পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে ‘অস্থায়ী আদালত’ বসানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংবিধান প্রণেতা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। কারাগারের ভিতরে আদালতকে ‘সংবিধান পরিপন্থী’ অবিহিত করে তিনি বলেন, কোন কারণে কারাগারের ভিতরে এতো নাটক করা হচ্ছে? বেসামরিক সরকারের শাসনামলে তথাকথিত জেলখানায় আদালত কাঙ্খিত নয়। এটা হতে পারে না। সামরিক শাসকের সময়ে কারাগারে আদালত বসিয়ে কর্ণেল তাহেরের বিচার হয়েছে। দেশের মানুষ সেটা ভালো চোখে দেখেনি। গতকাল সুপ্রিম কোট আইনজীবী সমিতির আয়োজনে শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। দায়িত্ব পালনের সময় সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে দেশ ছেড়ে বিদেশ যেতে বাধ্য করা হয়েছে। যারা তাঁকে অপমান করছেন তারা অসভ্য। এই দেশে একদিন তাদের বিচার হবেই।
সিটি কর্পোরেশনে ‘নিয়ন্ত্রিত’ নির্বাচনের অভিজ্ঞতার চিত্র তুলে ধরেন এবং সংসদ বহাল রেখে জাতীয় নির্বাচনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ড. কামাল হোসেন বলেন, সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে নির্বাচনকালীন সরকারকে অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে। জনগণ যাতে ভোট দিতে পারে এবং যাকে ভোট দেবে তিনিই যেন ভোট পান সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়, সংবিধানের পক্ষে। সংবিধান রক্ষার দেশের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ দিয়েছেন রাজপথে আন্দোলনের। তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই সব দাবি আদায় করা হবে।
‘সাধারণ আদালত’ কারাগারে স্থানান্তরের কোনো কারণ থাকতে পারে না মন্তব্য করে ড. কামাল হোসেন বলেন, সাংবিধানিক শাসনামলে কারাগারে আদালত বসানো অমূলক। জেলখানায় আদালত এটা স্ববিরোধী কথা। জেলখানা জেলখানাই, আদালত আদালতই। জেলখানায় আদালত কেন হলো, কিভাবে হলো, কোন আইনে হলো? এনিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বেসামরিক শাসন সাধারণ কনস্টিটিউশনে যখন চলছে, তার মধ্যে তথাকথিত জেলখানায় আদালত গঠন করা হলো। এগুলো কেন করা হয়?
সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমার ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবন এবং সংবিধানের ৪৬ বছর পরে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি সংবিধানের আরও কিছু সংশোধনী করা দরকার। এর মধ্যে কিছু ঘাটতি আছে। সেগুলো কিভাবে পুনরুদ্ধার করা যায়; তা লিখিত আকারে আপনারা (আইনজীবী) দিন। এ নিয়ে একত্রিত করে একটি কমিটি করে যেগুলো বিবেচনাযোগ্য সেগুলো তুলে ধরা হোক। সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করাও যেতে পারে। সরকার গঠন করতে পারে আর সরকার না পারলে আমরা কমিশন গঠন করতে পারি।
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রয়োজনীতা তুলে ধরে এই প্রবীণ নেতা বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য ২০০৭ সালে ২৩টি শর্ত দিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। ওই শর্তগুলো এখনও প্রযোজ্য হতো এবং এনিয়ে শেখ হাসিনা আন্দোলন করতেন যদি তিনি বর্তমানে বিরোধী দলে থাকতেন। বিরোধী দলে থেকে যখন শর্তগুলো সমর্থন করেছিলেন আশা করি সরকারে থেকেও তিনি সমর্থন করবেন। ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশের ক্রান্তিলগ্নে আপনাকে পাওয়া যায় না, আপনি বিমানের টিকেট কেঁটে রাখেন, ক্রান্তিলগ্নে আপনি তখন দেশের বাইরে চলে যান’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে কামাল হোসেন বলেন, একটি ব্যাপারে ২০০৭-৮ এ আমরা যে মামলা করেছিলাম ১ কোটি ৪০ লক্ষ ভূয়া ভোট ওখান থেকে বাতিল করা হয়েছিলো। নির্বাচন কমিশন পূনর্গঠন করা হয়েছিলো। সর্বোপরি প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে যখন আমরা তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রধান উপদেষ্টা থেকে সরিয়ে দিলাম; তখন আমাদের চারজনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীতার অভিযোগে মামলা হলো। এরপর ২০১০ সালে সে মামলা থেকে আমরা মুক্ত হলাম। তখন তো আমরা দেশ ছেড়ে চলে যাইনি। সেদিন যদি ১ কোটি ৪০ লক্ষ ভোট বাতিল করা না হতো এবং ২০০৮ এর নির্বাচন হতো; তাহলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়ার ফলাফলও হতো না। ১/১১-এর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা প্রায়ই আমাকে ১/১১ সৃষ্টির কুশীলব বলে থাকেন। অথচ ১/১১ এর কারণে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে আওয়ামী লীগ। যেদিন ১/১১-এর প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়, সেদিন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে আমাকে ফোন করে বলা হয়েছিল, চলেন বঙ্গভবনের শপথ অনুষ্ঠানে যাই।
নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় জাতীয় ঐক্যে জামায়াতকে নেয়া হবে না জানিয়ে ড. কামাল বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যে সর্বদলীয় জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়া হয়েছে সেখানে দল হিসেবে জামায়াত থাকছে না।
‘জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির এখনো ঐক্য আছে। কিছুদিন আগে আপনি বলেছিলেন জামায়াত থাকলে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যে যাবেন না। আপনি সে অবস্থান থেকে সরে এসেছেন কিনা সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ড. কামাল বলেন, দল তারা করতেই পারেন। আমরা যখন স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছিলাম; তখন তারা (জামায়াত) অন্য চিন্তা করেছে। এটা নিয়ে তো বিরোধ নেই। দলগত ভাবে তারা স্বাধীনতা বিরোধী কাজ করেছেন। দল হিসেবে করেছেন তবে এটাতো বলা যায় না যে ব্যাক্তি হিসেবে করেছেন। জামায়াত নিয়ে আমি যতদূর জানি ওই দল থেকে মুক্তিযুদ্ধে পক্ষে কারা ছিলেন তা জানতে পারলে আমাদের কাজে লাগবে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভা সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করে সংগঠনের সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। এ সময় সুপ্রিম কোটের সিনিয়র আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।