পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সর্বত্রই এক আওয়াজ গণবিরোধী এই আইন বাতিল করো। সম্পাদক পরিষদ, সাংবাদিক সমাজ, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক, নাগরিক সমাজ ও দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংগঠন প্রতিবাদ করে এই আইনকে গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী অবিহিত করেছেন। নতুন এই আইন ’৭৩ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের চেয়েও ‘ভয়ঙ্কর কালো’ হিসেবে অবিহিত করে আইনটিতে স্বাক্ষর না করার জন্য মহামান্য প্রেসিডেন্টের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। রাজনীতিকরা এই আইনকে গণমাধ্যমের হাত-পা বেঁধে ফেলার সঙ্গে তুলনা করে আইনটিকে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হিসেবে অবিহিত করছেন। তারা বলেছেন, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে এই সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চায়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে সাংবাদিক মহলের উদ্বেগের কারণে কয়েক মাস আগে ধারাটি বাতিল করে আইন প্রণয়নের অঙ্গিকার করে সরকার। ওই সময় সম্পাদক পরিষদ, প্রবীণ সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের প্রতিবাদের মুখে প্রস্তাবিত আইনটি থেকে ৫৭ ধারা বাতিল করে সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু নতুন আইনে ‘৫৭ ধারা থাকবে না’ দাবী করা হলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৮, ২৯, ৩১ ধারায় ৫৭ ধারা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ নিয়ে চলছে সর্বত্রই প্রতিবাদ। ১২টি সাংবাদিক সংগঠন আইনটি বাতিলের দাবীতে ২২ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ সরাদেশে এ কর্মসূচি পালিত হবে। বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। এ আইন সংবিধান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গণতান্ত্রিক দেশেতো নয়ই কোন সভ্য সমাজে এ ধরনের আইনের কথা কল্পনাও করা যায় না। ক্ষমতাসীন দলের অনুগত সাংবাদিকরাও সংসদে পাস হওয়া এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধিতা করছেন। তারা সরকারকে এ আইনটি বাতিল করার পরামর্শ দিচ্ছেন। এর আগে সম্পাদক পরিষদ আইনটি সংসদে পাস না করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বিবৃতি দেয়।
এ প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বলেছেন, যে আইন তৈরি হচ্ছে, সে আইন জনগনের কল্যাণে না বিরুদ্ধে ব্যবহার হচ্ছে সেটা দেখা জরুরী। ডিজিটাল মিডিয়াকে সহয়তা করা, ডিজিটাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে জনগণ, ব্যক্তি যাতে সুবিধা নিতে পারে, সে নিরাপদ ও নিরাপত্তাবোধ করে সেটা নিশ্চিত করা। অথচ নিরাপত্তার পরিবর্তে কোন কোন ক্ষেত্রে আইনের অপব্যাবহার হচ্ছে। বর্তমান সমাজের জন্য গণমাধ্যমের অনেক ভূমিকা রয়েছে। সেটা পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশন, অনলাইন এবং সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা নিউ মিডিয়ার সকলের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, সব সাংবাদিকই অনুসন্ধান করে। প্রত্যেক সাংবাদিকের কাজ হচ্ছে সত্যটা খুজে বের করা। বিশিষ্ট সাংবাদিক গবেষক আফসান চৌধুরী বলেন, আমার মনে হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সাথে রাজনৈতিক বিষয় জড়িত আছে। নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যাখ্যা কি হবে? এটা নিয়ে সমস্যা হবে। আমার দুঃচিন্তা হচ্ছে ব্যাপক হারে মামলা বেড়ে যাবে। যে কাউকে অসুবিধা করতে হলে মামলা করে দিবে। যে কাউকে ঝামেলা করতে হলে মামলা করে দিবে। সরকারের অবশ্যই আইন করার অধিকার আছে। যেহেতু ডিজিটাল জগৎ অনেক বড়। কিন্তু সরকার কি আদৌ যারা আইন লংঙ্ঘন করছে পক্ষে বা বিপক্ষে তাদের কি সরকার সামলাতে পেরেছে?
সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ‘সুষ্ঠু ও মুক্ত সমাজের পরিপস্থি আইন’ হিসেবে অবিহিত করেছেন সম্পাদক পরিষদের সাধারন সম্পাদক ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। তিনি বলেন, এই আইনে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হবো। সরকার যে ভাবছে কালো আইন হবে না, একটা আইন করে লাভবান হবে, এটা আমি মনে করি না। এ আইনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ কলষিত হবে, গণতন্ত্রের বিকাশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সাংবাদিকরা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসছে এবং সেই পুলিশের ধারা ৪৩ এ অধিকারও দেয়া হচ্ছে যে পরোয়ানা ব্যাতিত তল্লাসী জন্দ ও গ্রেফতার করা যাবে। একদিকে একটা অফিসিয়াল সিক্রেসি আইন আছে অন্যদিকে পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ দিচ্ছেন এবং অধিকার নিচ্ছেন পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতারের। তাহলে সাংবাদিকদের প্রটেকশন কী? ইংরেজি দৈনিক নিউজ টু ডে’র সম্পাদক প্রখ্যাত সাংবাদিক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এটা গণমাধ্যমের জন্য ভালো সংকেত নয়। অনেকে এটিকে অশনিসংকেত বলেন। ১৯৭৫ সালে যখন স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট বা বিশেষ ক্ষমতা আইন পাস হয় তখনো আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটা স্বাধীন সাংবাদিকতায় বাধা হবে না। কিন্তু ৩২ ধারায় ১৯২৩ সালের অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আমরা জানি ওই অ্যাক্টটি ব্রিটিশ আমলে ঔপনিবেশিক শাসকদের অনিয়ম-দুর্নীতির খবর যাতে প্রকাশ না হয় সে জন্য করা হয়। সাংবাদিকদের জন্য নয়। ওই আইনটিকে তো আবার তুলে আনা হয়েছে। এই আইনের একটি ধারা রয়েছে যা অজামিনযোগ্য। ৫৭ ধারায় যেসব মামলা হয়েছে এগুলোও তো চলবে। যখন সাংবাদিকতার ওপর ভয় থাকে, মাথার ওপর খড়্গ থাকে, তখন কিন্তু স্বাধীন সাংবাদিকতা ক্ষতিগ্রস্থ-বাধাগ্রস্থ হয়। এই আইন পাস হওয়ার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র, স্বাধীন সাংবাদিকতা, মিডিয়া, কথা বলার স্বাধীনতা বাধাগ্রস্থ হবে। এতে করে আমরা সামনের দিকে না এগিয়ে পেছনের দিকে যাব। বিএফইউজের সাবেক সভাপতি এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টিভির সিইও মনজুরুল আহসান বুলবুল ডিজিটাল আইন নিয়ে বলেন, এই আইনে কয়েকটি বিষয়ে আমাদের মতামত গ্রাহ্য করা হয়েছে। আমরা যেমন বলেছিলাম তথ্য অধিকার আইনকে সম্পৃক্ত করা হোক। সেই তথ্য অধিকার আইন আনা হয়েছে। কিন্তু আজ থেকে কয়েক বছর আগে তথ্য অধিকার আইন করার মধ্য দিয়ে আমরা ১৯২৩ সালের অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টটিকে এক রকম বাতিল করে দিয়েছিলাম। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারায় সেটিকে আবার সংযুক্ত করা হয়েছে। আমরা বলেছিলাম যে, সাংবাদিকদের, বিশেষ করে গণমাধ্যমকর্মীদের বেলায় এ আইনটি প্রয়োগের সময় জাতীয় প্রেস কাউন্সিলকে যেন সম্পৃক্ত করা হয়। আমরা মনে করি যে এই আইনটি এভাবে পাস হওয়ায় সাংবাদিকদের হতাশা বাড়বে, উদ্বেগ বাড়বে এবং সুস্থ সাংবাদিকতায় একটা আতঙ্ক বাড়বে। সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারাকে একটি কালো বিধান হিসেবে বর্ণনা করে সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান বলেছেন, বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারাকে আরও কঠিন করে ৩২ ধারা করা হয়েছে। এতে করে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় চলে যাবে যে কারও বাসায়। আর যখন এভাবে ফ্রি লাইসেন্স দিয়ে দেয়া হবে, যেখানে সেখানে তল্লাশি করতে পারবে পুলিশ। আর তা মানুষকে অস্থির করে দেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।