Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঘুষ যেখানে ওপেন সিক্রেট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

বুড়িমারী স্থলবন্দর ও মংলা সমুদ্রবন্দর দিয়ে ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না। কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও স্তরে স্তরে ঘুষ দিতে হয়। এই ঘুষ ওপেন সিক্রেট। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মাংলা বন্দর ও বুড়িমারী স্থলবন্দরে যোগসাজশে ও বলপূর্বক দুর্নীতি হচ্ছে। এটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। গতকাল আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা টিআইবির ধানমন্ডির নিজস্ব কার্যালয়ে ‘মংলা বন্দর ও কাস্টম হাউজ এবং বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন ঃ আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়ায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন এই তথ্য তুলে ধরা হয়। গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন টিআইবির কর্মকর্তা মনজুর ই খোদা ও মোঃ খারশেদ আলম।
টিআইবির গবেষণা বলছে, মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানিতে ঘুষ দিতে হয় ব্যবসায়ীদের। সব নথিপত্র ঠিকঠাক থাকার পরেও একেকটি গাড়ির শুল্কায়নে মোংলা কাস্টমস হাউসের ছয়টি বিভাগে ৪ হাজার টাকা এবং সেই গাড়ি ছাড় করতে বন্দরের ১০টি স্থানে ১ হাজার ৭১৫ টাকা ঘুষ দিতে হয়। কেবল গাড়ি নয়, দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা দিয়ে যে কোনো পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিতে হয় ব্যবসায়ী কিংবা তাঁদের প্রতিনিধিদের। আমদানি পণ্যের প্রতি চালানের (বিল অব এন্ট্রি) বিপরীতে শুল্কায়নের জন্য কাস্টমসে ৩৫ হাজার ৭০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। সেই পণ্য বিকেল পাঁচটার মধ্যে ছাড় করতে হলে ৬ হাজার টাকা এবং এর পরে ছাড় করতে হলে বাড়তি ১ হাজার ২০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। এ ছাড়া বন্দরে প্রতিটি জাহাজ আগমন ও বহির্গমনে কাস্টমস হাউসে ৮ হাজার ৩৫০ টাকা ও বন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ২১ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়।
মোংলার পাশাপাশি দেশের সর্বউত্তরের বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন নিয়েও গবেষণা করেছে টিআইবি। সেখানেও পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে নিয়মবহির্ভূত অর্থের লেনদেন বা ঘুষের প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটির গবেষকেরা। বুড়িমারীর আমদানি পণ্যের প্রতিটি চালানের (বিল অব এন্ট্রি) বিপরীতে শুল্ক স্টেশনে ১ হাজার ৭৫০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। রপ্তানির বেলায় এটি দেড় হাজার টাকা। আবার আমদানি করা পণ্য ছাড় করতে স্থলবন্দরের কর্মকর্তাদের ৩শ টাকা ঘুষ দিতে হয়। রপ্তানিতে এই ঘুষ ২শ টাকা।
গবেষণায় বলা হয়, দেশে আমদানি হওয়া গাড়ির ৬০ শতাংশ মোংলা বন্দর দিয়ে আসে। এ ছাড়া ক্লিনকার, সার, কয়লা, এলপি গ্যাস আমদানি করা হয় এই বন্দর দিয়ে। রপ্তানি হয় চিংড়ি, পাট, সিরামিক ইত্যাদি পণ্য। ২০১৬-১৭ অর্থবছর মোংলা বন্দর ২২৭ কোটি টাকা ও মোংলা কাস্টমস ৩ হাজার ৯৯ কোটি টাকা আয় করে। অন্যদিকে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও ভুটান থেকে বোল্ডার, সবজিবীজ, ভুট্টা, পেঁয়াজ ইত্যাদি পণ্য আমদানি হয়। তবে এই বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যের ৯০ শতাংশের বেশি পাথর। ২০১৬-১৭ অর্থবছর বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন ৭২ কোটি ৫০ লাখ টাকা আয় করেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুই বন্দরে অটোমেশন ও ওয়ান স্টপ সেবা চালু হলেও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অকার্যকরকের রাখা হয়েছে। কিছুক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসলেও সার্বিক তথ্য উদ্বেগজনক। উভয় প্রতিষ্ঠানেই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় কাঠামো ব্যবস্থা উপস্থিত থাকলেও তার প্রায়োগিক পর্যায়ে নেই। এজন্য সকল পর্যায়ে ওয়ান স্টপ ও অটোমেশন ব্যবস্থা চালু নিশ্চিত করতে হবে। ##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘুষ যেখানে ওপেন সিক্রেট

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ