পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রশাসনে পদোন্নতির গ্যাড়াকলে পড়েছেন সিনিয়র কর্মকর্তার। পদোন্নতিতে ‘দলবাজী’ গুরুত্ব পাওয়ায় ১০ ব্যাচ জুনিয়র কর্মকর্তাদের অধীনে চাকরি করতে হচ্ছে সিনিয়র কর্মকর্তাদের। বিদ্যমান সকল বিধি-বিধান চাপা দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কোটারি স্বার্থ রক্ষার্থে যুগ্মসচিব-অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতিতে অলিখিত বিশেষ পদ্ধতি অব্যাহত রাখা হয়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের ৮-১০ ব্যাচ জুনিয়র কর্মকর্তারা ‘বস’ হয়ে তাদের মাথার ওপর বসছেন। এ কারণে পদোন্নতি না পাওয়া সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে প্রশাসনের চেইন অব কমান্ড। জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমেদ ফোনে ইনকিলাবকে বলেন, বিধিমালা মেনেই পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এতে কেউ বাদ পড়লে সেটি বিবেচনায় নেয়া হয়। এখনে কোন অনিয়ম হয়নি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য শতকরা ৭৫ ভাগ এবং অন্যান্য ২৬ ক্যডারের জন্য ২৫ ভাগ পদ সংরক্ষিত। ফলে অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রশাসন ক্যাডারের সমব্যাচের সাথে উপসচিব পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। বরং প্রশাসন ক্যাডারের ৮ থেকে ১০ ব্যাচ জুনিয়র কর্মকর্তাদের সাথে অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের উপসচিব করা হচ্ছে।
গত বছরের ২১ ডিসেম্বর যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি প্রদানের আগে ২০০২ সালের পদোন্নতি বিধিমালা অনুযায়ী যোগ্যতা অর্জিত হলেই সকল ক্যাডারের উপসচিবদের পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হতো। ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ‘অলিখিত’ নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের যে ব্যাচের সাথে অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপসচিব হয়েছেন সেই ব্যাচের সাথে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি বিবেচনা করা হচ্ছে। এতে অন্যান্য ক্যাডার উপসচিবরা আরো পিছনে পড়ছেন।
প্রজাতন্ত্রেকর কর্মচারীদের পদোন্নতি বিধিমালা ২০০২ অনুযায়ী অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির জন্য ২০ বছরের চাকরিসহ উপসচিব পদে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। অপরদিকে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে ১৫ বছরের চাকরিসহ ৫ বছরের উপসচিব পদে অভিজ্ঞতা দরকার। এসব অলিখিত নিয়ম চালু করার পরও অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদোন্নতির সকল যোগ্যতা অর্জন করেন। তারপরও প্রশাসন ক্যাডারের ৮/১০ ব্যাচ জুনিয়র কর্মকর্তাদের পদোন্নতির যোগ্যতা শর্ত পূরণ না হওয়ার কারণে অন্যান্য ক্যাডারের উপসচিবদের পদোন্নতি আটকে রাখা হচ্ছে। এভাবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে ২৬ ক্যাডারের কর্মকর্তা ‘শুন্য’ করে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করা প্রশাসন ক্যাডারের উদ্দেশ্য।
যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যডারের জন্য পদ না থাকলেও ঢালাও পদোন্নতি দেয়া হয়। পদ ‘খালি’র কোনো বালাই নেই। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতিতে ১শ ৯৩ জনের মধ্যে অন্যান্য ক্যাডারের ২১ জন এবং গত মাসের ২০ তারিখে ১শ ৫৪ জনের মধ্যে অন্যান্য ক্যাডারের ১৯ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।
প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ঢালাও পদোন্নতি দেয়া হলেও অন্যান্য ক্যাডারের ক্ষেত্রে মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা স্ব স্ব ক্যাডারের স্থিত পদের সংখ্যা, পিআরএলে (এলপিআরের আগ মূহুর্ত) যাওয়া পদের সংখ্যা ইত্যাদি নানা হিসেব-নিকেশের মারপ্যাচে নগণ্য সংখ্যক পদোন্নতি দেয়া হয়। অথচ সুপ্রিম কোর্টের আপিলেট ডিভিশনের সিভিল আপিল নম্বর ২৯৪-৯৮/২০০৩ এর ওপর ২০১০ সালের ২৪ মে প্রদত্ত রায়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে- ‘যখনই কোন কর্মকর্তা ২০০২ সনের বিধিমালা অনুসারে উপ-সচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হইলেন, তাহা যে কোন ক্যাডারে হইতেই হউক না কেন, তিনি তখন একজন পরিপূর্ণ উপ-সচিব। তাহার পূর্বের ক্যাডার পরিচয় তখন বিলুপ্ত হইবে। তিনি সচিবালয়ের উচ্চতর উপ-সচিব পদে তখন তিনি অধিষ্ঠান। সেই অধিষ্ঠা status) লইয়াই অন্য সকল উপ-সচিবের সহিত এক শ্রেণীভূক্ত হইয়া সম-অধিকার লইয়া তিনি পরবর্তী উচ্চতর যুগ্ম-সচিব পদে বা পরবর্তীতে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হইবার জন্য বিবেচিত হইবেন। উপসচিবগণের মধ্য হইতে কোনরূপ কোটা ব্যতিরেকে পদোন্নতির মাধ্যমে যুগ্মসচিব পদে নিয়োগ পাইবেন’। (রায়ের পৃষ্ঠা- ৭৩-৭৪)। রায়ে সুস্পষ্টভাবে পূর্বতন ক্যাডার পরিচিতির বিলুপ্তি, এক শ্রেণিভুক্ত সকল উপসচিবের সম-অধিকার প্রাপ্তি ও যুগ্মসচিবের পদোন্নতিতে কোটা বাতিলের নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা যায়, পদোন্নতি বিধিমালা ২০০২ অনুযায়ী যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির সকল শর্ত পূরণ করা সত্বেও অন্যান্য ক্যাডারের ১৩তম, ১১তম, ১০ম, ৯ম, ৮ম ব্যাচের প্রায় শতাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতির জন্য বিবেচনাই করা হয়নি। অথচ ২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল প্রশাসন ক্যাডার থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ১১তম বিসিএস-এর ৭ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়। অথচ ওই একই তারিখে উপসচিব হিসেবে যোগদানকৃত এদের চেয়ে জ্যেষ্ঠতর প্রশাসন ব্যতীত অন্যান্য ক্যাডারের ৮ম, ৯ম, ১০ম, ১১তম, ১৩তম ব্যাচের কোনো কর্মকর্তাকেই পদোন্নতি দেয়া হয়নি। প্রশাসন ক্যাডারের ১১তম, ১৩তম ও ১৫তম ব্যাচের উক্ত কর্মকর্তাদের বিবেচনার পূর্বেই অন্যান্য ক্যাডারর জ্যেষ্ঠ ৮ম, ৯ম, ১০ম, ১১তম, ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের বিবেচনা না করে নিজেদের অলিখিত নিয়মও ভঙ্গ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকতারা ইনবিলাবকে বলেন, এ ধরণের অলিখিত নিবর্তনমূলক পদ্ধতি চালু থাকায় অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘিত হচ্ছে। তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তাদেরকে ৫/৭ ব্যাচ জুনিয়র কর্মকর্তাদের অধীনে চাকরি করতে হচ্ছে। তাদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস জ্যেষ্ঠতা বিধিমালা ১৯৮৩, জ্যেষ্ঠতার সাধারণ নীতিমালা, ক্যাডার পদে পদোন্নতি সংক্রান্ত নীতিমালা, সরকারের উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা ২০০২ সাল সকল নীতিমালা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তারা এটিকে জ্যেষ্ঠতার অপমান, পাবলিক সার্ভিস কমিশন গৃহীত পরীক্ষার অবমূল্যায়ন হিসেবে মনে করছেন। ২২ থেকে ২৮ বছর দক্ষতা-যোগ্যতা-দায়িত্বশীলতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেও পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ায় তারা দাপ্তরিকভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।