Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দালালরা সেবার ইজারাদার

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স ও রাজস্ব শাখায় দালাল আর টেন্ডলদের ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যায় না। দুই কর্পোরেশনেই জনবল সঙ্কটের অজুহাতে প্রতিজন ট্রেড লাইসেন্স সুপারভাইজারের অধিনে একাধিক বহিরাগত লোক দিয়ে কাজ করানোটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। দুই কর্পোরেশনের এই বহিরাগত দালালদের আরেক নাম টেন্ডল। বর্তমানে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স সুপারভাইজার ও টেন্ডলদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে ট্রেড লাইসেন্স করতে আসা সেবা প্রার্থীরা। পুরনো ট্রেডলাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স করতে এসে নানাভাবে হয়রানীসহ অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে।

একজন ট্রেড লাইসেন্স সুপারভাইজারের অধিনে কাজ করা প্রত্যেক টেন্ডলকে মাসিক ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়। এর বাইরে প্রতিটি বইয়ের জন্য বাড়তি কমিশন রয়েছে। এ টেন্ডলদের মাধ্যমে সুপারভাইজাররা প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা অতিরিক্ত আয় করে থাকেন। এই টাকার একটা অংশ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের কর কর্মকর্তা এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকতারাও পাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এভাবে প্রকাশ্যে ব্যবসায়িদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরও অদৃশ্য কারণে কর্তৃপক্ষ নিরব।

এ বিষয়ে জানতে চইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা ইনকিলাবকে বলেন, এ বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা তিনজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, যেহেতু প্রতিটি অঞ্চলের আঞ্চলিক নিবাহী কর্মকর্তাই একজন নির্বাহী মেজিস্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত। সেহেতু আমরা তাদেরকে বলে দিয়েছে তাদের অফিসে এ ধরণের যে কোন অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে যে বা যারা জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে যেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আমরা এ ব্যপারে কাউকে ছাড় দিবো না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, এ ব্যপারে আমরা ট্রেড লাইসেন্স সুপারভাইজাদেরকে কড়াভাবে সতর্ক করে দিয়েছি। যার দফতরে দালাল বা টেন্ডল পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, প্রতি বছর লক্ষাধিক ট্রেড লাইসেন্স নবায়ণ করতে হয়। এত ট্রেড লাইসেন্স নবায়ণ করতে অনেক লেখা লেখির কাজ থাকে। যা একসময় আমাদের ছিল না। বর্তমানে আমরা প্রতিটি শাখায় কিছু লোকবল দিয়েছি যা দিয়ে তারা কাজ চালিয়ে নিতে পারছে। তাই এখন আর আমাদের ট্রেড লাইসেন্স শাখাগুলোতে আর আগের মতো দালাল আর টেন্ডলদের দৌরাত্ম্য নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিএনসিসি’র অঞ্চল-৫ এর কাওরানবাজারে রাজস্ব বিভাগের ট্রেড লাইসেন্স শাখায় সুপারভাইজার আবদুর রশিদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে রবিন, রিপন, কাজল ও মিজান নামের ৪ জন বহিরাগত টেন্ডল। আবদুর রশিদ নিজেও এক সময় টেন্ডলগিরি করেছেন। ২০০৫ সালে লেজার কিপারপদে চাকরি নিয়ে ট্রেডলাইসেন্স শাখায় টানা ১৩ বছর ধরে ট্রেড লাইসেন্স সুপারভাইজারের কাজ করছেন তিনি। প্রতি ৩ বছর পর পর বদলির বিধান থাকলেও রহস্যজনক কারণে তাকে বদলি করা হয় না। তিনি একাই ওই অঞ্চলের ৮ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫টি ওয়ার্ডের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। অথচ অন্য ট্রেড লাইসেন্স সুপারভাইজাররা মাত্র একটি করে ওয়ার্ডের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন এবং নতুন লাইসেন্স ইস্যু করে থাকেন। তিনি ও তার টেন্ডলদের কাছে ব্যবসায়িরা প্রায় সময় নাজেহাল হন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এ চক্রটি। ডিএনসিসি’র অঞ্চল-৫ এর কাওরান বাজার অফিসে ট্রেডলাইসেন্স শাখায় ব্যবসায়িরা ড্রেট লাইসেন্স করতে এসেই পড়তে হচ্ছে এই টেন্ডলদের খপ্পরে। তাদের থেকে প্রতিটি লাইসেন্সের জন্য দুই হাজার থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসি’র অঞ্চল-৫ এর কাওরানবাজারে রাজস্ব বিভাগের ট্রেড লাইসেন্স শাখায় সুপারভাইজার আবদুর রশিদ ইনকিলাবকে বলেন, আমার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে আপনি যা পেয়েছেন লিখে দেন। এতে আমার কিছু যায় আসে না। তিনি বলেন, পত্রিকায় লিখলে কি হয়? আপনার যা খুশি লিখে দেন।

ডিএনসিসির মিরপুরে অঞ্চল-২ অফিসের চেইনম্যান বাবুল, তার অফিসে হাজিরা দিয়েই চলে আসেন অঞ্চল-৫ এর কারওয়ান বাজার শাখার ট্রেড লাইসেন্স বিভাগে। সবাই তাকে টেন্ডল বাবুল নামেই চিনেন। অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে ট্রেড লাইসেন্স সংক্রান্ত যেকোনো কাজ করে থাকেন এই বাবুল। তার শেল্টারদাতা হলেন, কর কর্মকর্তা মিজানুর রহমান এবং ট্রেড লাইসেন্স সুপারভাইজার নাইম আহমেদসহ আরও কয়েকজন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) সায়েদাবাদ অঞ্চল-৫ অফিসে ইকবাল হোসেনসহ ৩ থেকে ৪ জন ট্রেড লাইসেন্স সুপারভাইজারের টেবিলে ২ থেকে ৩ জন করে বহিরাগত দালাল (টেন্ডল) ব্যবসায়িদের কাছ থেকে প্রতিটি লাইসেন্সে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে ডিএসসিসির আজিমপুর অঞ্চল-৩ এর ট্রেডলাইসেন্স শাখায় বহিরাগত দালাল এবং টেন্ডলদের উৎপাতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়িরা। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৩ অক্টোবর দুদকের বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে বহিরাগত দালালদের ধাওয়া করেন এবং তাদের শেল্টারদাতা সুপারভাইজারকে আটক করেন। কর্তৃপক্ষ ওই সুপারভাইজার চন্দ্র শেখর রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। দুদকের চলমান অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না ঢাকা দুই সিটিতে ঘুষ দুর্নীতি আর নগরবাসীর হয়রানী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ