Inqilab Logo

শনিবার, ২২ জুন ২০২৪, ০৮ আষাঢ় ১৪৩১, ১৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রাবি শিক্ষক হত্যা মামলা ডিবিতে হস্তান্তর, শিবির নেতা আটক

শিক্ষক সমিতির ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রাবি রিপোর্টার : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী (৬১) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে নগরীর ছোটবোনগ্রাম এলাকার নিজ বাস থেকে তাকে আটক করা হয়। রোববার বিকেলে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জাহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, আটক হাফিজুর রহমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। সে রাজশাহী মহানগরের ১৯ নং ওয়ার্ডের শিবির সেক্রেটারি। বর্তমানে তাকে মহানগর ডিবি অফিসে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
এর আগে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিন একজন যুবককে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও তার পরিচয় জানাননি।
অন্যদিকে অধ্যাপক ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিন।

শিক্ষক সমিতির ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

শিক্ষক রেজাউল করিম হত্যার প্রতিবাদে রাবি শিক্ষক সমিতির ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে। রোববার ও সোমবার দুই দিনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের প্রথম দিন পালিত হয়। এর আগে শনিবার রাতে শিক্ষক সমিতির জরুরী মিটিংয়ে এই ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষক নেতারা।
এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে মৌন মিছিল ও মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। মৌন মিছিলটি সিনেট ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সিনেট ভবনের সামনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
সমিতির সভাপতি প্রফেসর শহীদুল্লাহের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহ্ আজম শান্তনুর সঞ্চালনা বক্তব্য রাখেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিন, সাবেক উপাচার্য প্রফেসর এম সাইদুর রহমান, উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি আনন্দ কুমার সাহা, ড. মাসউদ আখতার।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মিজানউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণে বার বার হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে। পিছনে ফিরে তাকালে আমরা একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি পাই। বিভিন্ন সময় শিক্ষকদের চিঠির মাধ্যমে হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে মিটিং করেছি। ঘটনার প্রকৃত তদন্ত করে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করার জন্য প্রশাসনকে বলা হয়েছে।’
উপাচার্য আরো উল্লেখ করেন, ‘একের পর এক শিক্ষক হত্যার মাধ্যমে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হচ্ছে, আমরা বাঁচতে চাই না। এই অশুভ কালের শক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর শহীদুল্লাহ বলেন, ‘এক এক করে শিক্ষকের প্রাণ যাবে, আর আমরা তা দেখেই যাবো তা হতে পারে না। অনতিবিলম্বে রেজাউল করিমসহ সকল শিক্ষকের হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান তিনি।’
শিক্ষক নেতা বলেন, ‘বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কর্মসূচির সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে। শুধু সংহতি নয়, কর্মসূচি প্রদান করুন। একইভাবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনকে কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানান।’

ইংরেজি বিভাগ কর্মসূচি : সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কালো ব্যাচ ধারণ করে ক্যাম্পাসে শোক মিছিল বের করেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ইংরেজি বিভাগের সামনে থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে সিনেট ভবনের সামনে এসে শিক্ষক সমিতির কর্মসূচির সাথে সংহতি প্রকাশ করে। পরে বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্যারিস রোডে অবস্থান করতে থাকে। এসময় তারা বিচারের দাবিতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড লেখে এবং নিহত শিক্ষককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে থাকে। প্রায় আধা ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ প্যারিস রোডে অবস্থান করে শিক্ষার্থীরা। বলা ১টার দিকে বিভাগের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচির ঘোষণা দেন সভাপতি ড. মাসউদ আখতার। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আগামী ২৬ তারিখ পর্যন্ত বিভাগের সকল ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, সপ্তাহব্যাপী সকাল ১০টায় সিনেট ভবনের সামনে মানববন্ধন। এছাড়া সোমবার বেলা ১১টায় নিহত শিক্ষকের স্মরণে শোক সভার আয়োজন করা হয়েছে।

প্রগতিশীল জোটের কর্মসূচি : প্রগতিশীল জোট বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেছ। এছাড়া বেলা ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সমানে কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিবাদী গান পরিবেশন করেন।
প্রসঙ্গত, শনিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে নগরীর শালবাগান এলাকায় নিজ বাসার সামনে থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগামারার দরগামারিড়ায়। সেখানে তার একটি গানের স্কুল আছে। তিনি কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
হত্যার ধরণ দেখে পুলিশ ধারণা করছে, জঙ্গি সংগঠন এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস এ হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে শনিবারই খবর দেয় জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণকারী এক ওয়েবসাইট। এ ঘটনায় শনিবার বিকেলে নিহত শিক্ষকের ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ