি দেখি নাই। জ্বীনদের আমরা কেউ দেখি না। অথচ জ্বীনেরা নামাজ পড়ে, বাজার করে, মাদরাসায় পড়ে আমরা শুনি। কুরআনেও ইরশাদ হয়েছে, জ্বীন ও মানুষকে শুধু আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করিয়াছি। রোজ হাসরের মাঠে জ্বীন ও ইনসানের বিচার হবে ইত্যাদি। মানুষের বাম বুকের দুই আঙ্গুল নিচে রূহের অবস্থান। তাহলে জ্বীনের রূহের অবস্থান কোথায়। মৃত্যুর পর জ্বীনের কি হয়। তাদের কোথায় কবরস্থ করা হয়। মানুষকে কবরে যেসব প্রশ্ন করা হবে এর একটি রাসূল সম্পর্কিত। জ্বীনদের রাসূল সম্পর্কিত প্রশ্নটি কি? তাদের হেদায়াতের বানী কে প্রচার করেছেন? তাদের ধর্ম গ্রন্থের নাম কি? ইত্যাদি। এসব রহস্যের মধ্যে আল্লাহতায়ালার কুদরতি শান মান লুকায়িত আছে। হাদিস শরীফে আছে যে রাসূল (সা.)কে স্বপ্নে দেখবে। সে অচিরে রাসূল (সা.)কে বাস্তবে দেখতে পারবে। অসংখ্য লোক হযরত রাসূল (সা.)কে স্বপ্নে দেখেছেন। ঘুমন্ত অবস্থায় আমরা অনেক প্রিয়জনদের দেখি। স্বপ্নে প্রিয়জনদের অসুস্থবস্থায় দেখতে পেলে দিনের বেলায় অনেকে মৃত ব্যক্তির উপর সওয়াব রেসানির উদ্দেশ্যে দান সদকা করেন। মৃত ব্যক্তিরা স্বপ্নে উত্তরসূরীদের নানান ধরনের ইঙ্গিত প্রদান করেন। যা পরবর্তীতে সত্য হয়ে থাকে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, মৃত্যুর সময় আল্লাহ রূহ কবয করেন এবং যারা জীবিত তাদের রূহও কবয করেন ওরা যখন নিদ্রিত থাকে। অতঃপর যার জন্য মৃত্যু অবধারিত তিনি তাঁর রূহ আটকে রাখেন এবং অন্যদের রূহ এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফিরিয়ে দেন। এতে নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা যুমার: ৪২)। স্বপ্নের সাথে রূহের গভীর ও নিবিঢ় যোগসূত্র রয়েছে। হযরত ইউসূফ (আঃ) স্বপ্নে দেখেছিলেন চন্দ্র, সূর্য ও দশটি নক্ষত্র তাকে সেজদা করছে। যা পরবর্তীতে বাস্তবে পরিণত হয়েছিল। এখানে চন্দ্র-সূর্য হলো বাবা-মা আর নক্ষত্র হলো ইউসূফ (আঃ) এর দশ ভাই। হযরত ইউসূফ (আঃ)-এর সাথে যখন তাঁর পরিবারের সদস্যদের পুনরায় দেখা হয়েছিল। তারা সকলে হযরত ইউসূফ (আঃ)কে দেখামাত্র সেজদা করেছিলেন। (সূরা ইউসূফ-এর ৪ ও ১০০ নং আয়াতে ঘটনাটি ইরশাদ হয়েছে)। রূহের মৃত্যু হয় না। সাধারণ মানুষের দেহের মৃত্যু হয়। নবী-রাসূল, অলি-আউলিয়াদের দেহের বিকৃতি হয় না। নবী-রাসূলের দেহ কবরে পচে না। মৃত্যু সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, যারা মহান আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের তোমরা কোন অবস্থাতেই মৃত বলো না, তারা তো জীবিত, তাদের প্রভূর পক্ষ থেকে রিজিক দেয়া হচ্ছে। আল্লাহপাক নিজ অনুগ্রহ দিয়ে তাদের যা কিছু দান করেছেন তাতেই তারা পরিতৃপ্ত এবং যারা এখনো তাদের পিছনে রয়ে গেছে, যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হতে পারেনি তাদের ব্যাপারে এরা খুশী, কারণ এমন ধরনের লোকদের জন্যে কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তাও করবে না। এ (ভাগ্যবান) মানুষেরা আল্লাহর পক্ষ থেকে অফুরন্ত নেয়ামত ও অনুগ্রহে উৎফুল্ল আনন্দিত হয়, মহান আল্লাহ ঈমানদার বান্দাদের পাওনা কখনো বিনষ্ট করেন না। (সূরা আল ইমরান: ১৬৯,১৭০,১৭১)। সালাম দেয়া সুন্নত। সালাম নেয়া ওয়াজিব। সালামের জবাব না দিলে গুনাহ হয়। এছাড়া ওয়াজিব পরিত্যাগ করলে কবিরা গুনাহ হয়। হাদিস শরীফে এসেছে হযরত রাসূল (সা.) কে দূর থেকে সালাম জানানো হলে উক্ত সালাম ফেরেশতারা বহন করে রওজা পাকে পৌঁছে দেন। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।