পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চলতি বছর জনশক্তি রফতানিতে টার্গেট পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকার এবার ১২ লাখ কর্মী বিদেশে পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা দিয়েছিল । সউদী সরকার বিভিন্ন খাতে অভিবাসী শ্রমিক ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি এ নিয়ম কার্যকর করায় বাংলাদেশীদের জন্য সঙ্কুচিত হচ্ছে সউদীর শ্রমবাজার। শ্রমবাজার অনুসন্ধানে যথাযথ উদ্যোগের অভাবে কর্মী প্রেরণে আশানুরূপ গতি বাড়ছে না। কর্মী প্রেরণে গতি না বাড়লে রেমিট্যান্স খাতেও আঘাত আসতে পারে বায়রার সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব ১ আলহাজ মোঃ আবুল বাশার এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বেকারত্বের হার ১২ দশমিক ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে অভিবাসী জনবল হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সউদী সরকার। সউদীর শ্রম ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী তিন ভাগে সউদী আরবের ১২ ধরনের বেসরকারী খাতকে সউদীকরণ করা হচ্ছে। এতে জনশক্তি রফতানির বৃহৎ বাজার সউদী আরবে বাংলাদেশী কর্মীদের মাঝে দেশে ফেরার আঙ্কত বিরাজ করছে। অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ী সউদীর দোকান-পাট গুটিয়ে দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। সউদী থেকে একাধিক সূত্র এতথ্য জানিয়েছে।
রিয়াদে নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ গতকাল শনিবার বলেছেন, সউদীতে বিভিন্ন বেসরকারী খাতে সউদীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় সার্বিকভাবে বাংলাদেশীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ক্ষেত্রে কূটনৈতিক কোনো উদ্যোগ নিলেও কিছু হবে না বলে রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন। রাষ্ট্রদূত মসিহ বলেন, সউদী নাগরিকদের বেকারত্ব কমিয়ে আনতে রাজকীয় সউদী সরকার দেশটিতে কর্মরত সকল দেশের অভিবাসী কর্মী ছাঁটাইয়ের নীতিমালা গ্রহণ করেছে। এতে অনেক প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বেসরকারী খাতে সউদীকরণের বিষয়টি দেড় বছর আগে সউদী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন। গোলাম মসিহ বলেন, আমরা নতুন নতুন সেক্টরে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চেষ্টা করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , সউদী আরবে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কর্মী নিয়োগ কমতে শুরু করেছে। ২০১৬ সালে সউদীতে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯ শ ১৩ জন নারী-পুরুষ চাকুরি নিয়ে গেছে। ২০১৭ সালে ৫ লাখ ৫১ হাজার ৩ শ ৮ জন নারী-পুরুষ গেছে দেশটিতে। গত জানুয়ারী থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত দেশটিতে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩ শ ৭৯ জন নারী-পুরুষ চাকুরি নিয়ে গেছে। এর মধ্যে মহিলা গৃহকর্মীর সংখ্যাই ৪৯ হাজার ৬ শ ৪০ জন। সরকার নানামুখী উদ্যোগ নেয়ার পর ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। গত জানুয়ারী থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত সউদী আরব থেকে প্রবাসীরা ১ হাজার ৯ শ এক দশমিক ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছে। একই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রবাসীরা ১ হাজার ৭ শ ১৮ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছে।
সউদীর শ্রম ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রী আলী আল ঘাফিস সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিদেশি শ্রমিকের স্থলে সউদী নাগরিকদের নিয়োগের এই সিদ্ধান্ত মানা না হলে শ্রম আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। দেশটির শ্রম ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় বলছে, সউদী নাগরিকদের মধ্যে বেকারত্ব কমিয়ে আনতেই বিভিন্ন খাতকে সউদীকরণ করা হচ্ছে। ১২টি খাতে দেশটির নারী-পুরুষ ছাড়া অন্য কোনও দেশের নাগরিকরা এখন থেকে কাজ করতে পারবেন না। খাতগুলো হলো- মোটরযান এবং এর যন্ত্রাংশ খুচরা বা পাইকারি বিক্রয় কেন্দ্র, পাইকারি ও খুচরা পোশাক, কাপড়-জুতা-প্রসাধনী বিক্রয় কেন্দ্র, গৃহস্থালি-অফিসিয়াল, ফার্নিচার বিক্রয় কেন্দ্র, গৃহস্থালি তৈজসপত্র এবং হাঁড়ি-পাতিল বিক্রয় কেন্দ্র।
এ প্রসঙ্গে বায়রার নবনির্বাচিত মহাসচিব শামীম আহমেদ নোমান গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, সউদী সরকার দেশটির বেকারত্বের হার কমিয়ে আনতে বিদেশী কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আগে সউদী নারীরা গাড়ী চালানোর সুযোগ পেতো না। এখন তারা নিজেরাই গাড়ী চালাচ্ছে। এতে অনেক বাংলাদেশী ড্রাইভার চাকুরি হারাতে পারে। বায়রা মহাসচিব বলেন, আমাদের সউদীর শ্রমবাজার নিয়ে বসে থাকলে হবে না। নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলে নতুন নতুন দেশে কর্মী পাঠাতে হবে।
বিএমইটি’র সূত্র মতে, ২০১৭ সনে বিভিন্ন দেশে ১০ লাখ ৮ হাজার ৫ শ ২৫ জন কর্মী কর্মসংস্থান লাভ করেছিল। চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে গত আগষ্ট মাস পর্যন্ত ৫ লাখ ৬ শ ৯৪ জন কর্মী বিদেশে গেছে।
সিন্ডিকেটের কবলে মালয়েশিয়া
চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে আগষ্ট পর্যন্ত জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে চিহ্নিত দশ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শুধু মালয়েশিয়ায় গেছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৮ শ ১৯ জন। ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে দশ সিন্ডিকেট ২০১৭ সনের ৮ মার্চ থেকে গত ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ২ লাখ ১২ হাজার ৩ শ ২৪ জন কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এ সিন্ডিকেট মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু প্রত্যেক কর্মীর কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ব্যয়ের অতিরিক্ত গড়ে ৩ লাখ টাকা আদায় করেছে। মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের কাছ থেকে এ সিন্ডিকেটের অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। এর আগে গত ১৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত এক বিশেষ কমিটির বৈঠকে কর্মী নিয়োগের বিশেষায়িত পদ্ধতি এসপিপিএ (যা জিটুজি প্লাস নামে পরিচিত) থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ। মূলত জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সঙ্গে যুক্ত ছিল মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ে গড়া একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
এদিকে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী দশ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শোকজ করার ঘোষণা দিয়েছেন মাত্র। অভিযোগ উঠেছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় মালয়েশিয়ায় নতুন প্রক্রিয়ায় জনশক্তি রফতানির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে এখনো কোনো প্রচেষ্টা চালায়নি। এ প্রসঙ্গে বায়রার সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মোঃ আবুল বাশার জনশক্তি রফতানি নিন্মমুখী হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, একসময়ের সউদীর বৃহৎ শ্রমবাজার দিন দিন হাত ছাড়া হচ্ছে। তিনি বলেন, কর্মী প্রেরণের গতি বাড়াতে না পারলে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধাক্কা লাগতে পারে। তিনি অতিসম্প্রতি বন্ধ হওয়া মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার অবিলম্বে উন্মুক্তকরণে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অন্য দিকে, কূটনৈতিক তৎপরতায় পিছিয়ে পড়ায় র্দীঘ দিনের বন্ধ সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রমবাজারের দুয়ার খুলছে না। দেশটিতে স্বল্প সংখ্যক পুরুষ-মহিলা গৃহকর্মী যাচ্ছে। গত জানুয়ারী থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত দেশটিতে মাত্র ২ হাজার ১৬ জন কর্মী গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।