পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সায়ীদ আবদুল মালিক : রাজধানীর গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটে নিয়ম ভঙ্গ করে ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের আভিযোগ উঠেছে ইজারাদারের বিরুদ্ধে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে গরু প্রতি ৫০ টাকা মহিষ ৭০ টাকা এবং ছাগল ১৫ টাকা করে হাসিল নির্ধারণ করলেও সংশ্লিষ্ট ইজারাদার মহাজনদের কাছ থেকে ৩০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত রশিদ হাঁকাচ্ছেন। ওই রশিদের বেশকিছু কপি দেখিয়ে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, এসব ইজারা হাসিল রশিদ মহাজনদের নামে না কেটে জোরপূর্বক ইজারাদার অনুগত রাখালের নামে কাটা হচ্ছে। এমনকি ক্রয়কৃত পশু ইজাদার জোরপূর্বক নির্ধারিত পিকআপ ভ্যানে বহন করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন গোশত ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, একজন চাঁদাবাজ, জুলুমবাজ ইজারাদারের বিরুদ্ধে শত অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। ইজারাদার এবং মজিবর বাহিনী গোশত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে। এতে করে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, গাবতলী হাটের ক্রেতাদের কাছে দুই ধরনের রশিদ পাওয়া গেছে। একটি সিটি কর্পোরেশনের দেয়া এবং অন্যটি ইজাদারের নিজস্ব তৈরি করা। এসব অনিয়মের বিষয়ে গাবতলী পশুর হাটের ইজারাদার মোহাম্মদ লুৎফর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ‘বিষয়টি সত্য নয়। গোশত ব্যবসায়ীদের একটি চক্র হাট ও ইজারাদারের বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার করছে। তিনি অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের বিষয়ে বলেন, গোশত ব্যবসায়ীদের দোকানে ডিএনসিসির দেয়া পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে রাখার নিয়ম। কিন্তু তারা তা করছেন না। এছাড়া দোকানের বাইরে বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য গরু বা অন্যপশু ক্রয় করলে শতকরা সাড়ে ৩ টাকা করে হাসিল আদায় করা হয়। সেক্ষেত্রে শতকরা হিসেবে ৩০০ থেকে ৪০০ বা ৫০০ টাকাও হতে পারে। দুই ধরনের হাসিল রশিদের বিষয়ে তিনি বলেন, ওই রশিদ আমি তৈরি করিনি। এটি গোশত ব্যবসায়ী চক্র তৈরি করে হাটের বাইরে নিয়ে ক্রেতাদের দিয়ে থাকে। গোশত ব্যবসায়ীদের একটি চক্র তাকে দীর্ঘদিন ধরে ডিস্টার্ব করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি ডিএনসিসিতে অভিযোগও করেছেন বলে জানান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন অন্তত ৬-৭ হাজার গোশত ব্যবসায়ী গাবতলীর এই হাটে পশু কিনতে আসেন। তাদের অভিযোগ, ইজারাদারের এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করলে লাঞ্ছিত হতে হয়, মারধর করা হয় এবং অবৈধভাবে ১৫-২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর মুগদাপাড়ার এক গোশত ব্যবসায়ী জানান, হাট থেকে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কেনার পর ইজারাদারের সিন্ডিকেটের লোকজন দাম জানতে চায়। তাদের কাছে দাম ৮০ হাজার জানালে তারা বলে, মিথ্যা কথা বলছিস, এটার দাম ৯০ হাজার টাকা। পরে তাকে ইজাদারের কাছে নিয়ে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। ওই ব্যবসায়ীর দাবি, মহাজনের এ সিন্ডিকেটটির প্রতারণার ফাঁদে প্রতিদিন কেউ না কেউ পড়ে জরিমানার টাকা গুনতে হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা লোকমান হোসেন বলেন, গাবতলী পশুর হাট থেকে সাধারণ ক্রেতার জন্য হাসিল প্রতি গরু সাড়ে ৩ টাকা এবং গোশত ব্যবসায়ীদের জন্য প্রতি গরু ৫০ টাকা, মহিষ ৭০ টাকা, ছাগল ১৫ টাকা। দুই ধরনের রশিদ দেখিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাদাকালো রশিদটি আমাদের। নীল বা হলুদ রঙের যে রশিদ এটি ইজারাদারের বিষয়।
সংশ্লিষ্ট নথিপত্র অনুয়ায়ী, গাবতলী গবাদী পশুর হাটের ইজরা সূত্রে মালিক মিরপুর কোটবাড়ী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ লুৎফর রহমান। তিনি গত দু’বছর ধরে গাবতলী হাটের ইজারা আদায় করছেন। আগামী পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত তার মেয়াদ রয়েছে।
প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিশ হাজারের বেশি গরু বেচা-বিক্রির জন্য আসে গাবতলী পশুহাটে। এর অধিকাংশই বিক্রি হয় ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার গোশত ব্যবসায়ীদের কাছে। দৈনন্দিন এই হাটে গড়ে দশ হাজারের বেশি গবাদি পশু বিক্রি হচ্ছে।
ডিএনসিসির ৫৭৬ নম্বর রশিদে দেখা যায়, ০৪১৪ কার্ডধারী মোহাম্মদ আফতাব নামের এক গরু ব্যবসায়ী ৫৫ হাজার টাকায় গরু কিনেছেন, হাসিল দিয়েছেন ৫০ টাকা। ৫৭৭ নম্বর রশিদে ৫৩১ নম্বর কার্ডধারী আ. করিম ৪৯ হাজার টাকায় গরু কিনে হাসিল দিয়েছেন ৫০ টাকা। ৬৭৭ নম্বর রশিদ অনুয়ায়ী, খোরশেদ (ইএন নম্বর ৫৬৪) নামের একজন দুই লাখ ৬০ হাজার টাকায় ৪ টি গরু কিনে ২০০ টাকা হাসিল দিয়েছেন।
অন্যদিকে গাবতলীর পশুর হাটের ইজাদারের ৫২৯৪৬ ক্রমিক নম্বর নিজস্ব রশিদে দেখা গেছে, কাল্লু নামের এক রাখালের নামে কাটা রশিদে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা দামের ৩টি গরুর হাসিল ৭০০ টাকা। একই নামে ৪৭০৬১ ক্রমিক নম্বর আরেকটি রশিদ পাওয়া গেছে। ওই রশিদে দেড়লাখ টাকার দুইটি গরুর হাসিল ৬০০ টাকা। এরকম শতাধিক রশিদ পাওয়া গেছে যা রাখাল কাল্লুর নামে কাটা হয়েছে। ইজারাদার অনুগত কাল্লুর মতো প্রায় ৫০ জন রাখাল রয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গোশতের দাম বৃদ্ধির এটিও একটি কারণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।