Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনবল ও বেতন নীতিমালা পাচ্ছে ইবতেদায়ী মাদরাসা

প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

বেসরকারি মাদরাসার জনবল ও এমপিও নীতিমালার পর এবার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা সংক্রান্ত নীতিমালা করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা স্থাপন, স্বীকৃতি, পরিচালনা, জনবল কাঠামো এবং বেতন ভাতাদি/অনুদান সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৮ এর অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১৩ সেপ্টেম্বর নীতিমালার সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর এ নীতিমালার অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর বিষয়টির ওপর মতামত নিতে অর্থ মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে পাঠালেই চূড়ান্ত করে নীতিমালা জারি করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার জনবল কাঠামো ও বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিটি প্রথম করেছিল এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে একমাত্র সংগঠন হিসেবে উত্থাপন করেছিল। তাদের দাবির সমর্থনেই প্রধানমন্ত্রী এই নীতিমালা অনুমোদন করেছেন। নীতিমালাটি চূড়ান্ত হলে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন সংযুক্ত মাদরাসার শিক্ষকদের সমান হয়ে যাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে বেশ কিছু উদ্যোগের কারণে মাদরাসা শিক্ষায় অভাবনীয় পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, স্কুল-কলেজের প্রধানদের সাথে মাদরাসার সুপার/অধ্যক্ষদের বেতন বৈষম্য দূর করা, শিক্ষার্থীদের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সমান সুযোগ, ৫২টি মাদরাসায় বিষয় ভিত্তিক অনার্স চালু, ৩৫টি মাদরাসাকে মডেল মাদরাসায় রূপান্তর, সিলেবাসকে উন্নত ও আধুনিক করা হয়েছে। যার প্রতিটি দাবিই ছিল মাদরাসা শিক্ষকদের একক ও সর্ববৃহৎ শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শিক্ষানীতিতে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে ওঠার পর ২০১১ সালের ২০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে দ্রুত আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠা, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, ইবতেদায়ী শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধিসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানান জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীনের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের দাবির প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেন। প্রধানমন্ত্রী জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃবৃন্দসহ উপস্থিত আলেম-ওলামাদের সাথে আলোচনার পর পর্যায়ক্রমে তাদের দাবি বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। এরই প্রেক্ষিতে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর করাসহ সকল দাবি একে একে পূরণ করা হয়। যার সর্বশেষটি হচ্ছে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকদের জনবল কাঠামো সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের কাজ। শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদও জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের বিভিন্ন সভায় উপস্থিত হয়ে মাদরাসা শিক্ষকদের বলেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে দাবিগুলো করেছে তার প্রতিটিই তিনি পূরণ করেছেন। কোন দাবির জন্যই মাদরাসা শিক্ষকদের আন্দোলন করার প্রয়োজন নাই। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী শিক্ষকদের বিষয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার তাদের বেতন ৫০০-১০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা করেছে। পরবর্তীতে আরও বৃদ্ধি করা হবে। জমিয়াতকে দেয়া সেই কথারই প্রতিফলন দেখা যাবে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা সংক্রান্ত নীতিমালায়।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা সংক্রান্ত নীতিমালা অনুমোদন করায় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়েছেন মাদরাসা শিক্ষকদের একক ও সর্ববৃহৎ শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন ও মহাসচিব অধ্যক্ষ শাব্বীর আহমদ মোমতাজী।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, ২০১১ সালে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে বেশ কিছু দাবি জানায়। প্রধানমন্ত্রী জমিয়াতের সেসব দাবির বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিলেন এবং ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, বেতন-জনবল কাঠামো, বেতন বৈষম্য দূর করা, শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জমিয়াতের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের ধারাবাহিক কার্যক্রমের অন্যতম এটি। জমিয়াতের সেই সময়ের দাবিগুলোর অন্যতম স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা সংক্রান্ত নীতিমালায় অনুমোদন প্রদান করায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক মুবারকবাদ জানান। একই সাথে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকেও ধন্যবাদ জানান।
মাদরাসা শিক্ষাধারার প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ইবতেদায়ী স্তর হিসেবে পরিচিত। যেসব মাদরাসায় দাখিল, আলিম, ফাজিল ইত্যাদি স্তরের সাথে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সংযুক্ত স্তরকে সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদরাসা আর যেসব মাদরাসায় শুধু প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়, সেগুলোকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা বলা হয়।
এমপিওভুক্ত সংযুক্ত মাদরাসার শিক্ষকরা নির্ধারিত হারে বেতন-ভাতা পেয়ে থাকে। এসব মাদরাসায় প্রধান শিক্ষকরা প্রতিমাসে ১০ হাজার ৩৮৮ টাকা এবং সহকারী শিক্ষকরা ৯ হাজার ৯৮৮ টাকা হারে বেতন পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে ২০১৭ সাল থেকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসায় প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে মাত্র ৪ হাজার ৫২৯ জনের বেতন এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ৩০০ টাকা করা হয়।
বর্তমানে দেশে ৩ হাজার ৪৩৩টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার ২৪৩ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন।
১৯৮৩ সালের ১৫ অক্টোবর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা মঞ্জুরির জন্য নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। এরপর বিভিন্ন সময় আদেশ জারির মাধ্যমে নীতিমালার কিছু কিছু বিষয় হালনাগাদ করা হয়েছে। কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ নীতিমালা না থাকায় শিক্ষকদের শূন্যপদ পূরণ, নতুন প্রতিষ্ঠানের অনুদানপ্রাপ্তি এবং নতুন পাঠ্যসূচির সাথে সমন্বয় করে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘ দিন বন্ধ রয়েছে। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের দাবির প্রেক্ষিতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার নীতিমালা প্রণয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (মাদরাসা) অহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি খসড়া নীতিমালাটি প্রণয়ন করে। এটির অনুমোদন দেন শিক্ষামন্ত্রী। নীতিমালাটি অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগে পাঠালে নীতিমালায় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতিগত অনুমোদন গ্রহণ করে পুনরায় প্রস্তাব পাঠতে বলা হয়। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতিগত অনুমোদনের জন্য নীতিমালাটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হলে প্রধানমন্ত্রী গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেন।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদরাসা) রওনক মাহমুদ বলেন, প্রথমে আমরা নীতিমালাটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। তারা সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতিগত অনুমোদন করাতে বলেন। সেজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছিলাম। তিনি অনুমোদন করেছেন। এখন অর্থমন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। তারা মতামত দিলেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে।



 

Show all comments
  • জাহিদ হাসান ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৮:৪৫ এএম says : 0
    অনেক দিন পর শিক্ষকদের শান্তির sms এলো
    Total Reply(0) Reply
  • SAMINUL HAQUE ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৬:২৯ পিএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রী সহ সরকরের পরিষদের সবাই কে ধন্যবাদ ।
    Total Reply(0) Reply
  • মজির উদদিন ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৯:১৬ পিএম says : 0
    সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে,অর্থ মন্ত্রনালয়ের সু দৃষ্টি কামনা করছি
    Total Reply(0) Reply
  • মোরশেদ অালম(আল-আজাদ) বিএ ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:৪৫ পিএম says : 0
    দলবল নির্বিশেষে এইটাই বলতে পারি। গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রান খুলে কাজ করে যাচ্ছে। যেইটা জাতির কাছে স্বরনিয়
    Total Reply(0) Reply
  • সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে, অর্থ মন্ত্রনালয়ের সু দৃষ্টি কামনা করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃরাজু আহম্মেদ ২৫ নভেম্বর, ২০১৮, ৭:০৪ পিএম says : 0
    এই খবর পরে অনেক ভালো লাগলো এই মাদ্রাসার শিক্ষকরা অনেক কষ্টো করেছন।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আইয়ুব আলী ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১০:৫৪ পিএম says : 0
    আওয়ামী লীগ সরকারের প্রত্যেকটি কাজই মহৎ ও উন্নয়নমূলক ।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
    Total Reply(0) Reply
  • মো,বিল্লাল হোসাইন ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১১:০৪ এএম says : 0
    মানণীয় প্রধান মন্তীকে।শুকরিয়া ও ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • MD.ARSHADUL ISLAM ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ৯:২২ পিএম says : 0
    এ খবরটি শুনে ভাল লাগল। কতৃপক্ষের সু দৃষ্টি কামনা করছি। ধন্যবাদ প্রধান মন্ত্রী
    Total Reply(0) Reply
  • মিনহাজ উদ্দিন ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ৯:১৭ এএম says : 0
    ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • একেএম,মানিক ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১১:৩৯ এএম says : 0
    এই খবর অনেক দিন আগের,কখন থেকে হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে কখন হবে জারি এইটা আমি একটু জানতে ছাই
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ ইব্রাহীম ২ মার্চ, ২০১৯, ১১:২৪ এএম says : 0
    সকল এবতেদায়ী মাদ্রাস জাতীয়করণ হবে ইনশাআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদরাসা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ