Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বিএনপি নির্বাচনে গেলে সরকারের অস্তিত্ব থাকবে না

মতবিনিময় সভায় মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কোন অস্তিত্ব থাকবেনা বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকার বুঝতে পেরেছে বিএনপি নির্বাচনে গেলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না। এজন্য বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে তারা সব ধরণের ষড়যন্ত্র করছে।
বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় বন্দি করা হয়েছে, নেতাকর্মীদের নামে ভূতুড়ে মামলা দেয়া হচ্ছে, গণহারে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এতো কিছুর পরও সরকার আশান্বিত হতে পারছে না, তারা বিএনপি ও খালেদা জিয়ার ভয়ে সারাক্ষণ ভীত-সন্ত্রস্ত্র। গতকাল (বুধবার) বিকেল জাতীয় প্রেসক্লাবে ২০ দলীয় জোটের শরীক জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ আয়োজিত ‘আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ এর উপর বহুদলীয় মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির আহবান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের খুব পরিস্কার কথা খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরি করুন। যে নির্বাচনে আমার কথা বলার সুযোগ থাকবে না, ক্যাম্পেইন করার সুযোগ থাকবে না, ভোট দেয়ার সুযোগ থাকবে না, জনগণ ভোট দিতে পারবে না। সেই নির্বাচন কী নির্বাচন হবে? হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনে দাবিসমূহ পূনর্ব্যক্ত করে সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সকল রাজনৈতিক নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা রয়েছে তা প্রত্যাহার করুন, সংসদে ভেঙে দিন, সংসদ ভেঙে পদত্যাগ করুন। নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার তৈরি করুন। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করুন। আমরা বলেছি নির্বাচনে সময়ে অবশ্যই সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করতে হবে তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে। সকল দলকে সমান সুযোগ দিতে হবে। আর ইভিএম চলবে না। কেনো চলবে না? ইভিএমে ১ কে ১০, আর ১০ কে বানানো যায় ১০০।
তিনি বলেন, আমরা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন চাই। করতেও হবে তাই। এখন কোনো লেভেল প্ল্যায়িং ফিল্ড নাই, সব দলের সমান অধিকার নাই। ওরা ছাড়া আর কেউ নাই। নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে শুধুমাত্র তাদেরই কথা শুনবে, অন্য কারো কথা শুনবে না। নতুন করে বলা দরকার নেই, চারটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আমরা তা দেখেছি।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাড়ে ৪ চার হাজার গায়েবী মামলা দেয়া হয়েছে। তারা (সরকার) এখন ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত্র। এইভাবে কি ক্ষমতায় থাকা যায়? যখন কোন স্বৈরাচার সরকারের কনফিডেন্সের অভাব দেখা দেয় তখন তারা এমন নির্যাতনের পথ বেছে নেয়। ১৬ কোটি মানুষের উপর পাথর চাপিয়ে আর কয়দিন ক্ষমতায় থাকবেন? এত ভয় করেন কেন? ১০ বছরে বহু রক্তে রঞ্জিত হয়েছে আপনাদের হাত। তারা সুপরিকল্পতিভাবে দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই সরকারের একদিন বিচার হবে।
তিনি বলেন, কি দুর্ভাগ্য আমাদের যে নেত্রী স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নির্যাতিত হয়েছেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রধান নেত্রীকে অন্যায়ভাবে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। কত বড় দুঃশাসক ৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফ্যাসিস্ট সরকার কারাগারের ভিতর আদালত বসিয়ে তার বিচার করতে চাচ্ছে। এটা সংবিধান বিরোধী। তারা বেগম খালেদা জিয়াকে কেনো আটকিয়ে রেখেছে? কারণ বেগম জিয়া যদি বাইরে থাকেন, মুক্ত হয়ে আসে। জনগণকে যদি আহবান করে তাহলে হাজার হাজার লাখো কোটি জনতা এই তখতে তাওউসকে (ক্ষমতার মসনদ) ধোঁয়ায় উড়িয়ে দেবে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই ঘটনা যখন ঘটে তখন আমরা সাথে সাথে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। জোট সরকার সাথে ঘটনা তদন্ত করবার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই ও ইন্টারপোলকে নিয়ে এসেছিলো। তারা তদন্ত রিপোর্ট দিয়ে যেতে পারেননি। কেনো? প্রধান ভিকটিম দাবি করা হচ্ছে আজকের প্রধানমন্ত্রী ও তার দল সেদিন সহযোগিতা করেন নাই। যে গাড়িতে তিনি গিয়েছিলেন, বুলেটের ছোয়া লেগেছিলো তাদেরকে পরীক্ষার জন্য দেয়া হয়নি। এই মামলার তিনি (শেখ হাসিনা) ছিলেন দুই নাম্বার সাক্ষী, তিনি কোনো দিন আদালতে গিয়ে কোনো সাক্ষ্য দেননি। জানি এসব কথা মিডিয়াতে আসবে না। কিন্তু দ্যাট ইজ দ্যা ফ্যাক্ট, এটাই সত্য। তারেক রহমান সাহেবকে আসামী করেছেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের আসামী করেছেন। আজকে তিনজন পুলিশের আইজি তারা কারাগারে, সেনাবাহিনীর তিনজন অত্যন্ত উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা তারা কারাগারে- এই মামলায় তাদেরকে জড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, তারেক রহমান সাহেবকে কখন জড়ানো হলো? এই মামলার রজ্জু করার পরেই তদন্ত হয়েছে। পরপর তিনজন তদন্ত কর্মকর্তা বদলী হয়েছে। এরমধ্যে ফখরুল-মঈনুদ্দিনের শাসনকাল গেছে দুই বছর। তারাও কিন্তু তারেক সাহেবর নাম দেয়নি, আবদুস সালাম পিন্টুর নাম দেয়নি। এই নামগুলো পরবর্তিকালে আওয়ামী লীগের সরকার আসার পরে ঢুকানো হয়েছে। মুফতি হান্নানকে ২৪৩ দিন রিমান্ডে নিয়ে গিয়ে নিমর্মভাবে নির্যাতন করে তার কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করে এটা করা হয়েছে। রিমান্ডের পর প্রথম যখন আদালতে আসেন তিনি বলেছেন, আমাকে জোর করে এই স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। এটা সেকেন্ড স্টেটম্যান্ট। আইনের কথায় প্রথম ১৬৪ যথেষ্ট, সেখানে দ্বিতীয় ১৬৪ গ্রহণযোগ্য নয়। তারা দ্বিতীয় ১৬৪ গ্রহণ করে তারেক রহমানকে জড়ানো হয়েছে।
দানব সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যের বিকল্প নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যের ডাক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগেই দিয়ে গেছেন। তিনি পরিস্কার করে বলেছেন, এই দুঃশাসন, এই দুর্বিনীত ফ্যাসিবাদ আমাদের ওপর চেপে বসেছে একে সরাতে হলে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, একে সরাতে হলে সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ধর্মবর্ণ সকলকে এক হয়ে তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে ।
জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের চেয়ারম্যান নূর হোসেন কাসেমীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর সঞ্চালনায় মতবিনিয় সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টি (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাশলাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড.ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ডেমক্রেটিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দীন আহমদ মনি, জমিয়তে উলামায়ের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, ইসলামী ঐক্যজোট একাংশের সভাপতি এ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আব্দুল কাদের, মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজি আবুল খায়ের। #



 

Show all comments
  • Md.Ashrapullah moner ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৯:০৮ এএম says : 0
    হেঁ আমারও একে কথা বর্তমান সরকারকে শারাদেশের জনগন এক হয়ে আন্দলন করে গদি থেকে শরাতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১০:১০ পিএম says : 0
    বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখানে ২১ আগষ্ট নিয়ে কথা বলেছেন এবং বিভিন্ন ভাবে কায়দা করে মিথ্যা কথা বলেছেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ