Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মনের ঝাল মেটাতে তারেক রহমানের নাম জড়ানো হয়েছে -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১:৫৭ পিএম | আপডেট : ২:০৩ পিএম, ৫ অক্টোবর, ২০১৮

প্রকৃত অপরাধীদের আড়ালে রেখে কেবল মনের ঝাল মেটানোর জন্য তারেক রহমানকে ২১ আগস্ট বোমা হামলায় জড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ২১ আগস্ট বোমা হামলা মামলায় প্রকৃত অপশক্তিকে পর্দার অন্তরালে ঢেকে রেখে বিচারিক কার্যক্রম চলাকালীন অবস্থায় চার্জশিট ফিরিয়ে এনে সম্পূরক চার্জশিট তৈরী করে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম জড়ানো হয়েছে মনের ঝাল মেটাতে। এজন্য আইনী প্রক্রিয়াকে হাতের মুঠোয় নিয়ে কুটিল চক্রান্তের মাধ্যমে তারেক রহমানকে ভিকটিম করা হয়েছে। সমগ্র ঘটনাটি এ সময়ের কোন এক কাশিমবাজার কুঠিতে চক্রান্তজাল বুনেছে চক্রান্তকারীরা। শুক্রবার (৫ অক্টোবর) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দী, কয়েক মাস পরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা। অধিকারহারা জনগণ একটি জোরালো আন্দোলনের জন্য অগ্নিগর্ভ হয়ে আছে। এমনিতে সারাদেশে ঝাঁকে ঝাঁকে গায়েবী মামলায় এক অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। তার ওপর দেশজুড়ে বাসাবাড়ীতে চলছে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে খোঁজার ধুম। মধ্যযুগের ‘ডাইনী শিকারের’ মতো পাইকারী হারে গ্রেফতারের শিকার করা হচ্ছে নেতাকর্মীদের। ফাঁপা উন্নয়নের জিগির তুলে জনগণের অর্থের লুটপাট, বেপরোয়া গুম-খুন আর রক্তপাতের দমবন্ধ করা পরিস্থিতির সুযোগের সদব্যবহার করতেই ২১ আগস্ট বোমা হামলার রায়ের দিন ধার্য্য করা হয়েছে।
ওই সময়ের কথা তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, সভার আগের দিন (২০-০৮-২০০৪) থেকে ২২ নভেম্বর ২০০৬ পর্যন্ত সোয়া তিন বছর শেখ হাসিনা কোন অনুষ্ঠানেই বলেননি যে, ‘পুলিশ সেদিন তাঁর সভা করার অনুমতি দেয়নি। কিন্তু ২০১২ সালের ২২ আগস্ট তিনি বলেন, 'সভার অনুমতি দেয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ সভা করার পরিকল্পনা বাদই দিয়েছিল। শেষ রাতে অনুমতি দেয়া হয়।'
এসব ঘটনায় রিজভী প্রশ্ন রেখে বলেন, উনি যদি সমাবেশের পরিকল্পনা বাদই দিয়ে থাকেন, তাহলে দলের পক্ষ থেকে কোন স্টেটমেন্ট দেননি কেন? দুপুর ১টা পর্যন্ত মুক্তাঙ্গনে আওয়ামী লীগের সমাবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকার পর কেন তিনি সমাবেশ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে নিয়ে গেলেন? সমাবেশে পুলিশের অনুমতি নিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য অসঙ্গতিপূণ ও রহস্যজনক। ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সমবেদনা জানিয়ে সুধাসদনে আসতে চেয়ে ফোন করেছিলেন, কিন্তু ইতিবাচক সাড়া পাননি। ঘটনার পরদিনই বেগম জিয়া তিন দফা মিটিং করে অপরাধীদের ধরা ও আইনের আওতায় এনে সবধরণের আইনী ব্যবস্থার নির্দেশ দেন, এগুলো তিনি নিজেই মনিটরিং করেন। এ বিষয়ে সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতার আহবান কামনা করে প্রকাশ্যে বিবৃতিও দেন।
তিনি বলেন, তৎকালীন বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই-কেও ঘটনাস্থলে আনার ব্যবস্থা করেন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু শেখ হাসিনা এফবিআই-কে কোন সহযোগিতা করেননি।
প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশ এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের কারণেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে এ বিষয়ে রাষ্ট্রের সকল গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধানদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এই মর্মান্তিক ঘটনার সংবাদদাতাকে কোটি টাকা পুরস্কারের ঘোষনা দেয়া হয়।
তৎকালীন বিরোধী দলের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবীর প্রতি সম্মান দেখিয়েই এই ঘটনা অনুসন্ধানকল্পে হাইকোর্টের একজন সিনিয়র বিচারপতি’র নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করে ৩ সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
যে প্রতিবেদন রিপোর্ট এ সংক্রান্তে নিয়মিত মামলার তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে বিবেচনায় তখন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। যা এখন প্রকাশে আর কোন বাধা নেই। কিন্তু বর্তমান সরকার তা করছে না।
বিএনপির এ নেতা বলেন, কোন ক্লু-লেস ফৌজদারী ঘটনা তদন্তের মূল সূত্র ও ভিত্তিই যেখানে হচ্ছে-সংঘটিত ঘটনার বেনিফিশিয়ারি কে বা কারা, আর ক্ষতিগ্রস্ত কে বা কারা, তা নিরুপণের মাধ্যমে তদন্তে কার্যে অগ্রসর হওয়া। দালিলিক সাক্ষ্য-প্রমানের সূত্র ধরে যদি তা বিবেচনা করা হয়, তাহলে এই ঘটনার ক্ষতিগ্রস্ত যে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোট সরকার, আর বেনিফিশিয়ারি হবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ; সেটি অনুধাবনের জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন হয় না।
তিনি বলেন, বিএনপি’র ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা ও আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভুতি সৃষ্টির জন্যই এই বোমা হামলা করা হয়েছে বলেও জনগণ মনে করে এবং এই মামলার রায়ের তারিখ আসন্ন নির্বাচনের পূর্বে নির্ধারণ করাটাও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শেখ হাসিনার আমলে বিচারের রায় কি হবে তা জনগণ ভালভাবেই জানে। নির্দোষ বেগম খালেদা জিয়াকে কুটকৌশল করে কিভাবে কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে তাও জনগণ জানে। যেদেশে প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নলের মুখে দেশ ছাড়তে হয়, যেদেশে প্রধান বিচারপতি বিচার পান না, সেখানে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে কি বিচার হবে সেটি নিয়ে জনগণ চিন্তিত নয়। কারণ ২১ আগষ্ট বোমা হামলা রায় ঘোষনার আগেই প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীরা বলেছেন-এই রায়ের পর নাকি বিএনপি আরও বিপদে পড়বে। তার মানে এটা সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, ২১ আগষ্টের রায় কি তাহলে সরকারের ডিকটেশনে লেখা হচ্ছে ?
কিন্তু সেদিন বেশী দুরে নয়, গণতন্ত্র পূণরুদ্ধার হবেই। আর গণতন্ত্র পূণরুদ্ধার হলেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। সুতরাং যত ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল দিয়ে ঘিরে রাখুন না কেন, একতরফা নির্বাচন আর এদেশে জনগণ হতে দেবে না।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ- দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমূখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ