সরকার প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে সরকার বিরোধী মত শুণ্য করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নামে মামলা তারই বহিঃপ্রকাশ। মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আওয়ামী সরকার আর কোনভাবে বিরোধী দলের অস্তিত্ব মানতে পারছে না। তারা এখন ফ্যাসিবাদের উত্তুঙ্গ মাত্রায় পৌঁছে গেছে। ক্ষমতাকে যক্ষের ধনের মতো আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য কুটিল রাজনীতি, ষড়যন্ত্র আর তঞ্চকতাই হচ্ছে আওয়ামী রাজনীতির পরিচিতি। সরকারপ্রধানসহ আওয়ামী নেতাদের প্রতিদিনের ভাষা, সংলাপ, জবাব সন্ত্রাসী-ক্রুরতার আস্ফালন ছাড়া অন্য কিছু নয়। যাদের রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি পীড়ণ আর রক্তপাত নির্ভর, তারা জনমতের ভয় করে না-জবাবদিহিতা তো দুরে থাক। এমনধারা নীতির কারণেই গত পরশু
বিএনপি’র বিশাল জনসমাবেশের পর থেকে সরকার আরও বেশি ক্ষিপ্ত ও প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন,
বিএনপির জনসভা শেষে নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের পরও সরকার পরিতৃপ্তি হয়নি। এরপর
বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের তালিকা ধরে তাদের বিরুদ্ধে হাস্যকর মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। হাতিরঝিল থানায় পুলিশের কাজে বাধা ও নাশকতার মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর,
বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবির রিজভী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ ৫৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের কাছে ‘আষাঢ়ে গল্পের’ একটা ‘ফরমেট’ সবসময় প্রস্তুত করা থাকে। সময় মতো
বিএনপি’র নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে সেগুলো ব্যবহার করা হয়। এবারেও পুলিশ তাই করেছে।
রিজভী বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে সরকার ছক ধরে এগুচ্ছে। সারাদেশ নি:শব্দ ও জনশুণ্য করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা সেটিরই প্রথম পদক্ষেপ।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ক্ষমতাসীনদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে-মান মর্যাদা, নীতি ও নৈতিকতার অধিকারী একমাত্র তারাই। এদেশে আর কোন গুনী ব্যক্তি নেই, সব গুনের অধিকারী কেবল আওয়ামী নেতা ও মন্ত্রীরাই। শুধু দেশের সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলই নয়, বিভিন্ন নিরপেক্ষ পেশাজীবী সংগঠন, নাগরিক সমাজ এবং মুক্ত চিন্তার লেখক-কলামিষ্ট-শিল্পী সবারই নৈতিক মানদন্ড বিচার করার একমাত্র অধিকারী সরকারের অতি ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা। অর্থাৎ ক্ষমতাসীনদের যারা সমালোচনা করবে তারা হবে হীন, অমর্যাদাশালী, অকিঞ্চন, অন্ত্যজ ও ব্রাত্যজন। অন্তত: প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এমনটিই ভাবছেন। তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে বলেছেন-সম্পাদক পরিষদের নৈতিকতা বলে কিছু নেই।
জয়ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সিনিয়র সাংবাদিকরাই সম্পাদক পদে উন্নীত হন। তাঁরা সমাজের সঙ্গতি-অসঙ্গতি, শুভ-অশুভসহ নানা বিষয় গণমাধ্যমে প্রতিফলনে প্রধান দায়িত্ব পালন করেন। সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতির নানা বিভাজন ও জটিলতা বিচার বিশ্লেষণ করে মানুষকে পথ দেখাতে অভিমত ব্যক্ত করেন। অথচ তথ্য উপদেষ্টার মতে এই সমস্ত গুনী ব্যক্তিদের নৈতিকতা নেই। তাহলে নৈতিকতা আছে কাদের ? ভোটারবিহীন সরকারের কী নৈতিকতা আছে ? পদ্মা সেতু, শেয়ার মার্কেট, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক, কেন্দ্রীয় ব্যাংক লোপাটকারীদের কী নৈতিকতা আছে ? যারা কয়লা-পাথর গিলে খেয়েছেন তাদের কী নৈতিকতা আছে ? দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারের নামে প্রহসনকারীদের কী নৈতিকতা আছে ?
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার জোরে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়েরকারীদের কী নৈতিকতা আছে ? গণমাধ্যম দখলসহ বিরোধী দলের জোত জমি, স্থাপনা দখলকারীদের কী নৈতিকতা আছে ? গুম, খুন, গুপ্তহত্যা, অপহরণ, গ্রেফতার করে অস্বীকারকারীদের কী নৈতিকতা আছে ? নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের হোতাদের কী নৈতিকতা আছে ? টেন্ডার বানিজ্য-গ্রেফতার বানিজ্য-শিক্ষা বানিজ্য, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস বানিজ্য, ভর্ত্তি বানিজ্য ও হলের সীট বানিজ্যকারীদের কী নৈতিকতা আছে ? দেশব্যাপী হাজার হাজার মিথ্যা মামলায় বিরোধী দলের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীদের আসামী করে অরাজকতা তৈরীকারীদের কী নৈতিকতা আছে ? যারা রুচি বিগর্হিত ভাষায় বিরোধী দলের প্রতি অশ্রাব্য-কুশ্রাব্য ভাষা প্রয়োগ করেন তাদের কী নৈতিকতা আছে ?
রিজভী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মৃত বাকশালের বিভিষিকাময় উত্থান। জনগণকে শত্রুপক্ষ মনে করে বলেই তাদের টুঁটি টিপে ধরতেই এই কালো আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। সরকারের অন্যায়-অনাচার-দূর্নীতির জারিজুরি ফাঁস বন্ধ করাই এই আইনের মূল লক্ষ্য। এই কারণেই এই কালো আইনের বিরুদ্ধে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের সোচ্চার প্রতিবাদকে ক্ষমতাসীন মহল ভাল চোখে দেখছে না। একদিকে মন্ত্রীরা বলছেন-এই আইনের গণবিরোধী ধারাগুলো নিয়ে মন্ত্রী পরিষদ বৈঠকে আলোচনা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আবার অন্যদিকে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রতিবাদকে বিদ্রুপ করা হচ্ছে। গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা পরস্পরের পরিপূরক-এটাই সার্বজনীন সত্য, কিন্তু ভোটারবিহীন সরকার এই সত্যকে বারবার পাশ কাটিয়ে গেছে, একদলীয় শাসনের নিয়ন্ত্রণ মজবুত রাখার জন্য।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এড.তৈমুর আলম খন্দকার, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ।