Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চাপের মুখেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছি- প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার দাবি

বিবিসি | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৭ এএম

বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা একটি আত্মজীবনীম‚লক বই প্রকাশ করেছেন যেখানে তিনি দাবি করছেন তাকে সরকারের চাপ এবং হুমকির মুখে দেশত্যাগ করতে হয়েছে।

বিচারপতি সিনহার বই ‘এ ব্রোকেন ড্রিম : রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেমোক্রেসি’ মাত্রই প্রকাশিত হয়েছে এবং এটি এখন আমাজনে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। এই বইতে বিচারপতি সিনহা সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন কোন পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি হয়েছিল এবং কীভাবে তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয় এবং তারপর কেন তিনি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন।
তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের মুখে তিনি দেশে ছেড়েছেন। বিচারপতি সিনহা লিখেছেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়টি যেন সরকারের পক্ষ যায়, সেজন্যে তার ওপর ‘সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে চাপ তৈরি করা হয়েছিল।’
মি. সিনহার পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছিল ২০১৭ সালে সংবিধানের ১৬শ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত একটি মামলার আপীলের রায়কে কেন্দ্র করে। এ রায় নিয়ে ক্ষমুাসীন আওয়ামী লীগ এবং সরকারের কাছ থেকে প্রচন্ড চাপের মুখে বিচারপতি সিনহা দেশ ছেড়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে। এখানে বইটির মুখবন্ধের কিছু অংশের অনুবাদ দেয়া হলোঃ
‘বলা হতে লাগলো আমি অসুস্থ’
মি. সিনহা লিখেছেন, “প্রধানমন্ত্রী এবং তার দলের অন্যান্য সদস্য ও মন্ত্রীরা পার্লামেন্টের বিরুদ্ধে যাবার জন্য আমার কঠোর নিন্দা করেন। প্রধানমন্ত্রীসহ ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা আমার বিরুদ্ধে অসদাচরণ এবং দুর্নীতির অভিযোগ এনে বদনাম করতে শুরু করেন।”
“আমি যখন আমার সরকারি বাসভবনে আবদ্ধ, আইনজীবী এবং বিচারকদের আমার সাথে দেখা করতে দেয়া হচ্ছিল না, তখন সংবাদমাধ্যমকে বলা হয় - আমি অসুস্থ. আমি চিকিৎসার জন্য ছুটি চেয়েছি।”
“একাধিক মন্ত্রী বলেন, আমি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবো।”
“অক্টোবরের ১৪ তারিখ, যখন আমি দেশ ছাড়তে বাধ্য হই - তখন একটি প্রকাশ্য বিবৃতিতে আমি পরিস্থিতি স্পষ্ট করার চেষ্টায় একটি বিবৃতি দেই যে আমি অসুস্থ নই এবং আমি চিরকালের জন্য দেশ ছেড়ে যাচ্ছি না।”
“আমি আশা করছিলাম যে আমার প্রত্যক্ষ অনুপস্থিতি এবং আদালতের নিয়মিত ছুটি - এ দুটো মিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সহায়ক হবে, এবং শুভবুদ্ধির উদয় হবে, সরকার ওই রায়ের যে মর্মবস্তু - অর্থাৎ বিচারবিভাগের স্বাধীনতা যে জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর - তা বুঝতে পারবে।”
“শেষ পর্যন্ত দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা - যার নাম ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স - তাদের ভীতি প্রদর্শন এবং আমার পরিবারের প্রতি হুমকির সম্মুখীন হয়ে আমি বিদেশ থেকে আমার পদত্যাগপত্র জমা দেই।”
‘বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের দ্ব›দ্ব’
বিচারপতি সিনহা বলেন, তার এ বইতে তার ব্যক্তিগণ ও বিচার বিভাগে কর্মজীবনের কথা, বাংলাদেশের বিচার বিভাগের প্রতি চ্যালেঞ্জসম‚হ, বিচারবিভাগ ও রাজনীতিবিদদের ম‚ল্যবোধের অবক্ষয়, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, পুলিশের বাড়াবাড়ি, জরুরি অবস্থার প্রভাব, এবং “ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ডিজিএফআইয়ের অর্থ আদায়ের” বিবরণ আছে।
বিচারপতি সিনহার বই-এর একটি মুখবন্ধ রয়েছে - যাতে তিনি সংক্ষেপে “বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের দ্ব›দ্ব” বর্ণনা করেছেন এবং তার ভাষায় কী পরিস্থিতিতে তিনি প্রধান বিচারপতির পদ ত্যাগ করে বিদেশে গিয়েছিলেন তা লিখেছেন।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এ নিয়ে বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাতকারও দিয়েছেন। গত বছরের নানা নাটকীয় ঘটনাবলীর পর কোন গণমাধ্যমে এটিই ছিল তার প্রথম সাক্ষাৎকার।
‘আপনাকে বলা হলো বিদেশে যাবেন, কিন্তু যাচ্ছেন না’
তিনি সাক্ষাতকারে বলেন, “আমাকে যখন কমপ্লিটলি হাউজ অ্যারেস্ট করা হলো, ...তখন বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন একজন করে ডাক্তার আমার কাছে পাঠানো হতো। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না।”
“এর মধ্যে ডিজিএফআইয়ের চিফ এসে বললেন, হ্যাঁ আপনাকে বলা হলো আপনি বিদেশ যাবেন, আপনি যাচ্ছেন না।”
“আমি বললাম: কেন যাবো আমি বিদেশে?”
“আপনি চলে যান, আপনার টাকা পয়সার আমরা ব্যবস্থা করছি।”
“আমি বললাম, এটা হয় না, আমি আপনাদের টাকা নেবো না। আর আপনারা বললেই আমি ইয়ে করবো না। আমি চাই সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমি আলাপ করি। ব্যাপারটা কী হয়েছে আমি জানতে চাই। (তিনি) বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী আপনার সাথে কথা বলবেন না।”
বাংলাদেশের পার্লামেন্টে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের ইমপিচ করার ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পরিবর্তে পার্লামেন্টের সদস্যদের দেবার পর ২০১৬ সালের ৫ই মে হাইকোর্ট ডিভিশনের একটি বিশেষ বেঞ্চ ওই সংশোধনীকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেয়। সরকার এর বিরুদ্ধে আপীল করে, এবং সাত সদস্যের একটি বেঞ্চে আপীলের শুনানী হয়।
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার বইতে লেখেন, “জুলাইয়ের ৩ তারিখ প্রধানবিচারপতি হিসেবে তার সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ আপীল খারিজ করে হাইকোর্ট ডিভিশনের রায় বহাল রাখে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের ১ তারিখ সর্বসম্মত রায়ের প‚র্ণ বিবরণ প্রকাশিত হয়।”
সেখানে তিনি লেখেন, “ওই সিদ্ধান্তের পর সেপ্টেম্বরের ১৩ তারিখে পার্লামেন্ট একটি প্রস্তাব পাস করে - যাতে সেই রায়কে বাতিল করার জন্য আইনী পদক্ষেপের আহবান জানানো হয়।”



 

Show all comments
  • নিমাই চন্দ্র দেবনাথ ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:২৭ এএম says : 0
    শুধু বলতে চাই, মুখে মধু অন্তরে বিষ এর নাম politics.
    Total Reply(0) Reply
  • বুলবুল আহমেদ ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ২:২১ এএম says : 1
    কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি
    Total Reply(0) Reply
  • প্রিতম ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ২:২২ এএম says : 0
    প্রধান বিচারপতির যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে আমাদের মত সাধারণ মানুষের কি অবস্থা?
    Total Reply(0) Reply
  • Khairul Alam Liton ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:০৯ পিএম says : 0
    জনগণ এ বিষয়ে সম‍্যক অবগত
    Total Reply(0) Reply
  • Sumon Bhuiyan ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:১০ পিএম says : 0
    Whole nation knows about it.
    Total Reply(0) Reply
  • Habib Chowdhury ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:১১ পিএম says : 0
    কুশিলবরা হয়তো একদিন বিচারের আওতায় আসতে পারেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Saifur Rahman ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:১২ পিএম says : 0
    Hmmm jani
    Total Reply(0) Reply
  • তাহমিনা ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:১২ পিএম says : 0
    সত্য কখনও গোপন থাকে না।
    Total Reply(0) Reply
  • মো নাসির উদ্দিন ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৪:৩৪ পিএম says : 0
    যেই দেশে প্রধান বিচার পতি বিচার পায়না ,সেখানে আমরা সাধারন মানুষ বিচার পাওয়ার জন্য কোথায় যাব ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধান বিচারপতি

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ