পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশিষ্ট নাগরিকদের উদ্বেগ ও ক্ষোভ
সড়কে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যকারীদের উস্কে দেবে
‘বাদী চেনেন না আসামীকে, অথচ আসামী কারাগারে’। কথাটি শুনলে কোন ‘সিনেমা বা নাটকের গল্প-কাহিনী’ বলে মনে হতে পারে। যদিও সিনেমাতে এতটা অবাস্তব দৃশ্যের অবতারণা কম দেখা যায়। তবে বাস্তবেই এমন ঘটনা ঘটেছে ক্ষোদ রাজধানী ঢাকায়। নিরাপদ সড়ক ও যাত্রীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার একজন নিরাপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ‘চাঁদাবাজির’ অভিযোগ এনে একটি মিথ্যা ভুতুরে মামলা নথিভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে মিরপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। জনগণের বন্ধু হিসেবে স্বীকৃত পুলিশের এমন আচরণে চাঞ্চল্য ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে দেশবাসী ও বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে। ক্ষোদ পুলিশ বাহিনীর মধ্যেও তৈরি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, পুলিশের দ্বারা এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলে জনমনে বাহিনীটি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। বিষয়টির সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা।
প্রসঙ্গত, গত ৪ সেপ্টেম্বর মিরপুর মডেল থানায় দুলাল নামে এক পরিবহন শ্রমিকের দায়ের করা একটি চাঁদাবাজির মামলায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরেরদিন ‘বাদী আসামিকে চেনেনই না, অথচ আসামি কারাগারে’ এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে ঘটনাটি নিয়ে সবমহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
বিষয়টি নিয়ে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার গতকাল ইনকিলাবকে বলেন,‘পুলিশের এমন মিথ্যা মামলা গ্রহন এবং কোন রকম যাচাই বাছাই ছাড়া মোজাম্মেলকে আটক করে রিমান্ডে নেওয়ায় পুলিশের ভ’মিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ আসলে সাধারণ মানুষের পক্ষে না সড়কে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের পক্ষে? তিনি মনে করেন, মিরপুর থানা পুলিশ জেনেই মিথ্যা মামলাটি গ্রহন করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতাকে গ্রেফতার করেছে।’ বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্তে তিনি পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের আহবান জানান।
মোজাম্মেল হকের গ্রেফতারে উদ্বেগ জানিয়েছে সেফ রোডস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অ্যালায়েন্স (স্রোতা)। গত শনিবার সংগঠনটি এক বিবৃতিতে মোজাম্মেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়। স্রোতার সমন্বয়ক সাদরুল হাসান মজুমদার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মোজাম্মেল হককে বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলের জন্য বিতর্কিত মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। কারণ তিনি নিরাপদ সড়ক ও যাত্রীদের কল্যাণে আন্দোলন করে আসছেন।’
স্রোতার আহ্বায়ক ড. হোসাইন জিল্লুর রহমান গতকাল ইনকিলাবকে জানান, ‘মোজাম্মেল হক চৌধুরীর গ্রেফতার আমাদের দ্বিধান্বিত করছে, হতোদ্যম করেছে। তিনি নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠায় জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করে আসছেন।’ তিনি মোজাম্মেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন পাশাপাশি সড়ক নিরাপদ করণে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।
কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘তদন্ত না করেই গ্রেফতার সঠিক হয়নি। সন্ধ্যায় অভিযোগ, আর রাতেই গ্রেফতার করায় মামলাটি স্বাভাবিক গতিতে চলেনি বলে মনে হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার অনেক ভালো কাজ করছে। অথচ অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ সদস্যের কারণে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কফিল উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ‘অভিযোগ এলেই আসামিকে গ্রেফতার করতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। তিনি আরও বলেন, বাদী যদি আসামিকে না চেনেন তারপর মামলারতো গুরুত্বই থাকে না। এর পরেও রিমান্ড চাওয়ায় বোঝা যায় বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত।’
ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতারা জানান, তাকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে মুখ বন্ধ করতে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা করিয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা। কয়েকজন নেতা মনে করেন, ‘মোজাম্মেল হককে গ্রেফতার করানোয় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন নেতাকর্মী ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের হাত রয়েছে। তারা একচোটিয়া অপরাধ করে পার পাওয়ার জন্য মোজাম্মেল হককে পথের বাধা মনে করে।’
গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে কয়েকজন নেতা বলেন, গত ১০ জুলাই জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘একটা ভুয়া জনকল্যাণ সমিতি বাংলাদেশে আছে, যাদের কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। সা¤প্রদায়িক রাজনীতি করে এ রকম একটি লোক ওই সংগঠনের নেতৃত্ব দেয়। সময়ে সময়ে তাকে মতলবি মহল আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়। আমি দেখি, সমাজের অনেক বিশিষ্টজনও এই লোকটির সংবাদ সম্মেলনে এসে হাজির হয়।’ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব থেকে এমন বক্তব্য আসায় স্বার্থন্বেষী মহল মিথ্যা মামলা করতে সুযোগ পেয়েছে বলে তারা মনে করছেন। এছাড়া গত রোজার ঈদের পর যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংগঠনটির বিরুদ্ধে ‘মনগড়া তথ্য’ প্রকাশের অভিযোগ আনেন এবং সমিতির মহাসচিবের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এদিকে, মোজাম্মেল হকের মুক্তিসহ বিষয়টি নিয়ে আজ বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
গণসংহতি আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগর আহ্বায়ক হাসান মারুফ রুমি বলেন, ‘মোজাম্মেলের গ্রেফতারের বিষয়টি আমাকে অবাক করেছে। এর মধ্য দিয়ে সড়কে যে বিশৃঙ্খলা-নৈরাজ্য চলছে তা উস্কে দেয়া হয়েছে। এমন ঘটনায় বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে অবস্থানকারীরা প্রতিবাদের সাহস হারাবেন।’
রোড সোসাইটি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া আদালতে জানান, মোজাম্মেল হক নিরাপদ সড়ক ও যাত্রীদের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি গবেষণা করেন না, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার হিসাব দেখে সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরেন মাত্র।’
বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমিপর কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ‘মুষ্ঠিময় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির জন্য বাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন করা কখনো কাম্য নয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির নিশ্চিত করতে হবে।’
মামলার বাদী হিসেবে এজহারে উল্লেখ থাকা পরিবহন শ্রমিক দুলাল গণমাধ্যমকে জানান, তিনি আসামিকে (মোজাম্মেল হক চৌধুরী) চেনেনই না। মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের মিরপুর শাখার সভাপতি আবদুর রহিম ও সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন টাইপ করা একটি সাদা কাগজে নতুন একটি প্রতিষ্ঠান বানানোর কথা বলে তার স্বাক্ষর নেন।
এ বিষয়ে মোজাম্মেল হকের স্ত্রী রিজু আক্তার, ছেলে জিয়াউল হক চৌধুরী ও অন্যান্য স্বজনরা জানান, ‘যাত্রীদের কল্যাণে সভা-সেমিনারে বিভিন্ন কথা বলার কারণে ওপর মহল মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করিয়েছে। তাঁর কাছে কেউ ১০ টাকাও পাবে না।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।