পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : গ্যাস নেই। রান্না হয় না। হোটেল থেকে খাবার কিনে আনতে হচ্ছে চড়া দামে। ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে গৃহিণীরা। আর সার্বিকভাবে গ্যাস দূর্ভোগের কবলে পড়ে অকস্মাৎ ভুক্তভোগিদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। এমন চিত্র রাজধানীসহ এর আশপাশের অধিকাংশ এলাকার। এসব এলাকায় দিনে গ্যাসের চুলা জ্বলে না। কোন কোন এলাকায় মধ্য রাতে ঘন্টা তিনেক চুলা জ্বলে। আবার অনেক এলাকায় সন্ধ্যার পর গ্যাস পাওয়া গেলেও চুলা জ্বলে নিভু নিভু করে। গ্যাস সঙ্কটের কারণে অনেকেই কেরোসিন, কাঠের চুলা, রাইস কুকার ও ইনডাকশন ওভেনে রান্না করছেন।
অন্যদিকে, গ্যাস-সংকটের কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে অনেক সিএনজি স্টেশন। নারায়ণগঞ্জ, সাভার, টঙ্গী, কালিয়াকৈর, চন্দ্রা, গাজীপুরসহ রাজধানীর চারপাশের অনেক সিএনজি স্টেশনে দিনে-রাতে বেশির ভাগ সময়ই গ্যাস থাকে না। তেজগাঁও, শ্যামপুরসহ বিভিন্ন এলাকার শিল্প-কারখানার উৎপাদনও বিঘিœনত হচ্ছে গ্যাসের চাপ ঠিক না থাকায়।
এমন পরিস্থিতিতে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, গ্যাসের চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কম হওয়ায় এ সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তদুপরি, শীতকালে পাইপলাইনে গ্যাসের উপজাত জমে যাওয়ায় গ্যাস সঞ্চালনে বিঘœ ঘটে। তবে এর চেয়েও অবৈধ সংযোগ গ্যাস সঙ্কটের বড় কারণ বলে মনে করেন তিতাস কর্তৃপক্ষ। সঙ্কট সমাধানে তারা রেশনিং পদ্ধতিতে গ্যাস সরবরাহের চিন্তা ভাবনা করছেন।
আবাসিক খাতে গ্যাসের সঙ্কট দেখা দেয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষুদ্ধ গৃহিণীরা। রান্নার গ্যাস না পাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন ইব্রাহিমপুরের বাসিন্দা ঝরনা বেগম। তার বাসায় সকাল থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। এতে করে তার পরিবারের সদস্যদের দুই বেলার খাবার হোটেল থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। এমন দূর্ভোগের কারণে তাদের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি জানান।
পশ্চিম রামপুরার বাসিন্দা আকলিমা হোসেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। সকাল ৭টার মধ্যে তাকে বের হতে হয় কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে। গ্যাস সঙ্কটের কারণে তার পরিবারের সদস্যরা সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার বৈদ্যুতিক চুল্লিতে রান্না করছে। রাতে গ্যাস আসে ৯টার পর। তখন রাতের খাবার গ্যাসের চুলায় রান্না হয়।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা শিখা রানী বলেন, আমাদের এলাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্যাসের চুলা জ্বলে না। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, শীতের মধ্যে গভীর রাতে পরদিনের রান্না করে রাখতে হয়। এটা অসহনীয়। দূর্ভোগ কমাতে তিনি কখনো বৈদ্যুতিক চুলায় আবার কখনো কেরোসিনের চুলা ব্যবহার করছেন।
গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে-রামপুরা, বনশ্রী, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী ও পুরানো ঢাকার কিছু এলাকায় গ্যাস সংকট সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকার অনেক স্থানে সকালেই গ্যাস উধাও। গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক হতে হতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। কোথাও বা রাত। এছাড়া পশ্চিম ও পূর্ব দোলাইরপাড় মতিঝিলের কিছু অংশসহ পূর্বাঞ্চলীয় অনেক এলাকায় গত প্রায় এক মাস যাবত গ্যাস সংকট চলছে। এতে করে কয়েক হাজার পরিবার দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিশেষ করে সকাল ৭টার পর গ্যাসের চাপ কমতে থাকে। বিকালেও অনেক এলাকায় চুলা জ্বলে না। এসব এলাকার সমস্যার জন্য অবৈধ গ্যাস সংযোগকে দায়ী করেছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান।
তিতাস গ্যাস কোম্পানির পরিচালক (উৎপাদন) মীর মশিউর রহমান সমস্যার বিষয় স্বীকার করে বলেন, শীতে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তার মতে, এক হাজার ৮শ’ থেকে প্রায় দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে পেট্রোবাংলা থেকে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে সার্বোচ্চ এক হাজার সাড়ে ৪শ’ মিলিয়ন ঘনফুট। তিনি জানান, বিকেল পাঁচটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত সিএনজি স্টেশনগুলো যখন বন্ধ থাকে, তখন স্থানীয় আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাসের সমস্যা হয় না। সিএনজি স্টেশন চালু হলেই আবাসিক খাতে গ্যাসের প্রেসার কমে যায়। এছাড়াও শীতে গ্যাস জমে যাওয়ার ঘটনাতো রয়েছেই। তার মতে, সঞ্চালন লাইন পরিষ্কার করা গেলেও সরবরাহ লাইন পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পাইপলাইন পরিষ্কার করারও কোনো ব্যবস্থা নেই। পাইপলাইন পরিষ্কার করা গেলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতো। তিনি বলেন, সরবরাহ পাইপলাইন বসানোর সময় এলাকার একটি হিসাব অনুযায়ী পাইপ বসানো হয়েছে। কিন্তু যত্রতত্র অবৈধ সংযোগের কারণে সরবরাহ লাইন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়েই গ্যাসের এই সঙ্কট।
গ্যাসের অবৈধ সঙ্কট প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলা জানায়, বর্তমানে অবৈধ গ্রাহকের সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সরকারি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই এসব গ্রাহকরা অবৈধভাবে শিল্প ও আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ নিয়েছে এবং ব্যবহারও করছে।
অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা বিষয়ে বিতরণ কোম্পানিগুলোর অভিমত হচ্ছে, গ্যাস অ্যাক্ট থাকলেও তা কাজে আসছে না। স্থায়ীভাবে তাদের সংস্থায় কোনো ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় এ সংক্রান্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের কাছে বার বার চিঠি লেখার পরেও সাড়া মিলছে না। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অনেক সময় পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে পাওয়া যায় না। হুমকির মুখে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করেই কোনো কোনো সময় টাস্কফোর্সকে অভিযান গুটিয়ে ফিরে আসতে হয়।
বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাসিকসংযোগ রয়েছে-তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির। সেখানে মোট বৈধ আবাসিক গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। এরপর কর্ণফুলী এবং বাখরাবাদ কোম্পানির অবস্থান। স্বাভাবিকভাবে তিতাস, কর্ণফুলী ও বাখরাবাদেই অবৈধ সংযোগের সংখ্যা বেশি। বর্তমানে কোন কোন এলাকায় কোনটা বৈধ আর কোনটা অবৈধ সেটা চিহ্নিত করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ. জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু গতকাল ইনকিলাবকে বলেছেন, আবাসিকখাতে গ্যাস সংযোগ পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার কথা ভাবছে সরকার। তিনি বলেন, আমাদের গ্যাসের আধার ফুরিয়ে আসছে। চাহিদার তুলনায় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে কম। এ অবস্থায় তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস-এলপিজি ব্যবহার বাড়াতে হবে। এলপিজি সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলপিজি ব্যবহার শুরু হলে চাহিদা মোতাবেক অবশ্যই সরবরাহ করা যাবে।
অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের ব্যপারে কী ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে? জানতে চাইলে নসরুল হামিদ বলেন, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ব্যপারে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সঙ্কট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শীতে কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। তবে এই সমস্যা সাময়িক। এটি উত্তোরণের চেষ্টা চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।