পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দক্ষিণাঞ্চলের সর্বপ্রথম চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঐতিহ্যবাহী শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ-এর ৩ দিনব্যাপী সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠান শুরু হতে যাচ্ছে আজ। এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে পুরো কলেজ ক্যম্পাস জুড়ে উৎসবের রূপ লাভ করেছে। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল মেডিকেল কলেজের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকসহ সাড়ে তিন হাজার চিকিৎসক এ উৎসবে যোগ দিচ্ছেন। আজ সকাল ৮টা থেকে সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানমালার সূচনা হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন আগামীকাল (সোমবার) বিকেল সাড়ে ৪টায়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। এতে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বরিশালে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেবেন বলে আশায় দক্ষিণাঞ্চলবাশী।
সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের অনুষ্ঠানমালায় স্মৃতিচারণ, বৈজ্ঞানিক অধিবেশন, খেলাধুলা, চা চক্র, মধ্যাহ্নভোজ, নৈশ ভোজ ছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত থাকছে। সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও বিদেশ থেকেও বিপুল সংখ্যক প্রাক্তন ছাত্র ও শিক্ষক বরিশালে পৌঁছতে শুরু করেছেন। রাজধানীর সাথে বরিশালের সকল নৌযান ছাড়াও সড়ক পথে বিলাসবহুল বাস ও ৩টি এয়ারলাইন্সের কোন এয়ারক্রাফটেই গতকাল থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত কোন আসন খালি নেই। নগরীর প্রথম সারির সব হোটেল ছাড়াও সরকারি-আধা সরকারি গেষ্ট হাউসগুলোও ১০ অক্টোবর পর্যন্ত মেডিকেল কলেজ কর্তৃক্ষ সংরক্ষণ করেছেন আগত মেহমানদের জন্য।
কলেজের খেলার মাঠে বিশাল বাতানুকুল প্যান্ডেল স্থাপন করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে একটি ১১ কেভি সঞ্চালন লাইনসহ ১১/.০৪ ট্রান্সফর্মারও স্থাপন করা হয়েছে। রং বেরঙয়ের আলোকমালায় ছেয়ে গেছে পুরো ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের সব অবকাঠামোগুলো নতুন সাজে সেজেছে।
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বরিশালে একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৬৪ সালের ৬ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আবদুল মোনায়েম খান বরিশাল মেডিকেল কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তৎকালীন বরিশাল পৌর শহরের দক্ষিণ আলেকান্দা এলাকার ৭৮ একর জমি অধিগ্রহণ করে এ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অধিগ্রহণকৃত জমিতে প্রাথমিকভাবে কলেজ ভবন নির্মাণ করে ১৯৬৮ সালের ২০ অক্টোবর ৫০ ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে বরিশাল মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়। ঐ বছরই ৯ নভেম্বর গভর্নর মোনায়েম খান আনুষ্ঠানিকভাবে এ মেডিকেল কলেজ উদ্বোধন করেন। প্রফেসর ডাঃ আনোয়ার সাদিক এ মেডিকেল কলেজের প্রথম প্রিন্সিপালের দায়িত্ব লাভ করেন।
আংশিক কলেজ ভবন নির্মিত হলেও হাসপাতাল ভবন নির্মাণ ক্রমশ পিছিয়ে পড়ে। ফলে প্রাথমিকভাবে অনতিদূরের সমাজ সেবা অধিদপ্তরের শিশু পরিবার ও অন্ধ স্কুল ভবন ছাড়াও নগরীর সদর হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করে সেখানেই চিকিৎসা সেবা ও ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে কলমে পাঠাদান চলতে থাকে। অর্থের অভাবে স্বাধীনতার পরেও হাসপাতাল ভবন নির্মাণ ক্রমশ পিছিয়ে পড়তে থাকে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ১৯৭৮-৭৯ অর্থবছরে ৫শ’ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি ক্যাম্পাসে নিজস্ব ভবনে চালু করা সম্ভব হয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে দক্ষিণাঞ্চলের কৃতি সন্তান দেশের গর্ব শের-ই-বাংলা এক ফজলুল হক-এর নামে বরিশাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নামকরণ করেন।
কালের পরিক্রমায় শের-এ-বাংলা মেডিকেল কলেজে বর্তমানে ৫০তম ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করছে। চলতি বছরে ৫১তম ব্যাচ ভর্তি হবে। বর্তমানে এ চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে এমবিবিএস কোর্সে ১ হাজার ২০ ছাত্র-ছাত্রী ছাড়াও বিডিএস কোর্সে আরো দেড় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত। এ মেডিকেল কলেজটিতে এমবিবিএস কোর্স ছাড়াও বর্তমানে অর্থোপেডিক, ফরেনসিক মেডিসিন, কার্ডিওলজি এবং ইএনটি’র ডিপ্লোমা কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়া এনাটমি ও ফার্মাকোলজিতে এমফিল ডিগ্রীও প্রদান করা হচ্ছে ।
তবে শিক্ষকের অভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির লেখাপড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন ছাত্র-শিক্ষকসহ অভিভাবকমন্ডলী। এখানে ২৮টি অধ্যাপক পদের বিপরীতে মাত্র ১২ জন কর্মরত আছেন। ৪২ সহযোগী অধ্যাপকের স্থলে আছেন মাত্র ১৮ জন। ৬৩ সহকারী অধ্যাপকের বিপরীতে আছেন মাত্র ৩৩ জন। ৪৪ প্রভাষক পদের বিপরীতে ৩৮ জন কর্মরত আছেন। এছাড়াও অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদও শূন্য পড়ে আছে বছরের পর বছর। অনেক বিভাগেই অধ্যাপক থেকে প্রভাষকের সবগুলো পদই শূন্য। ফলে দেশের ঐতিহ্যবাহী শের-এ-বাংলা মেডিকেল কলেজের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে।
এ অবস্থায়ই ঐতিহ্যবাহী বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ৫০ বছর অতিক্রম করছে। আজ থেকে এর সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব শুরু হচ্ছে। গত ৫০ বছরে এ মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে অনেকেই ইতোমধ্যে দেশের নামকরা চিকিৎসকের মর্যাদা অর্জন করেছেন। দেশের রাজনীতি ও চিকিৎসা সেবা ক্ষেত্রেও বরিশাল মেডিকেল কলেজের রয়েছে অনন্য অবদান। ’৬৯-এর গণঅভ্যূত্থানসহ ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধেও বরিশাল শের-এ-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিশাল অবদান রয়েছে।
সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ৩ দিনই বৈজ্ঞানিক অধিবেশনে চিকিৎসা সেবা নিয়ে আরো নতুন নতুন তথ্য উপাত্ত উঠে আসবে বলে আশা করছেন ওয়াকিফহাল মহল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।