Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদকদ্রব্য থেকে বিরত থাকা উচিত

প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কাজী মোরশেদ আলম
মাদকদ্রব্য থেকে বিরত থাকা উচিত। কয়েকটি দ্রব্যের মিশ্রণে এমন একটি দ্রব্য তৈরি হয় যা খেলে বা গ্রহণ করলে সুস্থ শরীর ও মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। দ্রব্যটিকে বলা হয় মাদকদ্রব্য। অন্যান্য দ্রব্যের চেয়ে মাদকদ্রব্যের ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক। এই দ্রব্যটি যে দামই নির্ধারণ করা হয় তার চেয়ে বেশি দাম দিয়েও ক্রয় করতে মাদক সেবনকারীরা এক বিন্দু কুণ্ঠাবোধ করে না। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় মাদকদ্রব্য ব্যবসা আঁকড়ে ধরে রেখেছে। মাদক ব্যবসায়ীদের আয় হয় যে পরিমাণে তার চেয়ে অতলান্ত অনেক গুণ ক্ষতি হয় যারা মাদক পান করে বা গ্রহণ করে। এই মাদকদ্রব্য ক্রয় করতে গিয়ে যুবক সমাজ অবৈধভাবে টাকা সংগ্রহ করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। কখনো ছিনতাই, কখনো পিতামাতার কাছ থেকে পড়ালেখার উপকরণ কেনার ছলে বা জোর করেও টাকা আদায় করে মাদক ক্রয় করার জন্য মেতে ওঠে। যে জিনিসটির প্রতি যুবক সমাজের অত্যধিক প্রবল আকর্ষণ ওই জিনিসটি কোনো মতেই মঙ্গল বয়ে আনে না। অবর্ণনীয় ক্ষতি হয়ে থাকে সমাজের, দেশের ও মাদ্রক গ্রহণকারীদের।
এক শ্রেণির যুব সমাজ বিভিন্ন কারণে হতাশায় ভোগে। তারা নীতিবোধ হারিয়ে ফেলে এবং নেশাকর দ্রব্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে খারাপদের সাথে মেলামেশা করায় খারাপদের প্রভাব পড়ে বলে নেশাকর দ্রব্যের প্রতি প্রবণতা থাকে বেশি। এসব নেশাকর দ্রব্য শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়ে মারাত্মক ব্যাধিতে রূপ নেয়। তাই নেশাকর দ্রব্যগুলো অবশ্যই বর্জন করা উচিত। এ কথা সত্য যে, অনেকে বর্জন করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে বলেই মাদকের প্রতি আকৃষ্ট বহাল থাকে। এসব নেশাকর দ্রব্য থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সমাজের সচেতন মহলকে একনিষ্ঠ চিত্তে এগিয়ে আসতে হবে। মাদক তৈরি করা থেকে বিরত রাখলে বা মাদক তৈরির কারখানা বন্ধ করে দিলে বা যে ব্যক্তি মাদক তৈরি করবে এবং যুব সমাজের কাছে বিক্রি করবে সে ব্যক্তিটিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হলে মাদকদ্রব্য হাতের নাগালের বাইরে চলে যাবে। তখন হয়তো যুব সমাজ নেশাকর দ্রব্যগুলো পাবে না। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মাদকদ্রব্য আমরাই যুব সমাজের হাতে তুলে দিচ্ছি। এর অর্থ এই যে, বাজারে, ঘরে বাইরে ও আনাচে-কানাচে মাদক তৈরি হচ্ছে এবং বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্য দিবালোকে।
আমরা যদি সবাই একত্রিত হয়ে প্রশাসনের সাথে মাদক তৈরি এবং বিক্রি দমনে এগিয়ে আসি তবে মাদকদ্রব্য যুবক সমাজের নিকট সোনার হরিণ হিসেবে গণ্য হবে। মাদক কেন নিষিদ্ধ? সেদিকে আলোকপাত এবং কিছু চিন্তাভাবনা করা দরকার। মাদক সব ধর্মে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে এই কারণে মাদক গ্রহণ করলে অস্থায়ীভাবে বিবেক শক্তির ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় মাদক গ্রহণকারী যে কোনো অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। ফলে মারাত্মক ক্ষতি হয়। মাদক গ্রহণকারীর চালচলন, কথাবার্তা এবং কাজকর্ম প্রভৃতিতে কিছুতেই ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না। আমরা প্রায়ই দেখেছি, যে ড্রাইভারটি গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে তার বেশির ভাগ কারণই মাদক গ্রহণ। মাদক গ্রহণকারী ইভটিজিং, নানা অপ্রীতিকর ঘটনা, মানুষ হত্যা, অর্থাৎ ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয় বেশি। কেননা মাদক গ্রহণকারী হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
মাদক ক্ষণস্থায়ী আরাম দেয় কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী ভোগায়। মাদক গ্রহণ করার ফলে যতটা ঝিমানি দূর করে তার চেয়ে বেশি ঝিমানির সৃষ্টি করে মাদক ক্রিয়া শেষ হলে। মাদক গ্রহণকারীকে প্রথম দিকে কিছুটা সবল দেখা গেলেও পরবর্তীতে তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রোগের সৃষ্টি হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং হজম শক্তি হ্রাস পায় বলে শরীর ক্ষীণ হতে বেশি সময় লাগে না। শরীরের ক্ষয় রোধ হয় না বলে মাদক গ্রহণকারী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। মাদক গ্রহণ একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপারÑ এ কথাকে কোনোমতেই সমর্থন দেয়া যাবে না। কেননা এমন কিছু ব্যক্তিগত ব্যাপার আছে তা সম্পাদন করতে অনুমতি দেয়া কারোর ঠিক হবে না। যে ব্যক্তিটি মাদক গ্রহণ করল, সে ব্যক্তিটির দ্বারা সমাজ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কাজেই এসব ব্যক্তিগত কাজকে উৎসাহিত দেয়া যাবে না। বরঞ্চ তা দৃঢ় হাতে রহিত করতে হবে। যে কাজ একান্ত ব্যক্তিগত কিন্তু তা দেশের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য যদি হয় উপকারি তা উৎসাহিত করা হবে। মাদক কখনো মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। মাদকের প্রভাব নেতিবাচক। মাদকের প্রভাব আমাদের সমাজে আমাদের দেশে বিরাজ করুক আমরা চাই না।
মাদক প্রতিরোধে আমাদের সবার এগিয়ে আসতে হবে। যুব সমাজ ছাড়াও বয়স্ক লোকদেরও মাদক গ্রহণ করতে দেখা যায়। কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারীদের মাঝেও মাদকের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তারা ক্লাবে ও বাড়িতে মাদক গ্রহণ করে। মাদক গ্রহণ করার ফলে অবক্ষয়ের গতি আরো জোরালো হয় বলে এসব মাদক গ্রহণকারী দ্বারা দেশ ও সমাজের মঙ্গল বয়ে আনে না। যিনি মাদক গ্রহণ করে তিনি নিশ্চই ধার্মিক নন। কেননা সব ধর্মেই মাদক গ্রহণ নিষিদ্ধ। এতদ সত্ত্বেও সমাজের নানা শ্রেণির মানুষ মাদক গ্রহণ করে চলেছে একের পর এক। অধার্মিকদের দ্বারাই সমাজবহির্ভূত কাজ সংঘটিত হয়ে থাকে। খেলাধুলা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, চিত্তবিনোদন প্রভৃতির ক্ষেত্রে মানুষের নেশা থাকে। এসব নেশা ক্ষতিকর নয়। মাদক গ্রহণও একটি নেশা। তবে এ নেশা অকল্যাণকর। যে নেশায় ক্ষতির পরিমাণ অত্যধিক, সে নেশা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা একান্ত বাঞ্ছনীয়। হতাশা বা সঙ্গদোষে মাদক প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। মাদক গ্রহণকারীদের মাদক নেশার প্রতি অত্যধিক আকর্ষণ থাকে। মাদক গ্রহণ করার জন্য তাদের মন আনচান করতে থাকে।
মাদক গ্রহণ করার আগে মাদক গ্রহণকারীদের ভাবা উচিত যে, এসব গ্রহণ করার ফলে শরীরে সৃষ্টি হবে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া, যার ফলে নিজেও ভোগবে, সমাজের মানুষকেও ভোগাবে। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে হলে সমাজের মানুষকে ধর্মীয় জ্ঞান দিতে হবে। সমাজের মানুষকে মুত্তাকিনে পরিণত করতে হবে। মাদকবিরোধী স্লে­াগানে মুখরিত করে তুলতে হবে। কঠিন আইন প্রয়োগ করে মাদক গ্রহণ ঠেকাতে হবে। মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা হলে সমাজে অপরাধ তুলনামূলক কমে আসবে। মাদক গ্রহণের ফলে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে তা অবশ্যই হ্রাস পাবে এমনটাই ধারণা পোষণ করে দেশের বুদ্ধিজীবীরা। মাদকদ্রব্যের উৎপাদন রহিত করতে এখনই আমাদের সবার দীপ্ত শপথ করতে হবে। এর জন্য বেশি প্রয়োজন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা।
ষ লেখক : প্রধান সম্পাদক, সাপ্তাহিক হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদকদ্রব্য থেকে বিরত থাকা উচিত
আরও পড়ুন