Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভুয়া সনদে ২০৮ কোটি টাকার কাজ

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৬ এএম

নির্মাণকাজ শেষ না করেই কাজের অভিজ্ঞতার সনদ দিয়ে সরকারি তিনটি প্রতিষ্ঠানের ২০৮ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ‘নূরানী কন্সট্রাকশন লিমিটেড’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, ঘুষের বিনিময়ে নির্মাণকাজের ‘ভুয়া সনদ’ নিয়ে দু’টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি অথরিটি কমিশনের ভবন নির্মাণকাজ বাগিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছে নূরানী কন্সট্রাকশন লিমিটেড। এতে সহযোগিতা করছেন গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ‘নূরানী কন্সট্রাকশন লিমিটেড’-এর মালিক। টাঙ্গাইলের গণপূর্ত অফিস থেকে দেয়া ‘নূরানী কন্সট্রাকশন লিমিটেড’-এর অভিজ্ঞতা সনদে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নির্মাণকাজ গত ৩১ জুলাই শতভাগ শেষ করেছে। গত ১ আগস্ট সুন্দরভাবে কাজ শেষের সনদপত্রটি দেয়া হয়েছে।
টাঙ্গাইল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শম্ভু রাম পাল বলেন, ‘নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। ভেরিয়েশনের কাজ বাকী আছে। আগামী জুন নাগাদ শেষ হবে।’ তিনি বলেন, ‘পেমেন্ট অনুযায়ী সার্টিফিকেট দিয়েছি। তবে কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়নি।’
গণপূর্ত বিভাগ ঢাকা সার্কেল-৩ অফিস সূত্রে জানা গেছে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি অথরিটি কমিশনের ১৫ তলা ভবন নির্মাণকাজের দরপত্র গত ১ আগস্ট আহবান করা হয়। ১৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজের গত ১২ সেপ্টেম্বর দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল। দরপত্রের শর্তানুযায়ী ঠিকাদারের ১০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। একই সঙ্গে অন্তত ৯৫ লাখ টাকার সম্পূর্ণ নির্মাণকাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
সূত্র জানায়, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ভার্টিক্যাল (১২ তলা থেকে ১৪ তলা) ভবন নির্মাণে ২৫ কোটি টাকার কাজের দরপত্র আহবান করে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত গণপূর্ত ভবন। গত ১৩ আগস্ট দরপত্র আহবান করে। গত ১২ সেপ্টেম্বর দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল। ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ভবনের ভার্টিক্যাল নির্মাণকাজের দরপত্র আহবান করা হয় গত ২৫ জুলাই। ২৯ আগস্ট ছিল দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। বর্তমানে তিনটি কাজের দরপত্র মূল্যায়নকাজ চলছে।
তিনটি কাজে অংশ নেয়া একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন, ‘নূরানী কন্সট্রাকশন লিমিটেড’ টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নির্মাণকাজ শেষ না করেই ভার্টিক্যাল ভবন নির্মাণের কাজের দরপত্রে অংশ নিয়েছে। দরপত্রের শর্তানুযায়ী, বিগত দিনে এ ধরনের ভবন নির্মাণের কাজের অভিজ্ঞতার সনদ দরপত্রের সাথে জমা দিতে হবে। কিন্তু ‘নূরানী কন্সট্রাকশন লিমিটেড’ টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভবন নির্মাণকাজ ধীরগতিতে চলছে। ভবনের পলেস্তারা পর্যন্ত দেয়া হয়নি। কিন্তু হাসপাতালের নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা টাঙ্গাইলের গণপূর্ত ইঞ্জিনিয়ার শম্ভু রাম পাল মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে কাজ শেষ করার অভিজ্ঞতা সনদ দিয়েছেন। সেই সনদ দিয়ে উল্লিখিত তিনটি কাজের দরপত্র জমা দিয়েছে ‘নূরানী কন্সট্রাকশন লিমিটেড’।
অভিযোগ রয়েছে, গণপূর্তের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তিন ভবনের ২০৮ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছে। অনভিজ্ঞ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ পেলে প্রধানমন্ত্রীর নামের প্রতিষ্ঠানসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভবনের নিম্নমানের নির্মাণকাজের আশঙ্কা রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ‘নূরানী কন্সট্রাকশন লিমিটেড’-এর মালিক কবির খন্দকার প্রথমে কথা বলতে চাইলেও পরিচয় পেয়ে কোন দরপত্রে তারা অংশ গ্রহণ করেননি বলে সেল ফোনটি রেখে দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ