Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে শিশুদের ব্যবহার

প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা : রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিশুদের ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে। ইদানিং নির্বাচনী প্রচারণাতেও শিশুদের ব্যবহার যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোটের দিনেও এ সংস্কৃতি থেকে নিস্তার মিলছে না।

কোমলমতি এসব শিশুকে চা-নাস্তা খাওয়ার টাকা দিয়ে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীরা। আজ শনিবার নান্দাইলের বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেলো।

আনিস, সিদ্দিক, কবির, জনি ও আশিক। বয়স ১০, ১১, ৯, ৮ ও ৭ বছর। থাকে মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর, বাহাদুরপুর, কালিয়াপাড়া ও কাদিরপুর গ্রামে। রাজনীতি ও ভোটের কঠিন মারপ্যাঁচ ওরা বুঝে না। তবুও ভোটের দিনে মাঠে নামিয়ে দেয়া হয়েছে ওদের। বিনিময়ে তারা পাবে নগদ টাকা । জুটবে দুপুরের খাবার।

ভোটকেন্দ্রে আসা শিশুদের অনেকেই বিদ্যালয়ের গন্ডিতে পা রাখেনি। কেউ কেউ আবার বিদ্যালয়ে গেলেও পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে বাধ্য হয়েই নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়ে। এর মধ্যে জনি ঢাকায় এক বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে। তাদের প্রত্যেকের বুকে পছন্দের প্রার্থীর ব্যাজ ঝুলছে।

এসব শিশু সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রে এসেছে। ভোটকেন্দ্রের সামনে ভোটারদের সিরিয়াল নাম্বার দেয়া কিংবা ভোটারদের কাছে গিয়ে কৌশলে ভোট প্রার্থনা করছে।

স্থানীয় তসরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রের সামনে গিয়ে দেখা গেলো বেশ কিছু সামিয়ানার নিচে ভোটারদের সিরিয়াল নাম্বার দেয়ার কাজ করছে জাহিদুল, নঈম ও আবু রায়হান। তাদের বুক পকেটেও চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য প্রার্থীর ব্যাজ।

জাহিদুল ও নাঈম জানায়, ভোটের আগে তারা প্রতিদিন মিছিল-মিটিং করে গড়ে এক থেকে দেড়শ’ টাকা করে কামিয়েছে। আর ভোটের দিন প্রার্থীরাও একই রকম টাকা দেবে। সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার পাবে।

জাহিদুল ও নাঈমরা অকপটে টাকার বিনিময়ে তাদের ব্যবহারের কথা বললেও স্থানীয় দত্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রের সামনে অবস্থান করা রাজিব ও সাব্বির অস্বীকার করন। তাদের বুকে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোর্শেদ আলী’র ব্যাজ।

আলাপচারিতায় স্পষ্টই বুঝা গেলো, এ বিষয়টি গোপন রাখতে প্রার্থীরা তাদের শিখিয়ে দিয়েছেন। তোমার কাছে নির্বাচনের অর্থ কী? জিজ্ঞাসা করতেই রাজিব নিচুস্বরে বলে, ‘নির্বাচন মানেই তো হারজিত। তবে আমরা প্রার্থীদের কাছ থেকে কিছুই পাই নাই।’

২০১৩ সালের শিশু আইনে শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলেও ইউপি নির্বাচনের প্রচারণা থেকে শুরু করে ভোটের দিন পর্যন্ত কোন প্রার্থীই এ নির্দেশনা মানছে না।

ভোটের দিনে যদি কোন সহিংসতার ঘটনা ঘটে তবে এসব শিশুর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। অথচ প্রার্থীরা রাখঢাক না করেই নিজেদের স্বার্থে এসব অবুঝ শিশুকে ব্যবহার করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ