পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মেয়াদকালের শেষ প্রান্তে এসে মাদরাসার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ৫ হাজার ৯১৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরে একটি বড় প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় নির্বাচিত ১ হাজার ৬৮১ আলিয়া মাদরাসার একাডেমিক ভবন নির্মাণ, ৬ লাখ ১২ হাজার আসবাব সংগ্রহ, ৬ হাজার ৭১৪ জনের প্রশিক্ষণ ও সোলার প্যানেল স্থাপন ও সেমিনার কক্ষ নির্মাণ ও শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক টয়লেট নির্মাণের কাজ করা হবে। বাড়ানো হবে পানি ও বিদ্যুতের সুবিধা। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় র্অথনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘নির্বাচিত মাদরাসাগুলোর উন্নয়ন’ শিরোনামে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।
রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এ সব তথ্য জানান। মন্ত্রী এ সময় বলেন, গতকাল একনেকে মোট ১৮ টি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এ সব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৭ হাজার ৭৮৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। প্রকল্প ব্যয়ের ১৩ হাজার ৮১৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বহন করা হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৪২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ৩ হাজার ৯৩০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা আহম মুস্তফা কামাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মাদরাসার উন্নতি না হওয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্যরা এ বিষয়ে বেসরকারি চাহিদাপত্র (ডিও) দিয়েছেন। তাদের চাহিদার ভিত্তিতে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। এর আওতায় প্রতিজন সংসদ সদস্য ছয়টি মাদরাসা নির্বাচন করতে পারবেন। প্রতি এমপির জন্য বরাদ্দ থাকবে ২০ কোটি টাকা। এর বাইরে ফলাফল ও সার্বিক দক্ষতা দেখে আরও ২০০ মাদরাসার উন্নয়নে কাজ করা হবে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা প্রত্যেক এমপির কাছ থেকে তাঁর আসনের ছয়টি মাদরাসার তালিকা চেয়েছি। তারা সেভাবে আমাদের তালিকা দিয়েছে। সে আলোকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্বাচিত মাদরাসাগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন করবে। আসছে জাতীয় নির্বাচনে এই প্রকল্পটি প্রভাব বিস্তার করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এতে নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না। বিদ্যমান যারা এমপি আছেন, আমরা তাদের কাছে মাদরাসার তালিকা চেয়েছি। তারা তাদের পছন্দমতো তালিকা দিয়েছে। মন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটির কাজ দ্রুত শুরু হবে। যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ দেওয়া আছে প্রকল্পটিতে। দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হবে। মন্ত্রী বলেন, বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে মাদরাসাগুলো নির্মাণ করা হবে। কোথাও চারতলা বিশিষ্ট আবার কোথাও ছয় তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হবে। তবে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যদের এ উন্নয়নকাজের বাইরে রাখা হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। এর পুরোটাই সরকারের অর্থায়ন থেকে দেয়া হবে। প্রকল্পটি ২০২১ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ডিও লেটারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সংশ্লিষ্ট এলাকার মাদরাসার দৈন্যদশা ও জরাজীর্ণতা উল্লেখ করে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যমান মাদরাসায় নতুন ভবন নির্মাণের আবেদন করেন। এর ভিত্তিতেই ১ হাজার ৬৮১ টি মাদরাসা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সূত্র জানায়, আইসিটিসহ সব ধরনের আধুনিক শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হবে এসব নতুন ভবনে। কম্পিউটার ল্যাবও থাকবে এসব মাদরাসা ভবনে। প্রতিটা ভবন হবে পাঁচতলা, নীচতলা ফাঁকা থাকবে। তারপরও শিক্ষার্থীদের চাহিদার ওপর নির্ভর করবে ভবনের আকার-আয়তন।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ব্যানবেইসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৯ হাজার ৩১১টি দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল মাদরাসা রয়েছে। তার মধ্যে ৩টি সরকারি এবং বাকি ৯ হাজার ৩০৮টি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন-ভাতা সহায়তা এমপিও এর মাধ্যমে সরকারি ভাবে প্রদান করা হয়।
বেশিরভাগ বেসরকারি মাদরাসাই অবকাঠামো ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সে লক্ষ্যেই বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এরইধ্যে ৪ হাজার ৫৫৯টি মাদরাসায় ২/৩টি শ্রেণিকক্ষ সংবলিত একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৪ হাজার ৭৫২টি মাদরাসায় এখন পর্যন্ত কোনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি।
অধিকন্তু এখন পর্যন্ত ৯৭৮টি মাদরাসার অবকাঠামো সম্পূর্ণ কাঁচা প্রকৃতির এবং মাত্র ২১৪৭টি মাদরাসায় সম্পূর্ণ পাকা ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে।
ব্যানবেইসের তথ্য মতে, বেশিরভাব মাদরাসায় অবকাঠামোগত উন্নত সুবিধা এখনো গড়ে ওঠেনি। ফলে অবকাঠামোগত সুবিধা বঞ্চিত ওই সব মাদরাসায় অনুন্নত পরিবেশে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত বিধায় পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে ওই মাদ্রাসাগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাকা অবকাঠামো তৈরি সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে এসডিজি-৪ বাস্তবায়নে ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সারাদেশে নির্বাচিত ১ হাজার ৬৮১টি মাদরাসার অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।